
নিজস্ব প্রতিবেদক: করের ধাক্কায় দেশের পোলট্রি খাতে আগামীতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছেন ওয়াপসা- বিবি’র সদ্য সাবেক সভাপতি মসিউর রহমান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বাজেটে আরোপিত অতিরিক্ত কর, শুল্ক এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে পোলট্রি শিল্প মারাত্মক সংকটে পড়তে যাচ্ছে। এতে খামারি থেকে শুরু করে উৎপাদন ও বিপণন – সব পর্যায়েই চাপ তৈরি হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে প্রাণিজ আমিষের প্রাপ্যতা ব্যাহত হতে পারে।
আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-তে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল ও ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখার আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন ও অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান সিকদার। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ওয়াপসা-বিবি’র সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ মো. ফয়জুর রহমান।
মসিউর রহমান বলেন, “আমাদের শিল্প এমনিতেই সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। এখন বাজেটের বাড়তি করের বোঝা যুক্ত হওয়ায় অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারি টিকে থাকতে পারবে না। এর প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থান, পুষ্টি সরবরাহ এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই না ভোক্তা সাধারণ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে এখন পর্যন্ত কোনো খামারি তার ডিম বিক্রি করতে পারেননি। অথচ ডিমের দাম নিয়ে অপপ্রচার এবং হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। ভোক্তা অধিকার ও প্রতিযোগিতা কমিশনে আমাদের নামে করা মামলাগুলোও এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। এতে খামারিদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে।”
নকল ডিম নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের বিষয়ে মসিউর রহমান তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মসিউর রহমান বলেন, “নকল ডিম বলে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি – আমাদের কাছে কেউ যদি নকল ডিম এনে প্রমাণ করতে পারেন যে, সেটি নকল ডিম, তাহলে আমরা তাকে লাখ টাকা পুরস্কার দেবো। অন্যথায় দেশ ও শিল্পের স্বার্থে সবাইকে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার না করার অনুরোধ করছি।”
তিনি বলেন জানান, সরকার আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬৫ কোটি এবং ২০৪১ সালে ২০৮ কোটি পোলট্রি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু খাদ্য, ভ্যাকসিন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। ফলে এই শিল্পের টেকসই উন্নয়ন এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশের পোলট্রি শিল্প এখন গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ। প্রায় ৮০ লাখ মানুষ এই খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। শিল্পটির বার্ষিক অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। তাই এই শিল্পের স্থিতিশীলতা ও বিকাশ রক্ষায় সরকারের করনীতি পুনর্বিবেচনা করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন বিপিআইসিসি সভাপতি।