Friday 26th of April 2024
Home / মৎস্য / মাছ চাষে তেলাকুচা পাতার ব্যবহার

মাছ চাষে তেলাকুচা পাতার ব্যবহার

Published at মার্চ ৭, ২০২১

সালাহউদ্দিন সরকার তপন: বরাবরের মত আমার একটা কথা মনে করিয়ে দিয়ে আজকের মূল আলোচনা শুরু করবো, কথাটা হচ্ছে চাষী ভাইদের মনে রাখতে হবে যে, ভেষজ পণ্যের ব্যবহারের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মাছ চাষের খরচ কমানোর চমৎকার সব রহস্য, মাছের রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের গুণাগুণ রয়েছে; এমনকি মাছের রোগ নিরাময়ে ভেষজ-এর সঠিক ব্যবহারে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এবং খরচ কমায়। আজকাল আমরা এতটাই অলস হয়ে যাচ্ছিযে, আমাদের মাছের খামারের চারদিকে পড়ে থাকা জায়গাগুলো কাজে লাগাতে পারছিনা, সেই জায়গাগুলোতে চাইলেই ভেষজ পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার করতে পারি। আমাদের অধিক জনসংখ্যার দেশে এই জায়গাগুলো ফেলে রাখার কোন মানেই হয়না,  আজ আপনাদের উদ্দেশ্যে আলোচনা করব মাছ চাষে তেলাকুচা পাতার ব্যবহার নিয়ে-

তেলাকুচা এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ, এর বোটানিক্যাল নাম Coccinia grandis বা Coccinia Cordifolia Cogn। এটি Cucurbitaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ভেষজ নাম: Coccinia। প্রচলিত নাম- তেলাকুচা, তেলাকুচো, কুন্দ্রি শাক। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে বা বিভিন্ন দিকে অঞ্চল বিশেষে একে কুচিলা, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাচোরা, কেলাকচু, কেলাকুচ, তেলাকুচা বিম্বী, কুইচ্চ্যাগেলেক ও কুইচ্যাগাস ইত্যাদি নামে ডাকা হয়, নেপালে বলা হয় গোল কানক্রি। এর ইংরেজি নাম ‘scarlet gourd’, ‘ivy gourd’, baby watermelonlittle gourd বা gentleman’s toes। এটি ক্রান্তীয় অঞ্চলের লতাগাছ, এর অন্যান্য বৈজ্ঞানিক নামগুলো হলো Cephalandra indica এবং Coccinia indica।।

আমরা সচরাচর প্রকৃতি থেকেই তেলাকুচা সংগ্রহ করে ব্যবহার করে থাকি, অনেক অঞ্চলে এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, গাছটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা, লতা, মূল ও ফল ব্যবহৃত হয়।  তবে এর পুষ্টিগুন বিবেচনা করে আজকাল তেলাকুচা চাষ করাও হচ্ছে।

গ্রামবাংলার বসতবাড়ির চারপাশে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়, তাছাড়াও রাস্তার পাশে, বন-জঙ্গলে জন্মায় এবং বংশবিস্তার করে। সাধারণত বাংলা চৈত্র-বৈশাখ মাসে তেলাকুচা রোপন করতে হয়, পুরাতন মূল শুকিয়ে যায় না বলে গ্রীস্মকালে মৌসুমী বৃষ্টি হলে নতুন করে পাতা গজায় এবং কয়েক বছর ধরে পুরানো মূল থেকে গাছ হয়ে থাকে। শীতকাল ছাড়া সব মৌসুমেই তেলাকুচার ফুল ও ফল হয়ে থাকে। ফল ধরার ৪ মাস পর পাকে এবং পাকলে টকটকে লাল হয়।

তেলাকুচার পুষ্টিগুণ

তেলাকুচা ভিটামিন মিনারেল সমৃদ্ধ তেলাকুচা  স্বাদের পাশাপাশি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। একশো গ্রাম তেলাকুচায় প্রোটিন- ১.২ গ্রাম, আয়রন- ১.৪ মিলি গ্রাম , ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লোবিন)-  ০.০৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)- ০.০৭ মিলিগ্রাম, আঁশ- ১.৬ গ্রাম, ক্যালশিয়াম থাকে ৪০ মিলি গ্রাম,  ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ, তাছাড়া এতে প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন আছে। তেলাকুচার ফলে আছে ‘মাস্ট সেল স্টেবিলাইজিং’, ‘এনাফাইলেকটিক-রোধী’ এবং ‘এন্টিহিস্টামিন’ জাতীয় উপাদান।

মাছ চাষে তেলাকুচার ব্যবহার

  • তেলাকুচা পাতার রস মাছের খাদ্যের সাথে খাওয়ালে মাছের খাবারের রুচি বাড়ে, হজমি শক্তি বাড়ায় এবং পেটের গোলমাল কমে। তেলাকুচায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ থায়ামিন থাকার কারনে এটি পরিপাক সহায়ক। থায়ামিন কার্বহাইড্রেটকে গ্লুকোজে পরিণত করতে সাহায্য করে।
  • যে সমস্ত মাছের খাবারে অসুবিধা হচ্ছে এবং নুডলস-এর মত লম্বা পায়খানা হচ্ছে, বিশেষকরে তেলাপিয়া মাছের এই সমস্যাটা প্রায়ই লেগে থাকে, এই সমস্যায় আক্রান্ত মাছের খাবারের সাথে তেলাকুচা পাতা ও পেঁপে পাতা সামান্য পানি দিয়ে বেঁটে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ৫-৬ এম এল রস ভালভাবে মিশিয়ে পরপর ৭ দিন খাওয়ালে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে ইন্সাআল্লাহ, তারপরেই আপনার ফিডের উপকরন পরিবর্তন আবশ্যক বা পুকুরের পরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে, কারন এই দুই কারনের যেকোন একটিতে ত্রুটি থাকলেই সাধারনত এই সমস্যা হয়ে থাকে ।
  • সামান্য পানি সমেত তেলাকুচা বেঁটে এর রস প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ৫-৬ এম এল পরিমাণ মিশিয়ে মাছকে খাওয়ালে খাদ্য হজমি শক্তি বাড়ায়,
  • মাছের ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে ভূমিকা রাখে।
  • তেলাকুচা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে এবং শারীরিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করে । আপনি চাইলে মাছ ,মুরগি , টারকি ও অনেক গবাদিপশুর খাদ্যের সাথে খাওয়াতে পারেন।
  • তেলাকুচায় পরিপাকক্রিয়া সহজ হয়, পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে, তাই মাঝে মাঝে আপনার মাছকে তেলাকুচা পাতার রস খাবারের সাথে খাওয়াতে পারেন।

সবশেষে অনুরোধ করব, আশে পাশে অযত্নে পড়ে থাকা তেলাকুচা ফেলে নাদিয়ে মাছের খাবারের সাথে খাওয়াতে পারি যা থেকে আমরা উপকৃত হতে পারি।

লেখক: ম্যানেজিং পার্টনার, বারনি বায়োটেক ফিস কালচার ও সরকার এগ্রো ফিসারিজ। ই – মেইলঃ akmsus@gmail.com

This post has already been read 5063 times!