Tuesday 19th of March 2024
Home / ফসল / ধান বাঁচাতে পানি না পেয়ে বিষপানে কৃষকের আত্মহত্যা

ধান বাঁচাতে পানি না পেয়ে বিষপানে কৃষকের আত্মহত্যা

Published at মার্চ ২৪, ২০২২

রাজশাহী সংবাদদাতা: ধানক্ষেতে পানি না পেয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অভিনাথ মার্ডি (৩০) নামে এক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে দেওপাড়া ইউনিয়নের নবাই বটতলা নিমঘুটু এলাকার নিজ বাড়িতে মারা যান ওই কৃষক।

অভিনাথ মার্ডি নবাই বটতলা নিমঘুটু গ্রামের বাবু চাঁদ মার্ডির ছেলে। তার সঙ্গে বিষপান করেন আরেক কৃষক রবি মার্ডি (৩০)। রবি একই এলাকার মঙ্গল মার্ডির ছেলে। সম্পর্কে অভিনাথ ও রবি চাচাতো ভাই।

বুধবার (২৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় রবিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি নেন স্বজনরা। বর্তমানে হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি তিনি।

জানা গেছে, ধানক্ষেতে পানি না পেয়ে ক্ষোভে গতকাল (বুধবার) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিষপান করেন এই দুই ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর কৃষক। গভীর নলকূপের অপারেটর তাদেরই এক চাচাতো ভাইয়ের ভ্যানে তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

পরিবার ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দেওপাড়ার ঈশ্বরীপুর ব্লাকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপের সেচের আওতায়  ধানচাষ করেন কৃষক অভিনাথ ও রবি। চলমান খরায় ধানক্ষেত ফেটে চৌচির। কিন্তু গভীর নলকূপের অপারেটর শাখাওয়াত হোসেন সেচের পানি দিতে তালবাহানা করছিলেন। সিরিয়ালের নামে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তাদের ঘুরাচ্ছিলেন অপারেটর। সেচ ক্ষমতার অতিরিক্ত জমিতে ধানচাষ হওয়ায় ফসল বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা।

খেতের ফসল রক্ষায় গতকাল (বুধবার) ফের অপারেটরের কাছে যান অভিনাথ ও রবি। কিন্তু অপারেটর আবারো সিরিয়ালের নামে তাদের ফিরিয়ে দেন। ক্ষোভে সেখানেই বিষপান করেন দুই কৃষক। পরে তাদের ভ্যানে তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দেন অপারেটর। বাড়ি ফিরে গিয়ে রাতে মারা যান অভিনাথ। অসুস্থ রবিকে হাসপাতালে নেন স্বজনরা।

গভীর নলকূপ অপারেটন শাখাওয়াত হোসেন দাবি করেন, গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) তাদের খেতে পানি দেওয়া হয়েছে। ইশ্বরীপুরে বিএমডিএর ২ নং ডিপ টিউবওয়েলের অধীনে ২৬৫ বিঘা জমি এবার ধান চাষের আওতায় এসেছে। কোথাও পানির সংকট নেই বলে দাবি করেন অপারেটর।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-১ এর সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল হাসান। তিনি জানান, তারা স্বপ্রণোদিত হয়েই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। তবে ২৬৫ বিঘা নয়, সেখানে প্রায় দেড়শ বিঘা জমিতে ধানচাষ হয়েছে। কোথাও পানি সংকট নেই।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে যান গোদাগাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানে আলম। তিনি জানান, এমন খবর পেয়েই তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তবে কী কারণে ওই দুই কৃষক বিষপান করলেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তারা এ নিয়ে আইনত ব্যবস্থা নেবে।

গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে। এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

This post has already been read 2586 times!