Friday 26th of April 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / ১০৪ ধরণের সবজি নিয়ে রাজধানীতে তিন দিনব্যাপী সবজি মেলা

১০৪ ধরণের সবজি নিয়ে রাজধানীতে তিন দিনব্যাপী সবজি মেলা

Published at জানুয়ারি ১৪, ২০১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে সবজি চাষে ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার হচ্ছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটাচ্ছে। আমাদের কৃষকদের এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিরাপদ সবজি উৎপাদন জোরদার করতে হবে। সবজি চাষ এখন বাণিজ্যিকীকরণে পরিণত হয়েছে। সবজি উৎপাদনে আমাদের নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবজি রপ্তানিতেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এক সময় শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট মৌসুমে কিছু সবজি পাওয়া যেত। এখন সারা বছর সবজি চাষ হচ্ছে এবং বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। শহর অঞ্চলে ছাদে বাগান এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যা বায়ুমন্ডলকে বিশুদ্ধ করে তোলে। এখানে আমাদের নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।  সামুদ্রিক শৈবাল চাষে আমাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যা নিয়ে ইতমধ্যে গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

‘সারা বছর সবজি চাষে, পুষ্টি-স্বাস্থ্য-অর্থ আসে’ এ প্রতিপাদ্যে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চত্বরে রবিবার (১৪ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া ‘জাতীয় সবজি মেলা ২০১৮’ এর মেলার উদ্বোধনী দিনে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, হাইব্রিডের কারণে এখন আমরা সারা বছর সবজি পাচ্ছি। যা আগে কখনো আমরা ভাবতে পারতাম না। হাইব্রিডের প্রচলন সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিলো। সেময় অনেকে সমালোচনা করেছিলো। হাইব্রিড বীজ নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানীর কাছে জিম্মি হয়ে যাবো। আমাদের কৃষকরা কারো কাছে এখনো জিম্মি হয় নাই। দেশী কোম্পানী ও বহুজাতিক কোম্পানীর মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। এখানে কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

তিনি আরো  বলেন, আলু থেকে তৈরি স্টার্চ আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকি। আমাদের দেশে আলু থেকে কিভাবে স্টার্চ তৈরি করা যায়, গবেষণার মাধ্যমে ভ্যারাইটাল ইমপ্রুভমেন্টের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ গার্মেন্টস শিল্পে স্টার্চের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, কাঁচা কাঠালকে ভেজিটেবল মিট হিসেবে ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কাঁচা কাঁঠালকে বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে আমরা অনেক দিক দিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো। এজন্য আমাদের প্রচারণা বাড়াতে হবে।

মন্ত্রী উল্লেখ করেন, ভাসমান সবজি চাষে আমরা বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছি এবং এটা দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করছে। শুন্যে, জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে উদ্যান তৈরী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মেলা উপলক্ষ্যে সকাল ৯.৩০ টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে র‌্যালি শুরু হয়ে কেআইবি চত্বরে শেষ হয়। সকাল ৯:৪৫ টায় কেআইবি অডিটরিয়ামে ‘পরিবর্তিত জলবায়ুতে পুষ্টি নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচনে বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি চাষ’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।  সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মো. হারুনর রশীদ। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবুল কাসেম ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ব বিভাগের প্রফেসর মো. রুহুল আমীন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল আজিজ। আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্। সেমিনার শেষে অতিথিবৃন্দ মেলার উদ্বোধন করেন ও বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।

সবজি মেলায়  এবার প্রায় ১০৪ ধরণের সবজি প্রদর্শিত হচ্ছে।  এতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ৫৬ টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ টি স্টল ও ৪টি প্যাভেলিয়ন  স্থান পায়। সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি র‌্যালি, সেমিনার, জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।  তৃতীয়বারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হরেক রকমের সবজি দেখার পাশাপাশি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। বাংলাদেশে চাষ হয় এমন ১৫৬ ধরনের সবজি সনাক্ত করা হয়েছে।

দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার ও জাতের শাকসবজির সাথে সাধারণ মানুষের পরিচিতকরণ, ভবিষ্যৎ সবজি উৎপাদনে প্রেরণা প্রদান, সবজি উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন প্রকার উৎপাদন প্রযুক্তি ও কলাকৌশল প্রদর্শন, সবজি উৎপাদনে ও সম্প্রসারণে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বীজ ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারকদের কার্যক্রম ও সফলতা তুলে ধরা, সবজি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, পুষ্টিমান ও গ্রহনের বিষয়ে বিভিন্ন প্রকার পুস্তিকা, লিফলেট, পোস্টার, সিডি, ম্যাগাজিন, পত্রিকা প্রদর্শন ও বিতরণ, সবজির ওপর সেমিনার ও আলোচনা সভার মাধ্যমে সবজি চাষ ও বাজারজাতকরণের সমস্যা ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা -এ মেলার উদ্দেশ্য বলে আয়োজক সূত্রে জানা যায়।

This post has already been read 2149 times!