Saturday 27th of April 2024
Home / ফসল / বিশ্বব্যাপী স্বাদু পানির ৭২ শতাংশই ব্যবহৃত হয় কৃষি কাজে

বিশ্বব্যাপী স্বাদু পানির ৭২ শতাংশই ব্যবহৃত হয় কৃষি কাজে

Published at অক্টোবর ১৬, ২০২৩

default

নিজস্ব প্রতিবেদক: পৃথিবীতে বেঁচে থাকার একটি অপরিহার্য উপাদান পানি; পানির গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে আজ সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৩ পালন করছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এফএও-এর কর্মসূচিতে পানি একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে কারণ বিশ্বব্যাপী স্বাদু পানির ৭২ শতাংশই ব্যবহৃত হয় কৃষি কাজে। বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য কাজে ব্যাপকভাবে পানি ব্যবহারের কারণে কৃষিকাজে পানির প্রাপ্যতা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

পৃথিবীতে মাত্র ২.৫% স্বাদু পানি, যা পান যোগ্য, এবং কৃষি ও বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের উপযুক্ত। মানুষ, অর্থনীতি, প্রকৃতি এবং আমাদের খাদ্যের ভিত্তির একটি অন্যতম চালিকা শক্তি হচ্ছে পানি, তবে অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মতোই স্বাদু পানির যোগান অপরিসীম নয়। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর পানি সম্পদকে ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে ফেলছে।

প্রায় ৬০ কোটি মানুষ যারা তাদের জীবিকার জন্য আংশিকভাবে হলেও জলজ খাদ্য ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল, তারা দূষণ, বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয়, ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থাপনা, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভুগছে। সীমিত পরিমানে পানি ব্যবহার করে আমাদের অধিক পরিমানে খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য উৎপাদন করা প্রয়োজন, সেই সাথে পানির সুষম বন্টন নিশ্চিত করার পাশাপাশি জলজ খাদ্য ব্যবস্থা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।

বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা ও মৎস্য চাষে এফএও-এর সহায়তা

কান্ট্রি প্রোগ্রামিং ফ্রেমওয়ার্ক (সিপিএফ)এর নির্দেশনায় ২০২২-২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশে এফএও-এর সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে যার স্তম্ভ মূলত চারটি। এর মধ্যে  পানি ব্যবস্থাপনা এবং বিশুদ্ধ পানির উপর দৃষ্টিপাত করে দ্বিতীয় স্তম্ভ: স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ, ও পুষ্টিকর খাদ্য এবং তৃতীয় স্তম্ভ: স্থিতিশীল জলবায়ু, প্রাকৃতিক সমাধান, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে টেকসই উন্নয়ন।

আর্নো হ্যামেলিয়ার্স, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন এফএও প্রতিনিধি বলেন, “এফএও বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পানি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করে। আমরা আমাদের সহযোগীদের সাথে কাজ করছি যাতে সকলের জন্য পানির অবকাঠামো উন্নত করা যায়, উন্নত জলজ চাষ প্রযুক্তি প্রবর্তন এবং মৎস্য নীতিতে সহায়তা করার জন্য মৎস্য সংক্রান্ত তথ্য সমীক্ষা পরিচালনা করা যায়।”

ইফাদ অর্থায়িত স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর কারিগরি সহায়তায় একটি নতুন গবেষণা পরিচালিত হবে যেখানে কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং শস্য বৈচিত্র্যের উপর ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবস্থাপনার প্রভাব পরীক্ষা করা হবে। এই গবেষণার ফলাফল পানির অবকাঠামোর উন্নত করতে সাহায্য করবে যা ক্ষুদ্র খামারিদের প্রয়োজন অনুসারে অথবা সারা বছর পানি ব্যবহারের চাহিদা পূরণ করবে। এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগের সুবিধা পেয়ে আসছে, যেগুলো হল পানি সংরক্ষণ এবং বিধান ব্যবস্থা, যা তাদের উচ্চ মূল্যের ফসল ফলাতে, নতুন বাজারের সুযোগ অন্বেষণ করতে এবং আয় বাড়াতে সক্ষম করে।

স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা ও জ্ঞান বাড়াতে এফএও কমিউনিটি-ভিত্তিক ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ প্রকল্পে কারিগরি অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে নীতি সংস্কার এবং জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক মৎস্য ও জলজ প্রযুক্তির ব্যবহার।

মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে কারিগরি সহযোগিতা প্রকল্প,  প্রধান তিনটি নদীর (মেঘনা, যমুনা এবং পদ্মা) অববাহিকায়  মৎস্য এবং জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন করে। এই গবেষণা, মূল্যায়ন নীতি সংস্কার, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ মৎস্য বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে।

মৎস্য অধিদপ্তর এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থাকে এফএও প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে আসছে। এই সহায়তার মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে মৎস্য জরিপ, গবেষণা এবং স্টক মূল্যায়ন করা।

এফএও দুটি কারিগরি পরিষেবা প্রকল্প চালু করেছে: ক্যাচ অ্যান্ড এফর্ট মনিটরিং সিস্টেম, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সিং সিস্টেম এবং স্টক অ্যাসেসমেন্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদী গুণমান নিশ্চিতকরণ। বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নত এবং বিসৃত বাংলাদেশ সার্ভে ইনফরমেশন সিস্টেম (বানএসআইএস) এবং ক্যালিপসিও সিস্টেমও তৈরি করা হয়েছে। এসকল সিস্টেম মৎস্য সংক্রান্ত তথ্য আরও ভালভাবে বুঝতে এবং পরিচালনা করতে সাহায্য করে, যা টেকসই মৎস্য চাষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ করে, এবং পরিশেষে দেশের মানুষের জীবিকা এবং খাদ্য নিরাপত্তার উপকারে আসে।

সমন্বিত ওয়াটারশেড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে  আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার, পুনরায় ব্যবহার যোগ্য জ্বালানি সাশ্রয়ী চাষাবাদ ব্যবস্থা, এবং দক্ষ ও ন্যায়সঙ্গত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা নিয়ে কক্সবাজারে এফএও কাজ করছে।

চলমান প্রকল্পগুলি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছে, জিইএফ মৎস্য প্রকল্পের অধীনে মৎস্য উৎপাদনে জড়িত ৬৩টি জলাশয়ে (পুকুর, ঘের, হ্রদ/বিল ইত্যাদি) ১৫৫৭টি পরিবার পাইলট কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। উপরন্তু, বাংলাদেশে কৃষক সংগঠনের জন্য অ্যাক্সেস টু ফাইন্যান্স, যা মিসিং মিডল ইনিশিয়েটিভ প্রজেক্ট (এমএমআই) নামেও পরিচিত, মাছ উৎপাদনে নিয়োজিত ১০৬৯ পরিবারের সাথে কাজ করছে, আরও ৫৯৫ টি পরিবার সেচ সুবিধা থেকে উপকৃত হচ্ছে।

২০২৩ সালের জাতিসংঘ পানি সম্মেলনে, সবার জন্য পর্যাপ্ত পানি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে যথেষ্ট পরিমাণ পানি এবং এর গুণমান নিশ্চিত করতে সকল পক্ষ একমত পোষণ করে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কমিউনিটি এবং বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার হিসাবে, এফএও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় এবং কৃষি রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে যার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কৃষক ও তাদের পরিবার উপকৃত হবে।

This post has already been read 906 times!