মঙ্গলবার , ডিসেম্বর ৩ ২০২৪

কেঁচো সারে স্বাবলম্বী রাজশাহীর উদ্যোক্তা বিলকিস

মো. আমিনুল ইসলাম (রাজশাহী) : রাজশাহীর পবার বড়গাছী কারিগরপাড়ার বিলকিস আরা বেগম ভার্মি কম্পোস্ট সার (কেঁচো সার) উৎপাদন করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিলকিস বলেন, ২০১৬ সালে  এই সার উৎপাদন শুরু করেন। সে সময়ে তিনি একটি চাড়ি, ৫০০ কেঁচো আর ৫০০টাকা নিয়ে এই সার উৎপাদনে নামেন। পবা উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে এই সার উৎপাদন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন তিনি।

বিলকিস বলেন, তাঁর স্বামী আব্দুর রশিদ খাঁ অসুস্থ হওয়ায় ক্ষেতে কাজ করতে পারেন না। বর্তমানে এই সার উৎপাদন করেই তিনি সংসার নির্বাহ করছেন। তিনি আরো বলেন, প্রথমবার তিনি মাত্র ৬০০টাকার সার বিক্রি করেছিলেন। এরপর থেকে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। পর্যায়ক্রমে চাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। এখন তার চাড়ির সংখ্যা শতাধিক এবং একটি হাউজ রয়েছে। সেখানে প্রায় পঞ্চাশটি চাড়ির পরিমান গোবর রাখা যায়। এছাড়াও তিনি বলেন, পবা উপজেলা বড়গাছী ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার জালাল উদ্দিন সার্বক্ষণিক তার এই খামার তদারকি করেন ।

সার উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রাম থেকে তিনি গোবর সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত গোবর ২০-২৫দিন একস্থানে গচ্ছিত রেখে পরে হাউজ ও চাড়িতে দেন। এই গোবর কেঁচো বেশী খায় এবং সারও বেশী হয়। প্রতিমাসে সার বের করে নিতে হয়। পরে আবার গোবর দিয়ে কেঁচো ছেড়ে দিতে হয় । তিনি বর্তমানে প্রতিমাসে গড়ে ১০মণের অধিক সার উৎপাদন করছেন। সেক্ষেত্রে প্রতিমাসে মোট ২০ মণের অধিক সার উৎপাদন হবে আশা করেন তিনি। এই সার বেশীর ভাগ পবা কৃষি অফিস ক্রয় করেন। প্রতিমণ সারের দাম ৫০০-৬০০টাকা । এছাড়াও অন্যান্য কৃষকরাও এখন তার নিকট থেকে সার ক্রয় করছেন । শুধু তাই নয়, প্রায় তিন থেকে চার মাস তিনি প্রতি কেজি ৮০০-১০০০টাকা দরে কেঁচো বিক্রি করেন। প্রতিমাসে  গড়ে ৮,০০০-১০,০০০টাকা আয় করেন।

পবা উপজেলা বড়গাছী ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার জালাল উদ্দিন দেওয়ান বলেন, এই ব্লকে আমি নতুন এসেছি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে কেঁচো সার উৎপাদনের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের আধুনিক কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় সেডসহ হাউজ করে দিয়েছি। আগামীতে আরো দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এই সার উৎপাদন ও ব্যবহারকারীদের উৎসাহিত করতে উৎপাদনকারীদের নিকট হতে কেঁচো সার ক্রয় করা হয়। আর এই সার বিভিন্ন প্রদর্শনীতে বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা বলেন, অত্র উপজেলায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারনের লক্ষে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিলকিস আরা বেগমকে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সেইসাথে সেডসহ একটি হাউজ নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এতে এই সার উৎপাদন করতে তার অনেক সহজ হবে। আগামীতেও এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। এই ধরনের উদ্যোক্ত্যাদের উৎপাদিত সার কৃষি অফিস ক্রয় করছে। আগামীতেও এ কার্যক্রম চলামান থাকবে।

This post has already been read 7905 times!

Check Also

সাংবাদিক থেকে কৃষি উদ্যোক্তা একজন শাহজাহান শাহীম

আব্দুল্লাহ আল মাহাদী : বাংলাদেশের অর্গানিক কৃষি উদ্যোক্তাদের মধ্যে শাহজাহান শাহীম এক অনন্য ও সুপরিচিত …