
সাভার সংবাদদাতা: বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)-এ বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে বিশ্ব ডিম দিবস ২০২৫। ইনস্টিটিউটের পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে এবং পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
বিকেল সাড়ে ৩টায় দিবসটি উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। বিএলআরআই-এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক এর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এ র্যালিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন। র্যালিটি বিএলআরআই-এর পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টার প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালি শেষে পোল্ট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগ সংলগ্ন ফটক এলাকায় পথচারী ও দুঃস্থদের মাঝে ডিম বিতরণ করা হয়।
এরপর বিকেল ৪টায় বিএলআরআই ভবনের চতুর্থ তলার সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএলআরআই-এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার উপপরিচালক বেগম মানছুরা হাছিন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএলআরআই-এর সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. নাথু রাম সরকার। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের দপ্তর প্রধান এবং পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার।
পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএলআরআই-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ডেইরি রিসার্চ সেন্টারের দপ্তর প্রধান ড. মো. রাকিবুল হাসান। এরপর “Nutritional Properties of Eggs for Building a Healthy Nation” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার। তিনি প্রবন্ধে বিশ্ব ডিম দিবসের ইতিহাস, তাৎপর্য, ডিম খাওয়ার উপকারিতা, এবং বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
এরপর অনুষ্ঠিত হয় বিশেষজ্ঞ আলোচনা পর্ব, যেখানে ড. নাথু রাম সরকার বলেন, “ডিম দিবস পালনের উদ্দেশ্য দুটি—একটি হলো ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, আরেকটি হলো ডিম উৎপাদকদের উৎসাহিত করা।” তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণে ডিমের উৎপাদন বাড়াতে হলে উৎপাদন খরচ কমানো এবং দেশীয় পরিবেশ উপযোগী অধিক ডিম উৎপাদনশীল জাত উদ্ভাবনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।”
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তারা ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ট তৈরি ও প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেগম মানছুরা হাছিন বলেন, “ডিম মানে জীবন। এটি একটি সম্পূর্ণ খাদ্য। পোল্ট্রির ফিডের মানের ওপরই ডিমের পুষ্টিগুণ নির্ভর করে, তাই আমাদের ফিড প্রিপারেশনের গুণগত মানে আরও মনোযোগ দিতে হবে।” তিনি জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামালের খরচ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শাকিলা ফারুক বলেন, “মেধাবী ও সুস্থ জাতি গঠনে প্রাণিজ প্রোটিনের বিকল্প নেই। তুলনামূলকভাবে ডিম হলো সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও পূর্ণাঙ্গ পুষ্টির উৎস। এতে এলডিএল (ক্ষতিকর ফ্যাট) কম এবং এইচডিএল (উপকারী ফ্যাট) বেশি থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি কম। ডিম নিয়ে যে সকল ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমাদের প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।”
অনুষ্ঠানের শেষে আমন্ত্রিত অতিথি ও আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান বিএলআরআই আঞ্চলিক কেন্দ্র, রাজশাহীর স্টেশন ইনচার্জ ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ।
দিবসের অংশ হিসেবে বিকেলে সাভারের গেরুয়া এলাকার একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝেও ডিম বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ডিমের পুষ্টিগুণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন (IEC) ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রথম বিশ্ব ডিম দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ এবং বিএলআরআইও প্রতিবছর দিবসটি পালন করে আসছে। এবছরের প্রতিপাদ্য ছিল— “ডিমে আছে প্রোটিন, খেতে হবে প্রতিদিন।”