Friday 26th of April 2024
Home / সংগঠন ও কর্পোরেট সংবাদ / সুখে-দুঃখে ইউকে বাংলা ফিডের সাথেই থাকতে চাই

সুখে-দুঃখে ইউকে বাংলা ফিডের সাথেই থাকতে চাই

Published at মার্চ ২৫, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘ইউকে বাংলা নিয়ে আমরা খুব ভালো আছি। সুখে-দুঃখে আমরা ইউকে বাংলা ফিডের সাথেই থাকতে চাই’। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার ভবানীপুরের বানিয়ারচালায় “uk-bangla” ফিড মিল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত পরিবেশক সম্মেলন-২০২১ এ আগত পরিবেশকগণ এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাহদী ইমাম। এরপর আগত প্রধান ও বিশেষ অতিথিদের ফুল দিয়ে বরন এবং কেক কেটে উদযাপন করা হয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সবাই এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

ইউকে-বাংলা ফিড -এর পরিবেশকগণ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ও মার্কেটিং বিভাগের ভূয়সি প্রশংসা করে তারা ফিডের মান সবসময় একই রকম রাখার অনুরোধ ও ইউকে বাংলা ফিডের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রায় একই নামে ভিন্ন একটি কোম্পানি ফিড বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ করেন। এছাড়াও তাঁরা ফিডের পাশাপাশি একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা বাজারজাতকরণের অনুরোধ করেন।

সম্মেলনে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে আগত পরিবেশক ইকবাল হোসেন বলেন, সারাবিশ্বে কাঁচামালের দাম বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে ফিডের দাম; কিন্তু খামারিদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগির দাম বাড়ছে না। যখন আমরা বস্তাপ্রতি ১৭০০-১৮০০ টাকায় ফিড ক্রয় করতাম, তখন আমরা একশ’ ডিম বিক্রি করতাম ৭০০ টাকায়; এখন আমরা ফিড ক্রয় করছি ৩৩০০-৩৪০০ টাকায়, এখনো আমাদের ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ৭০০ টাকায়! আমরা প্রতিনিয়ত লোকসান দিয়ে যাচ্ছি, খামারিরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আশা করি চলমান সংকট এক সময় কেটে যাবে এবং ফিডের দাম কমবে। আমাদের হতাশ চলে চলবে না, আমাদের আশাবাদী হতে হবে। আমরা ইউকে ফিডের সাথে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। এ সময় তিনি ইউকে বাংলাকে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের অনুরোধ করেন।

আরেক পরিবেশক বলেন, ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়ুক তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই, কিন্তু সেই দাম বাড়ার সাথে উৎপাদিত ডিম ও মুরগির দামও বাড়তে হবে। কারণ, উৎপাদন খরচ ও বিক্রির সাথে একটি সামঞ্জস্য না থাকলে খামারি, পরিবেশক, ফিডমিল মালিক কেউ বাঁচবে না।

সম্মেলনে বাংলা-ইউকে এগ্রো প্রডাক্টস্ লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মেজবাহ উদ্দিন বলেন, শুরু থেকেই এখনো পর্যন্ত সম্মানিত পরিবেশক ও খামারিগণ আমাদের ওপর যে আস্থা রেখেছেন তার জন্য সত্যিই আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা চেষ্টা করছি, ব্যবসার পাশাপাশি এ টু জেড সলিউশ দিতে; যাতে একই ছাতার নিচে সবাইকে সেবা দেয়া যায়।  বিশ্বব্যাপী চলমান অস্থিরতা এক সময় কেটে যাবে, উঠবে নতুন সূর্যের আলো, সেই পর্যন্ত আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে। খামারি, পরিবেশক ও ফিডমিল মালিকদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে খামারি, পরিবেশক ও ফিডমিলারগণ প্রত্যেকে লোকসানের মধ্যে আছে উল্লেখ করে, আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট,  ট্যাক্স ও এআইটি প্রত্যাহারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা চান।

সম্মেলনের স্বাগত এবং উপস্থিত পরিবেশকগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ইউকে-বাংলা এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড-এর পরিচালক ও চীফ টেকনিক্যাল অফিসার কৃষিবিদ জাহিদুল ইসলাম মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বছরের ৩৬৫ দিন ফিডের মান একই রকম রাখা সম্ভব হয় না, একজন নিউট্রিশনিষ্ট হিসেবে এটুকু আমি বলতে পারি। আমরা ফিড তৈরির প্রত্যেকটি কাঁচামাল ফিজিক্যাল প্যারামিটারে চেক করি এবং সেখানে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ল্যাব টেস্ট করি এবং মান যাচাই করি; উল্লেখিত দুটো পরীক্ষায় কেবল উত্তীর্ণ হওয়ার পর সেই কাঁচামাল আমার ফিড তৈরিতে ব্যবহার করি। পরিবেশক ভাইদের কাছে আমার অনুরোধ, যখনই ফিডের মানের ক্ষেত্রে কোন তারতম্য মনে হবে সেটি আপনারা সরাসরি আমাদেরকে জানাবেন। আমরা চেষ্টা করবো, ফিডের মানের সর্বোচ্চটুকু বজায় রাখতে। কারণ, মান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আমরা খুবই সোচ্চার। এছাড়াও ডিম ও ব্রয়লার মুরগির পারফরমেন্স শুধুমাত্র ফিড নয়, আবহাওয়ার ওপরও নির্ভর করে।

