
সিকৃবি সংবাদদাতা: “প্রযুক্তিনির্ভর কৃষির মাধ্যমেই আমরা দারিদ্র বিমোচন করতে পারবো”— সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই বার্তাই উঠে এসেছে। বক্তারা বলেন, কৃষিকে টেকসই ও লাভজনক করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তি, গবেষণা ও নীতিনির্ধারণ—এই তিনটি ক্ষেত্র একসাথে কাজ করলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে রবিবার (২ নভেম্বর) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁকজমকভাবে উদযাপন করা হয়। জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের তত্ত্বাবধানে দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল বাণী প্রচার, জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও সাদা পায়রা উড্ডয়ন, কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ ও আনন্দ র্যালি।
সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলামের নেতৃত্বে র্যালিটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরে কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়নে কৃষিশিক্ষা ও গবেষণায় করণীয়” শীর্ষক সেমিনার।
জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি-২০২৫ এর সভাপতি ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার এর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম এবং প্রধান অতিথি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. এম. সারওয়ারউদ্দিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. নিজাম উদ্দিন ও সিকৃবি ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ. টি. এম. মাহবুব-ই-ইলাহী।
প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, “জ্ঞান, মেধা ও মননের বিকাশে অনন্য এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের দূরদর্শী পদক্ষেপে সিলেট অঞ্চলের কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম. সাইফুর রহমানের একক প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে।” তিনি আরও বলেন, “প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি জাতিকে উপহার দিতে চাই। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও টেকসই উন্নয়নের প্রধান চাবিকাঠি হলো কৃষির সার্বিক উন্নয়ন। কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমেই এই দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হতে পারে—এই বিশ্বাস থেকেই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”
প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. এ. এম. সারওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পথচলা। কৃষিকে টেকসই ও লাভজনক করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বীজ নির্বাচন থেকে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে এআই প্রযুক্তির প্রয়োগ উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, খরচ কমাতে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।” তিনি আরও যোগ করেন, “শুধু প্রযুক্তি উদ্ভাবন নয়—এর উৎপাদন, পরিচর্যা ও বিতরণ গবেষক ও বিজ্ঞানীদের দায়িত্ব, আর এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। গবেষণা, প্রযুক্তি ও নীতিনির্ধারণ এই তিন ক্ষেত্র একসাথে কাজ করলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।”
বিশেষ অতিথি প্রফেসর ড. মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, “কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রযাত্রায় আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ অপরিহার্য। আমাদের ঐতিহ্যবাহী কৃষিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী রূপ দিতে হবে। প্রযুক্তি, অটোমেশন ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের আয় নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে চা ও চামড়া শিল্প—যা আমাদের ঐতিহ্য ও রপ্তানি আয়ের বড় উৎস—তাকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বেসিক ও অ্যাপ্লাইড গবেষণার মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবন, জলবায়ু সহনশীল ফসল ও পশুসম্পদ উন্নয়নে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে। পাশাপাশি, ফুড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলিউশনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক শিল্পে রূপান্তর করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিন কাউন্সিলের আহবায়ক প্রফেসর ড. নির্মল চন্দ্র রায়, প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহবায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কাওছার হোসেন, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. আসাদ-উদ-দৌলা, প্রক্টর প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেজিস্ট্রার ও আইকিউএসির পরিচালক প্রফেসর ড. এম. রাশেদ হাসনাত এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাৎস্যচাষ বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন।

