নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প খাত হিসেবে পরিচিত পোল্ট্রি শিল্পের টিকে থাকা এবং এর আরও বিকাশের স্বার্থে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন (বিপিআইএ)। সম্প্রতি সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সভাপতি শাহ হাবিবুল হক সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি জানান, পোল্ট্রি খাত শুধু দেশের প্রোটিনের প্রধান উৎসই নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করছে এবং লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে নানা প্রতিকূলতা, বৈশ্বিক সংকট ও নীতিগত সীমাবদ্ধতায় এই শিল্পে নিযুক্ত লাখো খামারি চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। এ অবস্থায় দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের সুরক্ষা দিতে বাজেটে স্পষ্ট বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নব্বই দশক থেকে পোল্ট্রি খাত শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের আত্মকর্মসংস্থানের অন্যতম বড় খাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। দীর্ঘ চার দশকে দেশের প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার পোল্ট্রি শিল্প গড়ে উঠেছে, যেখানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে। শিল্পটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে টেকসই অবদান রাখার পাশাপাশি দেশের প্রোটিন চাহিদার সিংহভাগই পূরণ করছে। দেশে উৎপাদিত ডিম ও মুরগির মাংস ভোক্তাদের জন্য সুলভ ও সহজলভ্য প্রোটিনের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এ শিল্পের সরবরাহ শৃঙ্খল এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে খামারিদের জন্য দিন দিন টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ব্যাকওয়ার্ড সাপ্লাই চেইনের প্রতিটি উপাদান—একদিনের বাচ্চা, খাদ্য, ভ্যাক্সিন, ঔষধের মূল্যবৃদ্ধি ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার ফলে খুচরা বাজারে ডিম ও মুরগির দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়ছে এবং সরকারের নীতি ও কৌশলও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
বিপিআইএ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বাজেটে পোল্ট্রি খাতের প্রান্তিক ও মাঝারি খামারিদের জন্য সরাসরি কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। অথচ খামারিরা প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনছেন। শাহ হাবিবুল হক বলেন, খামারিরা দেশের কোটি কোটি ভোক্তার জন্য প্রতিদিন সুলভ মূল্যে ডিম ও মুরগি সরবরাহের লক্ষ্যে খামার পরিচালনা করছেন। কিন্তু বৈশ্বিক বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্য, ঔষধ, ভ্যাক্সিনসহ কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে, কিন্তু বাজারে যৌক্তিক মূল্য পাচ্ছেন না। ফলে প্রান্তিক ও মাঝারি খামারিরা চরম লোকসানের মধ্যে পড়ছেন এবং অনেকেই খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
শিল্পটি যখন আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এবং রপ্তানিমুখী হতে শুরু করেছিল, তখনই কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শিল্পকে অচল প্রায় করে দেয়। পোল্ট্রির খাদ্য, কাঁচামাল, মেশিনারিজ আমদানির খরচ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। বিগত পাঁচ বছরে তাই বহু ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার চিরতরে হারিয়ে গেছে। শাহ হাবিবুল হক সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এই শিল্পে নতুন করে প্রাণসঞ্চারের জন্য বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।
বিপিআইএ জানিয়েছে, প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষা দিতে এবং শিল্পটিকে টেকসই করতে বাজেটে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জন্য নামমাত্র সুদে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের বিশেষ বরাদ্দ, আধুনিক ডিম সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য থোক বরাদ্দ, বিদ্যুৎ বিলে ২০% ছাড় সহজীকরণ, জেলার পোল্ট্রি ঘন অঞ্চলে ‘পোল্ট্রি পণ্য বিজনেস সেন্টার’ গড়ে তোলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য আপৎকালীন তহবিল এবং পোল্ট্রি খাতের ফিডের কাঁচামাল, মেশিনারিজ ও এডিটিভস-এর ওপর শুল্ক ও ভ্যাট পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছে সংগঠনটি।
বিশেষ করে রমজান মাসে ডিমের চাহিদা হ্রাস পায়, ফলে ছোট খামারিরা লোকসানে পড়ে। তাই এই সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকারি উদ্যোগে আধুনিক সাপ্লাই চেইন এবং সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়। এছাড়া ফড়িয়া সিন্ডিকেট ও মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সরাসরি বিক্রির ব্যবস্থা করে খামারিদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
শাহ হাবিবুল হক বলেন, দেশের পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশের স্বার্থে এবং ভোক্তা-উৎপাদক উভয়ের স্বার্থরক্ষায় প্রস্তাবিত এসব উদ্যোগ বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। তিনি জাতীয় স্বার্থে এসব দাবির পক্ষে দেশের ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচারের জন্য সাংবাদিক সমাজের প্রতি বিনীত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একটি সুস্থ-সবল জাতি গঠনের জন্য পোল্ট্রি শিল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা অপরিহার্য। তাই সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলে এই দাবি ও সুপারিশগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনার জন্য তিনি সরকারের সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।