Thursday 28th of March 2024
Home / ফসল / বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষক ভাইদের করণীয়

বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষক ভাইদের করণীয়

Published at আগস্ট ২২, ২০১৭

Farmers planting seedlings of rice paddy in Kaliganj in Gazipur,ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে প্রতি বছরই দেশের কোথাও না কোথাও কম বেশি বন্যা দেখা দেয়। কখনও কখনও আগাম বন্যার কারণে মাঠের বোরো, আউশ, পাট, রোপা আমন বীজতলা, বোনা আমন ও শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। আবার কখনও দেখা দেয় ঢল বন্যা কখনও নাবি বন্যা। হঠাৎ বন্যা মারাত্মক আকার ধারণ করলে মাঠ ফসল ছাড়াও ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিরোধ-প্রতিকার করা সম্ভব না হলেও কিছু বিশেষ প্রযুক্তি পদ্ধতি অনুসরণ করলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেয়া যায়। কৃষি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বন্যায় ক্ষতিগস্ত কৃষকের করণীয় কৌশল সম্পর্কে কিছু কথা তুলে ধরা হলো:

০১. বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বা আংশিক হয়েছে এমন জমির ক্ষেত্রে-

ক. বন্যার পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা, পলি, বালি এবং আবর্জনা যত দ্রুত সম্ভব পরিষ্কার করতে হবে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ৫ থেকে ৭ দিন কাদাযুক্ত ধান গাছ পরিষ্কার পানি দিয়ে প্রয়োজনে স্প্রে মেশিন দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে;

খ. বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই সার প্রয়োগ করা ঠিক না, এতে ধান গাছ পচে যেতে পারে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ১০ দিন পর ধানের চারায় নতুন পাতা গজানো শুরু হলে বিঘাপ্রতি ৮ কেজি ইউরিয়া ও ৮ কেজি পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে;

০২. উঁচু জমিতে যেখানে বন্যার পানি উঠেনি সেখানে রোপণকৃত বাড়ন্ত আমন ধানের গাছ (রোপণের ৩০ থেকে ৪০ দিন পর) থেকে ২ থেকে ৩টি কুশি রেখে বাকি কুশি সযত্নে শিকড়সহ তুলে নিয়ে অনতিবিলম্বে অন্য ক্ষেতে রোপণ করা যেতে পারে;

০৩. যেসব এলাকায় বন্যায় উঁচু জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বীজতলা করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে ভাসমান অথবা দাপোগ বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করা যেতে পারে;

০৪. বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ব্রি উদ্ভাবিত আলোক সংবেদনশীল উফশী জাত যেমন- বিআর-

৫, বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৫৪ এবং নাইজারশাইলসহ স্থানীয় জাতগুলো রোপণ করতে হবে। এছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন জাত ব্রি ধান৫৭ ও ব্রি ধান৬২ রোপণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বীজতলা করা যাবে।

ক. উল্লিখিত জাতগুলো নাবিতে রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গোছায় চারার সংখ্যা ৪ থেকে ৫টি এবং রোপণ দূরত্ব ২০×১৫ সেন্টিমিটিার করতে হবে;

খ. বিলম্বে রোপণের ফলে দ্রুত কুঁশি উৎপাদনের জন্য সুপারিশকৃত টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক ও ইউরিয়া সারের ৩ ভাগের ২ ভাগ জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া রোপণের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।

০৫. যেসব এলাকায় পুনরায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম (উঁচু ও মধ্যম উঁচু) সেসব জমিতে অংকুরিত বীজ সরাসরি জমিতে ছিটিয়ে বপন করা যায়। সেক্ষেত্রে রোপণ পদ্ধতির চেয়ে ৫ থেকে ৭ দিন আগে ফলন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে;

০৬. বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া ধান গাছের যাবতীয় পরিচর্যা যেমন- আগাছা দমন, পোকামাকড় ও রোগাক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা, সুষম পরিমাণে সার প্রয়োগ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে;

০৭. বন্যা পরবর্তীতে চারা গাছ সম্পূর্ণভাবে মাটিতে লেগে যাওয়ার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ৬০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে।

০৮. বন্যার পরবর্তী সময়ে ধান গাছে মাজরা, বাদামি ও সাদা পিঠ গাছ ফড়িং, পাতা মোড়ানো এবং পামরি পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য পোকা বিশেষে হাত জাল, পার্চিং এবং প্রয়োজন হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে;

০৯. দেশের উত্তরাঞ্চলে আগাম শীত আসার কারণে ১৫ সেপ্টেম্বর এবং মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে ২০ সেপ্টেম্বরের পর আমন ধান রোপণ করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে আগাম রবি ফসলের আবাদ করা যায়।

আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার কাছের কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন। তাছাড়া কৃষিবিষয়ক তথ্য পেতে যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে কৃষি কল সেন্টারে ১৬১২৩ নম্বরে ফোন করুন।

তথ্য সূত্র : বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, জয়দেবপুর।

This post has already been read 4701 times!