বাকৃবি সংবাদদাতা: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছাত্র সংসদ নির্বাচন (বাকসু) আয়োজন, শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সহায়তা ফান্ড গঠনসহ ৬ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাকৃবি শাখা।

সোমবার (২০ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকৃবি ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক প্রচার সম্পাদক ইউনুস বিন হুসাইন খান। এর আগে গতকাল সংগঠনটির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শহীদুল হকের নিকট এ স্মারকলিপি প্রদান করে।
এসময় প্রতিনিধি দলে উপস্থিত শাখা শিবিরের প্রচার সম্পাদক ইউনুস বিন হুসাইন খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু সমস্যা ও সংকট চলমান রয়েছে। কিছু বিষয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন যাবৎ দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু বিষয়গুলো এখনো সুরাহা হয়নি। এজন্য বাকৃবি শাখা শিবিরের পক্ষ হতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৬ দফা পেশ করেছি। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আমরা শিক্ষার্থীরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নানাবিধ সংকট কাটিয়ে উঠবো। বিশ্ববিদ্যালয় যেন সুন্দর শিক্ষার পরিবেশ হয়ে উঠে এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের সংগঠিত প্লাটফর্ম নেই। ডাকসু, রাকসুসহ ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন হয়েছে কিন্তু বাকৃবিতে এটির অভাব বোধ করছি। প্রশাসনকে জানিয়েছি এবছরের নভেম্বরের শেষের দিকে অথবা ডিসেম্বরের প্রথমদিকে বাকসু আয়োজন করা হয়। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে পারে।
ছয় দফা দাবিগুলো হলো:
১. দ্রুত আবাসন সংকট সমাধান: ছাত্রী হলে সিট সংকট নিরসনের জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বারবার সিট সমস্যার সমাধানের দাবিতে আন্দোলনে নামার মতো ভোগান্তি থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে হবে। নির্মাণাধীন হলসমূহের কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে হবে।
২. হেলথ কেয়ার ও চিকিৎসা সহায়তা ফান্ড গঠন: শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি পূর্ণাঙ্গ হেলথ কেয়ার প্রতিষ্ঠা করা, যা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা দিতে সক্ষম হবে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা ডাক্তারের উপস্থিতি ও পর্যাপ্ত ওষুধ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষত নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নারী চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে।
সকল ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। নতুন অ্যাম্বুলেন্স সংযোজন করে ঘাটতি পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসা সহায়তা ফান্ড গঠন করে বিভিন্ন দুর্ঘটনা বা প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে হবে।
৩. হল ডাইনিং, ক্যান্টিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রেস্টুরেন্টসমূহে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ: ওয়েটার ও শেফদের জন্য ইউনিফর্ম/ড্রেস (এপ্রোন, টুপি, গ্লাভস, জুতা/স্যান্ডেল) প্রতিদিন পরিষ্কার করে পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। খাদ্য উপকরণ (ময়দা, আটা, লবণ ইত্যাদি) ঢাকনাযুক্ত পৃথক কন্টেইনারে সংরক্ষণ করতে হবে। রান্না করা খাবার স্বচ্ছ কাঁচের ডিসপ্লে র্যাকে পরিবেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। রান্নাঘর ও সংলগ্ন স্থান নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় পরপর মনিটরিং টিমের মাধ্যমে খাবারের মান ও মূল্য যাচাই করতে হবে।
৪. রাস্তা মেরামত ও পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা: দীর্ঘদিন ধরে এক নম্বর গেইট থেকে জব্বারের মোড় পর্যন্ত রাস্তার বেহাল অবস্থা বিদ্যমান। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাস্তায় অধিকাংশ লাইট নষ্ট হয়ে আছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তাই অবিলম্বে রাস্তা মেরামত ও নষ্ট লাইটগুলো দ্রুত মেরামত করে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
৫. টিএসসিতে নারীশিক্ষার্থীদের জন্য নামাজের ও খাবার গ্রহণের পৃথক ব্যবস্থা: টিএসসিতে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজের স্থান নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া খাবার গ্রহণের সময় পর্দাসীন নারী শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পর্দা দিয়ে পৃথক টেবিলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. ছাত্র সংসদ নির্বাচন: দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা ছাত্র সংসদ সচল করার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ‘বাকসু নির্বাচন’-এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।