
রাজশাহী সংবাদদাতা: শনিবার (২২ নভেম্বর) নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার আওতাধীন কালীগ্রাম শাহ্ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর প্রাঙ্গনে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট, বিভাগীয় গবেষণাগার, রাজশাহীর আয়োজনে MSTL কর্মসুচীর সমাপনীতে সার সুপারিশ কার্ড বিতরণ ও ভেজাল সার সনাক্তকরণ বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন কৃষিবিদ ড. বেগম সামিয়া সুলতানা মহাপরিচালক, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট, ফার্মগেট, ঢাকা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কৃষিবিদ মো. জয়নাল আবেদীন পরিচালক, অ্যানালাইটিক্যাল সার্ভিস উইং, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট, ফার্মগেট, ঢাকা, কৃষিবিদ ড. মো. নূরুল ইসলাম প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট, বিভাগীয় কার্যালয়, রাজশাহী, কৃষিবিদ মোছা: ফরিদা ইয়াছমিন আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী ও কৃষিবিদ মো. মোহাইমিনুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, মান্দা, নওগাঁ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, কৃষিবিদ একেএম আমিনুল ইসলাম, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট, বিভাগীয় গবেষণাগার, রাজশাহী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, মাটি হলো মা। তাই মাটির স্বাস্থ্যকে আমাদের ভাল রাখতে হবে। তা নাহলে হলে আমরা কেহই ভাল থাকতে পারবো না। মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে জমিতে সুষম মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। জমির মান ভাল রেখে ফসল উৎপাদন করতে হলে পর্যাপ্ত পরিমান জৈব প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই সার প্রয়োগের পূর্বেই মাটি পরীক্ষা করে নিতে হবে। মাটি পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি জমি ৩-৪ বছর অন্তর অন্তর মাটি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। মাটি পরীক্ষা করার মাধ্যমে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হলে মাটির স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। তিনি আরো বলেন, মাটি পরীক্ষা করে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হলে যেমন মাটি ভাল থাকে, ঠিক তেমনি ফসলে পোকামাকড় ও রোগবালাই কম হয়। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হয় এবং মান সম্মত ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়। তিনি কৃষকদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, আপনারা কখনই জমিতে ভেজাল সার প্রয়োগ করবেন না। জেনে বুঝে সঠিক সার জমিতে প্রয়োগ করবেন। জমিতে অধিক মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করবেন না। কারণ অধিক মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে জমির গুণগত মান নষ্ট হয়। তিনি পরিশেষে উপস্থিত কৃষকদের মাটি পরীক্ষা এবং ভেজাল সার সনাক্ত করে জমিতে সার ব্যবহারের অনুরোধ জানান।
বিশেষ অতিথিগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজন সুস্থ মাটি। মাটি পরীক্ষার কোন বিকল্প নাই। সরকার ভূর্তকি দিয়ে খুব অল্প খরচে মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। সেক্ষেত্রে নয়টি উপাদানের জন্য মাত্র ৫৮ টাকা করচে করে ল্যাবে মাটি পরীক্ষা করতে পারবেন। অতিথিগণ আরো বলেন, মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ডলোচুন ব্যবহার করা উত্তম। অম্ল মাটিতে বুনট অনুযায়ী তিন বছর পর পর প্রতি শতক জমিতে ২-৩ কেজি হারে ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে। তবে ফসল বপনের ১০-১২ দিন আগে ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে। তাই ডলোচুন প্রয়োগের মাধ্যমে মাটির অম্লত্ব দুর করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট, বিভাগীয় ল্যাবরেটরীর ভ্রাম্যমান ল্যাব তিস্তার মাধ্যমে মাটির নমুনা পরীক্ষা ও ভেজার সার সনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হয় এবং শতাধিক কৃষককের মাঝে সার সুপারিশ কার্ড, লিচু ও লেবু গাছের চারা এবং ছাতা বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এসআরডিআই এর মহাপরিচালক মহোদয় শাহ্ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর প্রাঙ্গনে লিচু ও লেবু গাছের চারা রোপন করেন।
অনুষ্ঠানে ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী কৃষক-কৃষাণীসহ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট, রাজশাহী, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী এবং উপজেলা কৃষি অফিস, মান্দার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাংবাদিকসহ প্রায় ১৫০ জন উপস্থিত ছিলেন।

