
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিসিএস (পশুসম্পদ) ক্যাডারের প্রবেশ স্তরের সব পদে কেবলমাত্র সমন্বিত ডিগ্রিধারী -বিএসসি ইন ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড এনিমেল হাজবেন্ড্রি (বিএসসি ইন ভিএসঅ্যান্ডএএইচ) গ্রাজুয়েটদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে এনিমেল হাজবেন্ড্রি সংশ্লিষ্ট তিনটি শীর্ষ সংগঠন। বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি সোসাইটি, বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি এলামনাই এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি এসোসিয়েশন পৃথকভাবে প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপনকে অযৌক্তিক, বৈজ্ঞানিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ এবং দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গত বুধবার (০৫ নভেম্বর) জারি করা প্রজ্ঞাপন (নং-৩৩.০০.০০০০.১১৭.৯৯.০১৩.২৪-৬২০)-এ জানায় যে বিসিএস (পশুসম্পদ) ক্যাডারের প্রবেশ স্তরের সকল পদে এখন থেকে শুধুমাত্র সমন্বিত ভেটেরিনারি সায়েন্স ও এনিমেল হাজবেন্ড্রি ডিগ্রিধারীরা আবেদন করতে পারবেন। একইসঙ্গে মাঠপর্যায়ের ডিভিএম ও এএইচ ডিগ্রিধারী কর্মকর্তাদের জন্য ছয় মাস মেয়াদি ৩০ ক্রেডিটের সমন্বিত ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ (মেকআপ কোর্স) চালুর কথাও উল্লেখ করা হয়।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি সোসাইটি (BAHS) তাদের প্রতিবাদ লিপিতে জানায়, বিসিএস ক্যাডারের সার্ভিস পোস্টে এএইচ গ্রাজুয়েটদের নিয়মিত প্রবেশাধিকার বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া। নতুন প্রজ্ঞাপন সেটিকে হঠাৎ করে বাতিল করায় পেশাগত স্বাধীনতা, কর্মক্ষেত্রের মর্যাদা এবং প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কাঠামোতে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। সংগঠনটি বর্তমান কাঠামো বহাল রাখার আহ্বান জানায়। প্রতিবাদ লিপিতে স্বাক্ষর করেন সংগঠনের সভাপতি মো. মাহাবুব হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদৎ হোসেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি এলামনাই এসোসিয়েশন (BAHAA) তাদের বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি (AH) এবং ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (DVM) দুটি স্বতন্ত্র কিন্তু সমপর্যায়ের বিজ্ঞানভিত্তিক শাখা। দেশের খাদ্যনিরাপত্তা, পশুপালন, পুষ্টি, ব্রিডিং, প্রাণী উৎপাদন প্রযুক্তি, ফিড সায়েন্স, হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র উন্নয়নে এএইচ গ্রাজুয়েটদের অবদান দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃত। প্রজ্ঞাপনটি সে বাস্তবতাকে উপেক্ষা করেছে। সংগঠনটি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানায়। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মো. নুরু মিয়া ও সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি এসোসিয়েশন (BAHA) বলেছে যে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন দুই বিজ্ঞানশাখার সমন্বিত কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভরশীল। সায়েন্টিফিক রিসার্চ, ফিল্ড ম্যানেজমেন্ট, বাণিজ্যিক উৎপাদন, ফিড-ফরমুলেশনসহ বহু টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে এএইচ গ্রাজুয়েটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। প্রজ্ঞাপনে তাদের প্রবেশাধিকার বন্ধ হলে প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন ব্যাহত হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সংগঠনের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. আবুল হাশেম এবং মহাসচি মো. রফিকুল ইসলাম খান (জন)।
তিন সংগঠনই বলেছে, সমন্বিত ডিগ্রিধারীদের একচ্ছত্র প্রবেশাধিকারের এই সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা, পেশাগত কাঠামো এবং দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন–সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারা জরুরি ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপনটির পুনর্বিবেচনা এবং পূর্বের কাঠামো বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে।

