Saturday 27th of April 2024
Home / সাক্ষাৎকার / বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পকে আমরা স্পেশাল কিছু দিতে এসেছি -মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন)

বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পকে আমরা স্পেশাল কিছু দিতে এসেছি -মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন)

Published at সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩

মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন), ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ।

মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন); বাংলাদেশের প্রাণিজ খাতের প্রয়োজনীয় ফিড যোগান শিল্পের অন্যতম একজন তরুন, উদীয়মান ও বিচক্ষণ ব্যাক্তিত্ব;  পাশাপাশি একজন শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবী, রাজনৈতিক কর্মী। সম্প্রতি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ফিড শিল্পে চোখে পড়ার মতো সাফল্য ও সুনাম অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান “আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ” এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন)।

কীভাবে তাঁরা দ্রুত এই সাফল্য অর্জন করলেন, দেশের পোলট্রি শিল্পের বর্তমান বর্তমান পরিস্থিতি, সমস্যা ও উত্তরণ, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এগ্রিনিউজ২৪.কম সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী মো. খোরশেদ আলম (জুয়েল) -এর সাথে; ক্যামেরায় ছিলেন মো. সাদলীল রশিদ (পবন)। আসুন তাহলে সাক্ষাৎকারটি পড়ি এবং জানি……

এগ্রিনিউজ২৪.কম: আস্থা ফিড সম্পর্কে জানতে চাই?

মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন): বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদখাতের উন্নতির জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে মানসম্মত পশুখাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার লক্ষে ২০২০ সনের মাঝামাঝি সময়ে আস্থা ফিডের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

আস্থা ফিড মূলত: ইব্রাটাস ট্রেডিং কোম্পানির একটি সহযোগী অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। আপনি জানেন, ইব্রাটাস ট্রেডিং কোম্পানি দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ দেশ-বিদেশে সুনামের সাথে প্রাণিজ আমিষের ব্যবসা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্পের হাতকে অধিকতর শক্তিশালী করতেই আস্থা ফিডের যাত্রা।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: আপনাদের বর্তমান অবস্থা এবং মার্কেটের পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলুন?

মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন): আপনি জানেন গত বৎসর অর্থাৎ ২০২০ সালের জুলাই মাসে আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শুরু থেকেই আমরা দেশি বিদেশী সেরা পোল্ট্রি পেশাজীবীর মাধ্যমে উৎকৃষ্টমানের কাঁচামাল দিয়ে গুনগত মানসম্মত পোল্ট্রি ফিড বাজারজাত করে আসছি, যার ফলে স্বল্প সময়েই আস্থা ফিড খামারিদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে আমি মনে করি।

শুধু তাই নয়, এই স্বল্প সময়েই আস্থা ফিড -এর প্রতি খামারি ভাইদের আস্থা, বিশ্বাস এবং ভালোবাসার কারণেই চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আমরা ফিড বিক্রি ১৮ হাজার মেট্রিক টনের মাইলফলক অতিক্রম করতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা বিশ্বাস করি যে আস্থা ফিড এর প্রতি খামারি ভাইদের এই ভালোবাসা এবং বিশ্বাস অটুট থাকলে আমরা খুব শীঘ্রই আমাদের লক্ষে পৌছাতে পারবো, ইনশাল্লাহ।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: একজন খামারি কি কারণে আস্থা ফিড -এর ওপর আস্থা রাখছেন বা রাখবেন বলে আপনি মনে করেন?

মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন): ধন্যবাদ আপনাকে, অত্যন্ত সুন্দর একটি প্রশ্ন করার জন্য। প্রথমে আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, একজন খামারি একটি ফিড মিল এর কাছে কি চায়? নিশ্চয় গুনগত মানসম্পন্ন একটি ফিড এবং সার্ভিস। উল্লেখিত গুণ দুটি আমাদের রয়েছে -এটি আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি। ইতিমধ্যে আমরা প্রমান করতে পেরেছি যে, আস্থা ফিড-ই বাংলাদেশের সেরা ফিড এবং এই ধারাবাহিকতা আমরা অব্যাহত রাখবো, ইনশাল্লাহ। শুধু তাই নয়, খামারি এবং ডিলার ভাইদের সার্বিক সহযোগিতা এবং কারিগরি বা টেকনিকাল সার্ভিস -এর জন্য আমাদের একঝাঁক তরুণ, মেধাবী, কর্মঠ এবং অভিজ্ঞ কর্মীবাহিনী সর্বক্ষণই সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। কাজেই আমার বিশ্বাস, খামারি ভাইয়েরা এজন্য আস্থা ফিড -এর ওপর আস্থা রাখছেন, রাখবেন এবং তারা ব্যাবসায়ীকভাবে সফল হবেন -ইনশাল্লাহ।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: আস্থা ফিড কি গতানুগতিক ব্যবসা করেই যাবে, নাকি খামারিবান্ধব ভিন্ন ধারার কিছু করবে?

মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন): দেখুন আস্থা ফিড হয়তো নতুন, কিন্তু আস্থা ফিডের ম্যানেজমেন্ট বোর্ড কিন্তু নতুন না। আমি আগেই বলেছি যে, দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ আমরা এই পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত। কমবেশি ব্যবসাও করেছি আলহামদুলিল্লাহ। তবে, আস্থা ফিড বাজারে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য শুধু ব্যবসা করা নয়, এই আস্থা ফিড -এর মাধ্যমেই এমন কিছু করতে চাই যাতে উন্নতি হবে এদেশের খামারি ভাইদের এবং উন্নতি হবে ডিলার ভাইদের, বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের এবং উন্নতি হবে এদেশের ১৭ কোটি মানুষের। আর এজন্যই আমরা আমাদের স্লোগানটিই করেছি যে- “আস্থায় তৃপ্তি, আস্থায় বৃদ্ধি”

এগ্রিনিউজ২৪.কম: সম্প্রতি ফিডের দাম বেড়ে যাওয়াতে খামারিরা সমস্যায় আছেন, অনেকেই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব, কেউ কেউ হতাশায় পোলট্রি ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন -এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কি বলে আপনি মনে করেন ?

মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন): বর্তমানে কোভিড-১৯ পেনডেমিক পরিস্থিতিতে যে সকল শিল্পখাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারমধ্যে অন্যতম হলো- পোল্ট্রি শিল্প। এই ক্ষতির কবলে পরে পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার উপর প্রভাব পড়ায়, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টিও বর্তমানে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আসার বাণী হলো এই যে, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ২০২৫ সাল নাগাদ এই শিল্পের রপ্তানির লক্ষমাত্রা টার্গেট করছে। আমিও মনে করি পোল্ট্রির উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ব্যাপক অসঙ্গতিই এই শিল্পের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়।

পৌলটি ফিডে ব্যবহৃত বেশিরভাগ কাঁচামাল এবং প্রায় সকল ফিড-এডিটিভস আমদানি নির্ভর। করোনা মহামারীর প্রভাবে এই সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকভাবে। এসবের দাম বৃদ্ধির কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে ফিডের দাম; ফলে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়েছে অনেক। সেই তুলনায় গত কয়েক বছরে খামারি পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম তেমন বাড়েনি। দ্রুত সম্প্রসারণশীল উদয়মান এই পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদন ও চাহিদার বিশাল এই গ্যাপ দূরীকরণে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি আমরাও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশাকরি খুব শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হবে, ইনশাল্লাহ।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: আপনাদের ফিডের এফসিআর (FCR) কত এবং এটি কমাতে গিয়ে কোন প্রকার ক্ষতিকর গ্রোথ প্রমোটার বা এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারের উপস্থিতি আছে কিনা?

মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন): বর্তমানে আমাদের ফিডের FCR ১.৩ থেকে ১.৪ এর মধ্যে আছে। ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের তো প্রশ্নই আসেনা, এন্টিবায়োটিকের  ব্যবহার শুধু আমরা কেন, আমারতো মনে হয় বাংলাদেশের কোনো ফিড মিলার এর ব্যবহার করেনা। কারণ এন্টিবায়োটিকের  ব্যবহার করার তো কোনো প্রয়োজন নেই।

আপনি যদি ভালোমানের কাঁচামাল ও এডিটিভস ব্যবহার করেন, তবে অবশ্যই আপনার ফিডের রেজাল্ট ভালো আসবে বলে আমি মনে করি।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: প্রতিষ্ঠার মাত্র দেড় বছরের মাথায় আস্থা ফিড’ মাসিক বিক্রি ১০ হাজার টন এবং বর্তমানে প্রায় তিন বছরের মাথায় সেটি প্রায় ২০ হাজার টনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এমন ইর্ষণীয় সাফল্যের মূল কারণগুলো কি কি বলে আপনি মনে করেন?

মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন): এসব সাফল্যের মূল কারণ আস্থা ফিডের প্রতি খামারিদের আস্থা। আমরা মনে করি, যে কোন পণ্যের কোয়ালিটি ঠিক না থাকলে কখনোই মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করা সম্ভব না। সেজন্য গুণগত মানের ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ বদ্ধপরিকর; এ সাফল্যের অংশীদার আস্থা পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্য এবং সম্মানিত খামারিদের প্রতি আমরা সেজন্য কৃতজ্ঞ। আমি মনে করি- খাদ্যের গুণগত মান অর্থাৎ কোয়ালিটি সম্পন্ন ফিড; দক্ষ, পরিশ্রমী, কর্মঠ ও সার্ভিস ওরিয়েন্টেড সেলস টিম এবং আমাদের পলিসি আমাদেরকে আজকের এ পর্যায়ে নিয়ে আসছে। আামি আপনাকে আগেই বলেছি যে, আস্থা ফিড শুধুমাত্র ব্যবসা করার উদ্দেশ্য নিয়েই বাজারে আসেনি; বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পকে আমরা স্পেশাল কিছু দিতে এসেছি এবং এটি তারই একটি নমুনা মাত্র।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মো. গিয়াসউদ্দিন খান (স্বপন): আপনাকেও ধন্যবাদ।

This post has already been read 7014 times!