‘মাছের ভাসমান ফিড তৈরির সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে ইউকে বাংলা, যা আগামী মে মাসের শেষের দিকে চালু করার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মাছের ভাসমান ফিডের যত মেশিন এসেছে আমরা সবচেয়ে লেটেস্ট জেনারেশন নিয়ে এসেছি; যার মাধ্যমে বিভিন্ন সাইজের মাইক্রো ফিড তৈরি করা হবে। দেশের ফিড সেক্টরের জন্য এটি একটি সুখবর’ যোগ করেন জাহিদুল ইসলাম।

এছাড়াও ময়মনসিংহের তারাকান্দাতে ইউকে বাংলা ফিস হ্যাচারি চালুর কথা জানান তিনি, যেখানে কৈ, পাবদা, গোলসা, কার্প মাছের পোনা পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে পোলট্রি হ্যাচারি শুরু করার পরিকল্পনার কথাও জানান। ডিম ও মুরগির দামে যতটুকু অস্থিরতা মাঝেমধ্যে কাজ করে, রপ্তানি শুরু হলে সেগুলোও কেটে যাবে আশাবাদ ব্যাক্ত করে জাহিদুল ইসলাম পরিবেশকদের আনসোল্ড বাচ্চা ক্রয় না করার অনুরোধ করেন।

ওয়াপসা-বিবির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হাসান বলেন, চলমান সংকট একদিন কেটে যাবে, অন্ধকারের পরেই আলোর দেখা মিলে। খামারি, পরিবেশক এবং শিল্পোদ্যোক্তাদের সবাইকে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একসাথে এগিয়ে যেতে হবে। মধ্যম আয়ের ও উন্নত দেশে পরিনত হওয়ার জন্য ডিম ও মাংসের উৎপাদন আরো অনেক বেশি বাড়াতে হবে। আমরা টার্গেট নিয়েছি ২০৩০ সনের মধ্যে আমাদের রপ্তানিতে যেতে হবে, তাই ২০২৫ সনের মধ্যে এন্টিবায়োটিক ফ্রি ডিম ও মাংস উৎপাদন করতে হবে। এ সময় তিনি ভালো কোম্পানির ফিড, ওষুধ ও বাচ্চা ক্রয়ের পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ইউকে বাংলা তিন বছরের কোম্পানি হলেও, এই সেক্টরে তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে ২৪ বছরের। এ সময় তিনি ইউকে বাংলা ফিডের উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

ইউকে বাংলা ফিড -এর পরিচালক এনায়েত উল্লাহ বলেন, উপস্থিত পরিবেশকদের মনের কথা খুলে বলার আহ্বান করেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের সাবলীল উত্তর দেন এবং তীব্র গরমেও দূর দূরান্ত থেকে পরিবেশকগণ ফ্যাক্টরি প্রাঙ্গণে উপস্থিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আমরা আপনাদেরকে এখানে নিয়ে আসার প্রধান উদ্দেশ্য, আমাদের সার্বিক কার্যক্রম সরাসরি প্রত্যক্ষ করানো। ভবিষ্যতে কোন বিনোদন কেন্দ্র অথবা সমুদ্র সৈকতে পরিবেশক সম্মেলন করা হবে বলে জানান তিনি।

সম্মেলনে বিগত বছরের পর্যালোচনা ও সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, কোম্পানি শুরুর পরের দুই বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ সনে ইউকে বাংলা ফিডের মার্কেট গ্রোথ ছিল ৭২ শতাংশ। এক ইন্ডাস্ট্রিজর স্ট্যান্ডার্ড গ্রোথ রেট ১৫-২০%, সুতরাং আমাদের অর্জিত গ্রোথ রেটও স্বাভাবিক গতিতে চলে আসবে। কিন্তু অতি অল্প সময়ে উল্লেখিত গ্রোথ অর্জন সম্ভব হয়েছে কেবল সম্মানিত পরিবেশক ও খামারিদের জন্য। এ সময় তিনি সবসময়ের মতো ভবিষ্যতেও কোম্পানিকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য পরিবেশকবৃন্দকে আহ্বান জানান।

সম্মেলনে মধ্যাহ্ণ ভোজনের আগে আকর্ষণীয়  র‌্যাফেল ড্র’র আয়োজন করা হয় এবং এতে প্রথম পুরষ্কার ১২ (সিএফটি ফ্রিজ) জিতে নেন লালমনিরহাট থেকে আগত গালিব পোল্ট্রির স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম গোলাপ। মধ্যাহ্ণ ভোজ শেষে পরিবেশকরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক পরিভ্রমণ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউ-কে বাংলা ফিড-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মো. গোলাম রসূল। সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন সুমাইয়া মজুমদার জেমি।

উল্লেখ্য, ‘নির্ভরতা-প্রতিটি দানায়’ স্লোগান নিয়ে ২০১৯ সনের মার্চ মাসে যাত্রা শুরু করা ইউ-কে বাংলা এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড খুব স্বল্প সময়ে খামারিদের মাঝে নির্ভরতার জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। কোম্পানিটি ব্রয়লার, লেয়ার এবং সোনালী ফিড উৎপাদন ও  বাজারজাত করছে এবং খুব শীঘ্রই মাছের ভাসমান ফিড বাজারজাত করবে।

This post has already been read 3692 times!