Monday 29th of April 2024
Home / পরিবেশ ও জলবায়ু / করোনার সুযোগে বনবিভাগের ট্রলারেই উজাড় হচ্ছে সুন্দরবন

করোনার সুযোগে বনবিভাগের ট্রলারেই উজাড় হচ্ছে সুন্দরবন

Published at মে ১১, ২০২০

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): প্রাণঘাতী করোনা থমকে দিয়েছে গোটা দেশ। তার মধ্যেও সুন্দরবনে মুল্যবান সম্পদ লুট এবং থেমে নেই বনদস্যুদের দস্যুতা। বরং করোনা ভাইরাসের স্থবিরতাকে কাজে লাগিয়ে বন বিভাগের এক শ্রেনীর দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী ও বনদস্যুরা যোগসাজসে কেটে নিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের ঐতিহ্য সুন্দরী ও কাঁকড়া গাছ। শুধু তাই নয়, কর্তন নিষিদ্ধ এসব গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে বনবিভাগের পতাকাবাহী ট্রলারেই। এমনই এক চিত্র ধরা পড়েছে গণমাধ্যমের চোখে। দেখা গেছে বনবিভাগের ট্রলারে করে সুন্দরী ও কাঁকড়া গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ট্রলারে ছিলেন সুন্দরবনের চিহ্নিত তিন পাচারকারী। তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী স্টেশনের অফিসার (এসও) মো. আনোয়ার হোসেন খানের নির্দেশেই তারা এ গাছ কেটে পাচার করছেন।

জানা গেছে, অন্যান্য দিনের মতো আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুন্দরবনের ঘাগরামারী এলাকা থেকে সুন্দরী ও কাঁকড়া গাছ কেটে বন বিভাগের পতাকাবাহী ট্রলারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই ট্রলারে থাকা তিন চিহ্নিত পাচারকারীর মধ্যে তরুন  নামে একজন জানান, ‘এ গাছ ঘাগরামারী থেকে কেটে আনতে ঢাংমারী স্টেশন অফিসার আনোয়ার সাহেব অনুমতি দিয়েছেন।

পরে এ বিষয়ে ঢাংমারী স্টেশনের স্টেশন অফিসার (এসও) মো. আনোয়ার হোসেন খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘাগরামারী টহল ফাঁড়ি থেকে এ গাছ আমাদের স্টেশনের (ঢাংমারী)র স্থাপনা তৈরির কাজে আনা হচ্ছিল। এ গাছ কর্তনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা রয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন বিভাগের পতাকাবাহী ট্রলারে বহন করা গাছ নেওয়ার সময় তিন পাচারকারী ছাড়া ট্রলারে কোনো বনরক্ষী ছিলেন না।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী ও কাঁকড়া গাছ কেটে উজার করা হচ্ছে। আর এই সুন্দরবনে মূল্যবান সম্পদ লুন্ঠনে বন বিভাগের কতিপয় দুর্ণীতিবাজ বনরক্ষী, স্টেশন কর্মকর্তা ও বনদস্যুরা সরাসরি জরিত। তারা জরিত না হলে বন বিভাগের  ট্রলারে করেই এ সব মুল্যবান সম্পদ পাচার করা সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে ঢাংমারী স্টেশন সংলগ্ন ভোজনখালী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর রহমান, সাবেক ইউপি মেম্বর মো. আফসার আলী ও সঞ্জয় কুমার বর্মণ বলেন, ‘ঢাংমারী স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন এবং ঘাগরামারীর অফিসের কর্মকর্তা রউফ তাদের লোক (দালাল) দিয়ে সুন্দরবন থেকে প্রতিনিয়তই কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী, কাঁকড়া ও বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ পাচার করে আসছেন। শুধু সুন্দরী, কাঁকড়া ও বাইন গাছই নয় তারা হরিন শিকার করে চড়া দামে মাংস বিক্রি, নিহত বাঘের চামরা,হাড়সহ যাবতীয় মুল্যবান সম্পদ দের্দাছে পাচার করছে । তাদের এ অপকর্মের প্রতিবাদ করে, তাদের বিরুদ্ধে ঐ বন কর্মকর্তারা মিথ্যা হরিণ পাচারের মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ‘এই দুই কর্তার অনিয়মের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন ভোজনখালী গ্রামের বাসিন্দা বাদল ও ট্রলার মাঝি রহিম। এই দুই বনকর্তার সহযোগী বাদল এবং রহিমের অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এখন অতিষ্ঠ। সুন্দরী ও কাঁকড়া গাছ কেটে পাচারের প্রতিবাদ করলেই সাধারণ মানুষের নামে ঠুকে দেওয়া হয় হরিণ পাচারের মিথ্যা মামলা।

এ ব্যাপারে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. এনামুল হক বলেন, ‘এসও আনোয়ার জানিয়েছেন তাদের স্টেশনের জেটি নির্মাণের জন্য ওই গাছ নেওয়া হচ্ছিল। তবে ওই গাছ বন থেকে সদ্য কাটা কি না সেটি আমি বলতে পারবো না। সরেজমিন তদন্ত করলে যানা যাবে ।

খুলনাঞ্চল বনবিভাগের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. মঈন খান বলেন, ‘সুন্দরবন থেকে সদ্য গাছ কেটে স্টেশনের কোনো স্থাপনা তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিনের জব্দকৃত গাছ দিয়ে এসব স্থাপনা করতে গেলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন দরকার। কোনো কর্মকর্তা বনের গাছ কেটে থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

This post has already been read 2955 times!