Sunday 28th of April 2024
Home / ফসল / পাকা আমের ক্ষতিকর পোকামাকড় ও প্রতিকার

পাকা আমের ক্ষতিকর পোকামাকড় ও প্রতিকার

Published at মে ১৬, ২০২২

মো. মাহাবুবুল ইসলাম: ফলের রাজা আম আর মধুমাস হচ্ছে জৈষ্ঠ্য । মধু মাস এই কারণে বলা হয় যে জৈষ্ঠ্য মাসে যে সকল ফল পাওয়া যায় তা সকলই সুমিষ্ট। আর মিষ্টি ফলের সমারোহে আম হচ্ছে সবচেয়ে রসালো মধুর মত মিষ্ট ফল। আম পছন্দ করে না এমন ব্যক্তি বাংলার মুল্লুকে খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। এটি বর্তমানে বাংলাদেশে অন্যতম অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপন্ন হয়। দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক যার মূল্য প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। অথচ পাকা পওশুমে কিছু রোগ বালাই ও মোকামাকড়ের আক্রমনে আম চাষীদের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়। তাই আম চাষী ভাইদের জানানোর জন্য আজকের লেখা যাতে সময় মত পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেন। নিম্নোক্ত রোগ গুলো প্রায় সকল প্রকার আমেই হয়ে থাকে।

পাকা আমের ক্ষতিকর পোকামাকড় ও প্রতিকারের বিবরণ

মাছি পোকা : আম পাকার সময় স্ত্রী মাছি পোকা ডিম পাড়ার অঙ্গের সাহায্যে ফলত্বক ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার ২-৩ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে কীড়া বা ম্যাগট বের হয় এবং ফলের শাঁস খেতে থাকে। আক্রান্ত আম বাইরে থেকে বোঝা যায়না কিন্তু কাটলে আমের ভিতরে অসংখ্য কীড়া দেখা যায়।

আমের মাছি পোকা।

মাছি পোকা প্রতিকার: পরিপক্ক কিন্তু সবুজ আম গাছ থেকে সংগ্রহ করলে এ পোকার আক্রমণ এড়ানো সম্ভব। পোকাক্রান্ত আমগুলো সংগ্রহপূর্বক মাটিতে গভীর গর্ত করে পূঁতে ফেলতে হবে। বাদামী কাগজ বা পলিথিন দিয়ে ফল ব্যাগিং করতে হবে। ফল সংগ্রহের অমত্মত এক মাস পূর্বে বিষটোপ ফাঁদ হিসেবে ১০০ গ্রাম পাকা আম থেঁতলে এর সাথে ১ গ্রাম সেভিন ৮৫ ডবিস্নউপি বা সেকুফোন ৮০ এসপি বিষ ব্যবহার করতে হবে (বিষটোপ ২-৩ দিন পর পর পরিবর্তন করতে হবে) অথবা ফল সংগ্রহের এক-দেড় মাস পূর্বে মিথাইল ইউজেনলযুক্ত সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে।

ফল ছিদ্রকারী পোকা : এ পোকার কীড়া আমের সরম্ন প্রামেত্ম বিন্দুর মত ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে এবং প্রথমে শাঁস ও পরে আটি খাওয়া শুরু করে। প্রাথমিক অবস্থায় ছিদ্র পথ হতে সাদা ফেনা বের হয় এবং পরবর্তী কালে আক্রান্ত স্থান ফেটে যায় ও পচন ধরে। আক্রান্ত আম অচিরেই ঝরে পড়ে।

আমের ফল ছিদ্রকারী পোকা।

ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিকার : মার্চ-এপ্রিল মাসে ঝরে যাওয়া আক্রান্ত কচি ফল মাটি থেকে সংগ্রহ করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে । মার্চ মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে শুরু করে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার প্রতি লিটার পানির সাথে ২ মি.লি. হারে ফেনিট্রোথিয়ন(সুমিথিয়ন/অন্যনামের) ৫০ ইসি মিশিয়ে আমে স্প্রে করলে এ পোকার আক্রমণ কমানো সম্ভব হবে।

আমের বোঁটা পচা রোগ : সাধারণত পরিপক্ক আমের ক্ষেত্রে এই রোগ হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বোঁটার দিক থেকে পচন শুরু হয়। Lasiodiplodia natalensis নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।

আমের বোঁটা পচা রোগ।

আমের বোঁটা পচা রোগ প্রতিকার: পরিস্কার শুষ্ক দিনে বোঁটা সহ ফল সংগ্রহ করতে হবে। খবরের কাগজ বা খড় বিছিয়ে বোঁটা নীচের দিকে করে আম রাখতে হবে যাতে কষ আমের গায়ে না লাগে। আম সংগ্রহ, পরিবহন ও সংরক্ষণের সময় যেন কোন ক্ষত সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ৪৩০ সে. তাপমাত্রায় ৬% বোরাক্স মিশ্রনে ৩ মিনিট আম ডুবিয়ে রাখতে হবে।

**প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।

সূত্র: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

This post has already been read 2208 times!