
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মৎস্য ও পুষ্টি খাতের এক উজ্জ্বল নাম পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির এবার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পরম সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। নেপালের মৎস্য খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান “নেপাল ফিশারিজ সোসাইটি” তাঁকে আজীবন সদস্যপদে (লাইফটাইম মেম্বারশিপ) সম্মানিত করেছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর ২০২৫) নেপাল ফিশারিজ সোসাইটির এক বিশেষ সভায় এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
নেপাল ফিশারিজ সোসাইটি নেপাল তথা উপমহাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিশারিজ সেক্টরের গবেষণা, পুষ্টি এবং কালচার উন্নয়নে কাজ করে থাকে। সাধারণত এই মর্যাদা দেওয়া হয় সেইসব বিশেষজ্ঞদের, যারা নিজ দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মৎস্য খাতের উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রাখেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে নেপালের ফিশারিজ সেক্টরে পেশাগত ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান এবং সেখানে অ্যাকোয়া নিউট্রিশন ও কালচার উন্নয়নে সফল ভূমিকা রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মান পান সাইফি নাসির।

টাংগাইলের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া সাইফি নাসিরের শিক্ষাজীবনও অনুকরণীয়। তিনি ২০০০ সালে টাংগাইলের ঐতিহ্যবাহী বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০২ সালে সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হয়ে ২০০৯ সালে অনার্স এবং ২০১১ সালে মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন যথাক্রমে সপ্তম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
একই বছর তিনি কর্মজীবন শুরু করেন এসএমএস ফিডস লিমিটেডে। পরবর্তীতে ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্যারাগন গ্রুপে যশোর ও চট্টগ্রামে সফলভাবে ফ্যাক্টরি ও ফিল্ড উভয় পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে তিনি আর আর পি এগ্রো ফার্মসে ফিসারিজ বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন।
২০১৯ সালে থাইল্যান্ডের Kasetsart University-এর অধীনে Department of Fisheries থেকে Aqua Feedmill and Nutrition বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করে কৃতিত্বের সঙ্গে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। পরে তিনি ২০২১ সালে নেপালের বিরাট ফিড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডে অ্যাকোয়া নিউট্রিশন ও অ্যাকোয়াকালচার এক্সপার্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশে ফিরে এসে ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত তিনি আর আর পি এগ্রো ফার্মসে অ্যাকোয়া হেড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি আর বি এগ্রো লিমিটেড (কেজিএস গ্রুপ)-এর এজিএম, সেলস অ্যান্ড টেকনিক্যাল (ফিশ ফিড) হিসেবে ঢাকায় দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই কন্যা সন্তানের জনক। নিজের অর্জন প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির বলেন—
“বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার মৎস্যখাতকে আরও টেকসই ও বিজ্ঞানভিত্তিক করতে কাজ করাই আমার লক্ষ্য। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।”
উল্লেখ্য,
নেপাল ফিশারিজ সোসাইটি (Nepal Fisheries Society) ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি অরাজনৈতিক ও গবেষণাভিত্তিক সংগঠন, যা নেপালের জলজ সম্পদ, মৎস্য উৎপাদন, গবেষণা, প্রশিক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থাটি এশিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফিশারিজ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সহযোগিতা করে নেপালের ফিশারিজ খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করে। গবেষণা, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও মানবসম্পদ উন্নয়নে এই সংস্থার অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
এই সম্মাননা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের দক্ষতা ও অবদান আজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত ও সম্মানিত।

