সোমবার , অক্টোবর ১৪ ২০২৪

একদল স্বপ্নবাজ তরুনের “উই হ্যাভ এন আইডিয়া ও সেইফ ব্রয়লারের গল্প।”

নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ) : বেকারত্ব যেখানে দিন দিন বেড়েই চলছে, চাকরির বাজারে যখন আকাশ ছোঁয়া প্রতিযোগিতা কিংবা চাকরি না পেয়ে যেখানে লাখো তরুণর হতাশায় মগ্ন, জানেনা তার অজানা ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিভিন্ন অনুষদের একদল স্বপ্নবাজ তরুণ তখন নতুন কিছু করার চিন্তায় মগ্ন। স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার স্বপ্ন তাদের চোখে। সেই স্বপ্ন থেকে সেদিন তারা গড়ে তুলে ‘উই হ্যাভ অ্যান আইডিয়া’ (আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান) নামে একটি সংগঠন। কল্যাণময় সুদ মুক্ত অর্থনীতিকে আদর্শ ধারণ করে সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি।

কি দিয়ে শুরু করবে? কিভাবে শুরু করবে? কোথায় শুরু করবে? এমন কতগুলো প্রশ্ন যখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো তখন তারা নিজেদের মধ্যে কয়েকটা ছোট টীম করে বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে এনালাইসিস করছিলো, এরমধ্যে- ফেব্রিক্স, সো-পিসের স্টল, কফি স্টল এগুলো নিয়ে কাজ করে। একটা পর্যায়ে তারা নবীনদের ভর্তি পরীক্ষার দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি “কফি স্টল” দিয়ে তাদের পথচলা শুরু করেন। পরবর্তীতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্টগেট এলাকায় নিরাপদ মাশরুম প্রজেক্ট শুরু করেন। মাশরুম দিয়ে শুরুটা খরাপ ছিলো না পরবর্তীতে এই মাশরুম প্রজেক্টকে আরো বড় পরিসরে করার জন্য তারা সুতিয়াখালিতে একটা ফার্ম ভাড়া নেয় পাশাপাশি টার্কি প্রজেক্ট পরিচালনা করেন। বিভিন্ন কারণে তাদের ওই দুটি প্রজেক্ট সফল হয়নি।

পরবর্তীতে পোল্ট্রি মুরগির দিকে নজর দেন তারা। বর্তমানে তাঁরা মাসে ৩-৪ হাজার নিরাপদ ব্রয়লার উৎপাদন করছেন। যা স্থানীয় ময়মনসিংহ শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আউটলেট ও অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। ভবিষ্যতে আরো বৃহৎ পরিসর ও কোম্পানি প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।

বর্তমানে বাংলাদেশে আমিষের একটি বড় অংশ পূরণ হয় ব্রয়লার মুরগি দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ডাইনিং থেকে শুরু করে নামীদামী রেস্টুরেন্ট, মেস বাসা বাড়িতে ব্রয়লার মুরগি মেন্যুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ফাস্টফুড এবং রেস্টুরেন্টেও ব্রয়লারের বিভিন্ন পণ্য আজ সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছে।

সমস্যার  বিষয় হলো নিত্যদিন উপভোগ্য এই মুরগির মাংস কতটুকু নিরাপদ এ প্রশ্ন বেশ কয়েক বছর ধরে বেশ আলোচিত বিষয়। অনেক খামারি না বুঝেই নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক ও সিনথেটিক মেডিসিন ব্যবহারের ফলে প্রশ্ন উঠেছে এসব মুরগি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা নিরাপদ। তবে আশার দিক হলো, এ খাতের উদ্যোক্তারা বিষয়টি নিয়ে ইদানিং বেশ সজাগ। মানুষের খাবার টেবিলে নিরাপদ ব্রয়লার মাংস তুলে দেয়ার জন্য করছেন আপ্রান চেষ্টা।

তাই, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে উই হ্যাভ অ্যান আইডিয়া টিম পরীক্ষামূলক ভাবে নিরাপদ ব্রয়লার উৎপাদন শুরু করে। দীর্ঘ চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন ও বিপণন করার সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। বর্তমানে সংগঠনটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের মোট ১৯ জন সদস্য রয়েছেন।

উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে জুলাই ২০১৮ তে বাণিজ্যিকভাবে ‘দেখেই বিশ্বাস’ স্লোগানকে সামনে রেখে নিরাপদ ব্রয়লার নামে উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করে। মাস জুড়ে নিরাপদ ব্রয়লার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ ত্রিশালের কাজীর শিমলা দেওয়ানিয়া বাড়িতে নিজস্ব সেইফ ব্রয়লার ফার্ম (ট্রেড লাইসেন্স নং-৯৬০) উদ্বোধনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। তাদের উৎপাদিত এই নিরাপদ ব্রয়লার বর্তমানে বাকৃবির কে. আর মার্কেট এবং মিন্টু কলেজের বিপরীত পাশে অবস্থিত শাখায় পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহাদী হাসান রাতুল বলেন, “প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া সরাসরি প্রদর্শন করার সুযোগ দিয়ে থাকে। উৎপাদনের কোন ধাপেই আমরা কোন অ্যান্টিবায়োটিক ও সিনথেটিক মেডিসিন ব্যবহার করি না। উৎপাদনের প্রত্যেক ধাপে আমরা বায়োসিকিউরিটি যথাযথভাবে অনুসরণ করি। নিজস্ব রেশনে উৎপাদিত ফিড ব্যবহার করা হয় ফলে নিরাপদ ব্রয়লার উৎপাদন থাকে আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। তাই উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণরূপে অবগত এবং ক্রেতাদেরকে পণ্যের মান সম্পর্কে ১০০% নিশ্চয়তা প্রদান করছি।”

প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো. আহসান হাবীব বলেন, “আমরা তৈরি করেছি সম্পূর্ণ মধ্যস্বত্বভোগী বিহীন এক অনন্য বাজার ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে আমরা সক্ষম হয়েছি ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে তাদের হাতে এক নিরাপদ খাদ্য তুলে দিতে। আমাদের উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত প্রত্যেক ধাপে আমাদের নিজস্ব সদস্যরা যুক্ত আছে।”

উই হ্যাভ অ্যান আইডিয়া টিমের অন্য সদস্যরা বলেন, বর্তমানে চাকরির পাওয়া সোনার হরিণ হয়ে গেছে। এজন্য উদ্যোক্তা হতে  আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজে স্বাবলম্বী হতে হবে পাশাপাশি অন্যের চাকরির ব্যবস্থাও করতে হবে। তবেই এগিয়ে যাবে দেশ। ঘটবে বেকারত্বের অবসান। তবে মনে রাখতে হবে এপথ দূর থেকে যতটা সুন্দর ও মসৃণ বাস্তবে খুবই বন্ধুর। শুনতে হবে অনেক কটুবাক্য, নিরুৎসাহিত হবার মতো অনেক কিছু সামনে আসবে কিন্তু সেগুলোতে কর্ণপাত করা যাবে না।

This post has already been read 5289 times!

Check Also

সাংবাদিক থেকে কৃষি উদ্যোক্তা একজন শাহজাহান শাহীম

আব্দুল্লাহ আল মাহাদী : বাংলাদেশের অর্গানিক কৃষি উদ্যোক্তাদের মধ্যে শাহজাহান শাহীম এক অনন্য ও সুপরিচিত …