
বাংলাদেশসহ গোটা এশিয়ার পোল্ট্রি শিল্প এখন দ্রুত আধুনিকায়নের পথে। এই পরিবর্তনের ধারায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশের পোলট্রি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান AXON (এক্সোন)। “Farm to Dining” ধারণাকে কেন্দ্র করে ইউরোপ ও এশিয়ার আধুনিক প্রযুক্তি সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি দেশের উল্লেখিত খাতে সুনামের সাথে এখনো কাজ করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি এগ্রিনিউজ২৪.কম-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে AXON-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব জাহিদুল ইসলাম কথা বলেন তাদের প্রযুক্তি, কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে।
এগ্রিনিউজ২৪.কম: প্রথমেই জানতে চাই, AXON মূলত কী ধরনের কাজ করে এবং এর সেবার পরিধিগুলো আসলে কী কী?
জাহিদুল ইসলাম: আমরা পোল্ট্রি, প্রাণিসম্পদ ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের জন্য সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত সমাধান, প্রকৌশল পরামর্শ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকি। আমাদের লক্ষ্য – কৃষকের “খামার থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত” প্রতিটি ধাপে প্রযুক্তির সংযোগ ঘটানো। অর্থাৎ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাত – সবক্ষেত্রেই আধুনিকতা আনাই আমাদের কাজের মূল উদ্দেশ্য।
এগ্রিনিউজ২৪.কম: কোন কোন প্রযুক্তি বা সেবাকে আপনারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন?
জাহিদুল ইসলাম: আমাদের কাজের পরিধি বেশ বিস্তৃত। আমরা আমরা স্টিল স্ট্রাকচার, ফিডিং ও ড্রিংকিং সিস্টেম, কেজ টেকনোলজি, ভেন্টিলেশন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, হ্যাচারি টেকনোলজি, গ্রেইন স্টোরেজ সাইলো, এগ প্রসেসিং, পোল্ট্রি ও লাইভস্টক প্রসেসিং, ফারদার প্রসেসিং (ফ্রোজেন ফুড), ওয়েস্ট রেন্ডারিং, এথনিক ফুড প্রসেসিং এবং কোল্ড চেইন সিস্টেম নিয়ে কাজ করছি। এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে আমরা একটি সমন্বিত ‘ইকোসিস্টেম’ হিসেবে দেখি।
এগ্রিনিউজ২৪.কম: আপনি অনেক বছর ধরে পোল্ট্রি খাতে কাজ করছেন। এই খাতের ঠিক কোন বিষয়টি আপনাকে এই শিল্পে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছে?
জাহিদুল ইসলাম: আমার অনুপ্রেরণার মূল উৎস সেই সময়, যখন দেশের বড় বড় পোল্ট্রি কোম্পানিগুলো একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করে। সবাই যখন বুঝতে পারে, একে অপরের প্রতিযোগী না হয়ে সহযোগী হতে হবে— তখনই এই খাতের প্রকৃত উন্নয়নের সূচনা ঘটে। সেই ঐক্য আর উদ্ভাবনের চেতনা এখনো আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
এগ্রিনিউজ২৪.কম: বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান ‘ভার্টিক্যাল ইন্টিগ্রেশন’ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। আপনি এটিকে কীভাবে দেখছেন?
জাহিদুল ইসলাম: আমার মতে, এটি আধুনিক কৃষি-শিল্পের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। এতে কোম্পানি ডিম থেকে শুরু করে চূড়ান্ত পণ্য পর্যন্ত পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়াকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। ফলে উৎপাদন খরচ কমে, মান নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়, বাজার ঝুঁকি কমে এবং সার্বিকভাবে দক্ষতা বেড়ে যায়।
এগ্রিনিউজ২৪.কম: ঘনবসতিপূর্ণ মুরগি পালনে খাঁচা প্রযুক্তি এখন জনপ্রিয়। এর মূল দিকগুলো কী?
জাহিদুল ইসলাম: খাঁচা প্রযুক্তির মূল বিষয় হচ্ছে – মুরগি বা পাখির আরাম, স্বাস্থ্য ও উৎপাদন দক্ষতা। এখানে টেকসই খাঁচার নকশা, স্বয়ংক্রিয় খাওয়ানো-পানি দেওয়ার ব্যবস্থা এবং উন্নত পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়। এতে জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হয়, রোগের ঝুঁকি কমে, এবং উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
এগ্রিনিউজ২৪.কম: দেশের প্রাণিজ আমিষ খাতের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়টি নিয়ে AXON কীভাবে কাজ করছে?
জাহিদুল ইসলাম: বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন শুধু পরিবেশের জন্য নয়, অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে খামারের বর্জ্যকে শক্তি বা বিদ্যুৎ এ্বং সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে খামারের স্বাস্থ্যবিধি বজায় থাকে, প্রাণীর সুস্থতা বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশবান্ধব খামার ব্যবস্থায় অবদান রাখা সম্ভব হয়।
এগ্রিনিউজ২৪.কম: আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান এখন প্রক্রিয়াজাত ও হিমায়িত খাদ্য উৎপাদনে আগ্রহী। এক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি কেন প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
জাহিদুল ইসলাম: স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উৎপাদন হয় সুনিয়ন্ত্রিত, দ্রুত ও মানসম্মত। এতে শ্রম খরচ, সময় ও অপচয় কমে – পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। আধুনিক ভোক্তা এখন নিরাপদ, প্যাকেটজাত ও মানসম্মত পণ্য চায়, তাই এ প্রযুক্তি অপরিহার্য।
এগ্রিনিউজ২৪.কম: প্রক্রিয়াজাত মাংস ও ফ্রোজেন ফুড শিল্প দেশের অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
জাহিদুল ইসলাম: এই খাত এখন বাংলাদেশের জন্য এক সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত। এটি কর্মসংস্থান তৈরি করছে, খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করছে এবং কৃষি পণ্যের মূল্য সংযোজন করছে। তাছাড়া ফ্রোজেন ফুড সংরক্ষণযোগ্য, নিরাপদ এবং ভোক্তার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক -যা খাদ্য অপচয় কমায় ও বাজার স্থিতিশীল রাখে।
এগ্রিনিউজ২৪.কম: পোল্ট্রি শিল্পে আধুনিক যন্ত্রপাতির গুরুত্ব কতটুকু বলে আপনি মনে করেন?
জাহিদুল ইসলাম: আধুনিক ও উদ্ভাবনী যন্ত্রপাতি ছাড়া এখন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। এসব সরঞ্জাম শুধু উৎপাদন বাড়ায় না, প্রাণির কল্যাণ নিশ্চিত করে এবং খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখে। ফলে খামারের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।
এগ্রিনিউজ২৪.কম: সর্বশেষ জানতে চাই – এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টগণ কেন AXON-কে বেছে নেবেন?
জাহিদুল ইসলাম: কারণ AXON এক কথায় একটি “ওয়ান-স্টপ সলিউশন” প্রতিষ্ঠান। আমরা দিচ্ছি বৈচিত্র্যময় প্রযুক্তি, মানসম্মত পণ্য, অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দল এবং দ্রুত সেবা। ইউরোপ-এশিয়া জুড়ে আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা আমাদের আলাদা করে তোলে। আমাদের লক্ষ্য – বাংলাদেশের পোল্ট্রি ও খাদ্য শিল্পকে টেকসই ও আধুনিক রূপে বিশ্বমানে পৌঁছে দেওয়া।