Tuesday 19th of March 2024
Home / প্রাণিসম্পদ / বন্ধ হচ্ছে না সুন্দরবনে হরিণ শিকার

বন্ধ হচ্ছে না সুন্দরবনে হরিণ শিকার

Published at ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৯

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): বন বিভাগ, কোস্ট গার্ড ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারীর মধ্যেও শীত মৌসুমে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে সংঘবদ্ধ হরিণ শিকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অবৈধ শিকারীরা কৌশলে নাইলনের ফাঁদ, জাল, প্রীং বসানো ফাঁদ, বিষটোপ, গুলি ছুঁড়ে, কলার মধ্যে বর্শি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ফাঁদসহ পাতার ওপর চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে হরিণ শিকার করছে। আর এর মাংস মোংলাসহ দেশের ভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করছে। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি গভীর রাতে চড়াপুটিয়া থেকে ৩৫ কেজি ওজনের একটি জবাইকৃত হরিণ ও ফাঁদ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে শুধুমাত্র গত এক মাসে ১২২ কেজি মাংস, জবাইকৃত হরিণের চামড়া মাথা ও ফাঁদ উদ্ধার হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত প্রায় দু’সপ্তাহের ব্যবধানে বন বিভাগ ও কোস্ট গার্ড পৃথক চারটি অভিযান চালিয়ে জবাইকৃত হরিণ, ৬৩ কেজি মাংস, মাথা, চামড়াসহ শিকারীদের ব্যবহৃত হরিণ শিকারের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে। এর আগে গত ২১ থেকে ২৩ নভেম্বর রাস মেলা চলাকালে বন বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে হরিণের মাংস, ফাঁদ, সরঞ্জাম ও নৌকাসহ ৫৭ জনকে আটক করে। আটককৃতদের বন আইনে মামলাও দেওয়া হয়। এ সময় হরিণের মাথা, চামড়াসহ বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার করে বনবিভাগ। এ ছাড়া ২২ জনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

চড়াপুটিয়ার অফিস ইনচার্জ মো. ইসমাইল হোসেন জানান, বুধবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে মরাপশুরের কাগাখালে ভারানী দিয়ে টহলরত অবস্থায় একটি নৌকা, তার একটু উপরে ৩৫ কেজি ওজনের একটি জবাইকৃত হরিণ ও ২০০ হাত ফাঁদ উদ্ধার করা হয়। এ সময় নৌকায় থাকা চাঁদপাই স্টেশন থেকে ১৫ জানুয়ারি নেয়া একটি মাছের পাসসহ মোংলার দ. চাঁদপাই ইউনিয়নের হাকিম হাওলাদারের ছেলে একলাস (৩৫), ইলিয়াস (৩২) ও ইয়াসীন হাওলাদার (২৯) কে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। এছাড়া গত ১৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সুন্দরবন থেকে আট কেজি হরিণের মাংসসহ একটি চামড়া ও একটি মাথা উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জয়মনি ও সুন্দরবন ইউনিয়নের একাধিক বনজীবী জানান, রাস মেলায় ব্যাপকহারে হরিণ শিকার হয়েছে। সে তুলনায় এখন পরিমাণ কম হলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন ভাবে চোরা শিকারীরা হরিণ শিকার করে লোকালয়ে বিক্রি করছে। এরপর চামড়া, শিংসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পাঠিয়ে দেওয়া হয় উপযুক্ত ক্রেতাদের কাছে। কখনো কখনো ঝামেলা এড়াতে তা মাটিতে পুঁতে বা সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। আর মাংস ‘রাজ মাংস’ নামে মংলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি দরে স্থানভেদে বিক্রি করা হয়।

কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার দিনগত রাতে অভিযান চালিয়ে হরিণের মাথা, মাংস ও চামড়া উদ্ধার করা হয়। তবে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। এর আগে ১৭ জানুয়ারি পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্চের তেরকাটি খাল এলাকা থেকে এলাকা থেকে ২৫ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করে বন বিভাগ। এ ছাড়া ৭ জানুয়ারি বনবিভাগ মংলার পশুর নদীর চিলা বাজার সংলগ্ন কানাইনগর এলাকা থেকে একটি ডিঙ্গি নৌকাসহ ৩০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করে। অবশ্য এসব ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি বন বিভাগ।

এদিকে রাস মেলা ও পরবর্তী সময়ে বিপুল সংখ্যক হরিণ শিকারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। ‘সেভ দ্যা সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম বলেন, বন বিভাগ ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় এবার রাস মেলায় অনেক বেশী হরিণ নিধনের ঘটনা ঘটেছে। বন বিভাগ ও প্রশাসনকে হরিণ শিকার রোধে আরো বেশী কঠোর হতে হবে। বন আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি বনসংলগ্ন লোকালয়গুলোতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারেরও আহ্বান জানান তিনি।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা ও লোকবল সংকটের মধ্যেও হরিণ শিকারিদের অপতৎপরতা রোধ করতে বনবিভাগ সব সময় তৎপর। বনরক্ষীদের পাশাপাশি আমাদের স্মার্ট পেট্রোল দল সব সময় কাজ করছে। যাদেরকে আমরা আটক করে আদালতে প্রেরণ করি তারা ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা গেলে এই জাতীয় অপরাধ সংঘটনের হার বহুলাংশে হ্রাস পাবে। এছাড়া আমরা বিভিন্ন ভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়গুলোতে সচেতনতামূলক কর্মকান্ড গ্রহণ করছি।

 

 

L

This post has already been read 1732 times!