Saturday 27th of April 2024
Home / পরিবেশ ও জলবায়ু / আম্ফানের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা নিমজ্জিত

আম্ফানের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা নিমজ্জিত

Published at মে ২০, ২০২০

ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা) : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল নিমজ্জিত হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘর-বাড়ি ডুবতে বসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝুঁকিপুর্ণ বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কলাবগীসহ আশপাশ এলাকার ঘর বাড়ি ডুবতে শুরু করেছে ।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় উপকূলের লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকার ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের পাশ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগী গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ির অর্ধেকটা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে ‘ঝুলন্তপাড়া’ নামে পরিচিত নলিয়ান থেকে কালাবগি পযন্ত ৬, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ ঘর-বাড়িই পানি প্রবেশ করে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে না গিয়ে ঘরের আসবাব রক্ষা করতে দেখা গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য জিএম ফয়সাল ইসলাম বলেন, প্লাবিত এলাকার লোকজনকে আমরা সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। তবে অনেকেই আসবাবপত্র ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছে না। তারপরও জীবন রক্ষার বিষয়টি বুঝিয়ে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছেন তারা।

এদিকে দাকোপ উপজেলার একটি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন নারীরা। বুধবার সকালে পুরুষের সঙ্গে নারীরাও নিজেদের ঘর-বাড়ি-সম্পদ রক্ষায় বেড়িবাঁধ ঠেকাতে কাজ করছেন এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আম্ফানের প্রভাবে খুলনা অঞ্চলের অন্যান্য নদ-নদীর মত দাকোপ উপজেলার ঝপঝপিয়ে নদীর পানিও বেড়ে গেছে। এ কারণে উপজেলার ১ নম্বর পানখালী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া বেড়িবাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় বুধবার সকাল থেকে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মাটি কেটে বাঁধ মজবুত করার চেষ্টা করেন। এ অবস্থা দেখে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজে নেমে পড়েন।

বাঁধ রক্ষার কাজে এগিয়ে আসা স্থানীয় বাসিন্দা গৃহবধূ শিল্প্রা হালদার ও নমিতা রায় বলেন, এখন দুর্যোগময় মুহূর্ত। বিপদ আসলে সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হব। এ কারণে দ্রুত বাঁধ রক্ষা করা দরকার। তাই পুরুষের সঙ্গে তারাও কাজ করছেন। স্থানীয় পানখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল কাদের বলেন, ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীর পানির উচ্চতা কয়েকফুট বেড়ে গেছে। শুস্ক মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে কার্যকর ভুমিকা গ্রহন না করায় ফলে বেড়িবাঁধ ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে স্থানীয়রা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত করে আর পাউবোর কর্মকর্তারা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মেরামত কৃত বাঁধের নিজস্ব ঠিকাদারের নামে কাজ দেখিয়ে অফিসে বসে বিল উত্তোলনের লুটপাট করে । আর প্রকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে কোনো শ্রমিকও পাওয়া যায় না। তাই নিজেদের জানমাল হেফাজতে সবাই বাঁধ রক্ষায় কাজ করেন এবং অনেকেই নিরাপদ আশ্রয় যেতে ব্যস্ত থাকে। এ অবস্থায় এলাকার নারী-পুরুষরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতেই বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন।

এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর সুত্র জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে আম্পান। বর্তমানে এটি পশ্চিমবঙ্গের স্থলভাগ ও সুন্দরবনের ওপর আছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ১৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। দেশের সব বন্দর ও উপকূলীয় জেলাগুলোকে সামুদ্রিক মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও দেওয়া হয়েছে নৌ মহাবিপদ সংকেত।
অপরদিকে বুধবার দুপুরে উপকূলীয় বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজারের পূর্বপাশে বলেশ্বর নদী সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের স্থান থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকলে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি দিয়ে পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্কাভেটর দিয়ে ভাঙনের স্থানে মাটি দ্বারা মেরামত করা হয়। এছাড়া মূল বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বলেশ্বর নদী সংলগ্ন খুড়িয়াখালী গ্রামে রিং বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিটারে টেকসই বাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু এই পেল্ডারের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং সিডরের প্রবেশদার বগী ও দক্ষিণ-সাউথখালীর এ অংশে সিইআইপির কোনো কাজ করা হয়নি। একারণে গোটা সাউথখালী এখন অরক্ষিত। এর মধ্যে বগী ও গাবতলা গ্রাম সংলগ্ন বাঁধের খুব খারাপ অবস্থা। বলেশ্বর নদীর পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের শক্তিশালী রুপে আছড়ে পড়ে তাহলে ইউনিয়নটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাহিদুজ্জামান খান বলেন, সময়ের সাথে সাথে জেলার নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল পানি ঢুকছে। এর মধ্যে শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর পানি প্রায় সাত ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার বগী ও গাবতলা এলাকার বেড়িবাঁধের দিকে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীর পানির উচ্চতা কয়েকফুট বেড়ে গেছে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওই এলাকায় তাৎক্ষণিকভাবে বাঁধ সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

This post has already been read 1839 times!