মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: যুক্তরাজ্য ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত নতুন ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তিতে মুরগি, ডিম, চিনি ও শুকরের মাংসসহ বেশ কয়েকটি সংবেদনশীল কৃষিপণ্যে বর্তমান শুল্ক হার বহাল রাখা হয়েছে। দেশীয় খামারিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
চুক্তিতে ভারতের তুলনায় কম পশুকল্যাণ মানসম্পন্ন কৃষিপণ্য যুক্তরাজ্যে আমদানির ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। ভারতে এখনো ব্যারেন ব্যাটারি খাঁচায় মুরগি পালন বৈধ, যা যুক্তরাজ্যে ২০১২ সাল থেকেই নিষিদ্ধ। ফলে সস্তা ও কমমানের এসব পণ্য দিয়ে ব্রিটিশ কৃষকদের বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার আশঙ্কায় শুল্ক হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
চুক্তিতে হুইস্কি ও জিন আমদানির ওপর শুল্ক ধাপে ধাপে কমিয়ে ১৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ এবং ১০ বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্যামন মাছ, চকলেট, বিস্কুট ও খাসির মাংসসহ আরও কিছু পণ্যে নতুন শুল্ক কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্য তার খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও প্রাণিস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে নিজস্ব মানদণ্ড নির্ধারণে পূর্ণ স্বাধীনতা বজায় রাখবে। এতে দেশটি উচ্চমান বজায় রেখেই আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে ন্যাশনাল ফার্মারস ইউনিয়নের (এনএফইউ) সভাপতি টম ব্র্যাডশ বলেন, “সরকার আমাদের উদ্বেগ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। সংবেদনশীল কৃষি খাতগুলোকে রক্ষায় চিনি, মুরগি, ডিম ও শুকর আমদানিতে শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে—যা কৃষকদের জন্য বড় স্বস্তি।”
তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ খাসির মাংস ভারতে রপ্তানির পূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা ইতিবাচক। তবে আপেল ও ওটসের মতো পণ্যে রপ্তানির সুযোগ বাড়েনি, যা হতাশাজনক।
ব্র্যাডশ জানান, এই চুক্তিতে আবারও ব্রিটিশ দুগ্ধ খাতকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, অথচ ভারতীয় বাজারে ব্রিটিশ চিজ ও দুগ্ধজাত পণ্যের প্রবেশাধিকার বাড়েনি। তিনি বলেন, “এটা পরপর তিনটি বড় বাণিজ্য চুক্তিতে দেখা গেল। দেশীয় দুগ্ধ শিল্পের ওপর এর সম্মিলিত প্রভাব সরকারকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে।”
প্রাণিসম্পদ কল্যাণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কমপ্যাশন ইন ওয়ার্ল্ড ফার্মিং’ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে- মুরগি, শুকর ও ডিমজাত পণ্যে শুল্ক হ্রাস না করায় সস্তা ও নিম্নমানের আমদানি নিরুৎসাহিত হবে। এতে দেশীয় খামারিরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন না।
রয়েল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমালস (আরএসপিসিএ)-এর জনসংযোগ প্রধান ডেভিড বোয়েলস বলেন, চুক্তির ভাষায় পশুকল্যাণ নিয়ে আগের মতো দৃঢ় অবস্থান না থাকলেও যুক্তরাজ্য নিজস্ব মানদণ্ড ও লেবেলিং ব্যবস্থা বজায় রাখতে পারবে—এটি একটি বড় অর্জন।
চুক্তিটি সামগ্রিকভাবে যুক্তরাজ্যের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতের মান ও প্রতিযোগিতা সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ভবিষ্যতের বাণিজ্য আলোচনায় দেশীয় খাদ্য উৎপাদন ও রপ্তানির ভারসাম্য রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন খামারি ও কৃষক নেতারা।