বৃহস্পতিবার , নভেম্বর ১৪ ২০২৪

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে রাজশাহীর কৃষকদের

রাজশাহী সংবাদদাতা: গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারাদেশে বিনামূল্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ, রাসায়নিক সার সহ আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতেই রাজশাহীতে চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহীর কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ ব্যাপক সফলতা এসেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, পেঁয়াজ এমন একটি ফসল যা কৃষক তার ঘরে রেখে প্রয়োজনে বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অন্যান্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধিসহ পেঁয়াজের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব। কৃষি মন্ত্রণালয় হতে প্রণোদনার আওতায় গত বছরের তুলনায় এ বছরে প্রনোদনার আওতা প্রায় ২ গুণ বাড়িয়ে রাজশাহী জেলায় মোট ৮৫০০ হাজার জন কৃষককে ১ কেজি করে মোট ৮৫০০ কেজি এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ প্রদান করা হয়েছে। যা দিয়ে মোট ১২-১৪ হাজার বিঘা জমিতে এই পেঁয়াজ চাষ করা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ কিছুটা কষ্টসাধ্য। তবে বেশ লাভজনক। কৃষকরা বর্তমানে এর সুফল পাচ্ছে। গত তিন বছর যাবত তাদের পাশে থেকে সরকারি প্রনোদণাসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করেছি। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেই ছিল পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া। আমরা তাতে সফলকাম হয়েছি।

এন-৫৩ জাতের এই পেঁয়াজ ৬ থেকে ৭ টিতেই ১ কেজি হয়, সে হিসেবে বিঘা প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ মন ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বিঘায় ১০০ মন উৎপাদন এবং প্রতি মনের দাম ৩০০০ টাকা ধরলে, এ বছর প্রায় ৩৬০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বিক্রয় সম্ভব হবে। গাছসহ এই পেঁয়াজ বিক্রয় করতে পেরে চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এবং তাদের দেখে অন্যান্য কৃষকেরা এই জাতের পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বাজারে যখন শীতকালে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকে, তখন এন-৫৩ জাতের এই পেঁয়াজ মানুষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে ।

পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার নামোপাড়া গ্রামের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন , তার ৩ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা এবং প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাতা ২০ টাকা দরে বিক্রি শুরু করেছেন। এতে তিনি অনেক  আনন্দিত।

বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষী মামরুল ইসলাম বলেন  তার ২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। এতে  অনেক লাভবান হবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন এক বিঘায় ৩৫০০০-৪০০০০ টাকা খরচ করে কয়েক লাখ টাকা আয় সম্ভব। অল্প খরচে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে আগামীতেও এই পেঁয়াজ আবাদ অব্যাহত রাখবো।

রাজশাহীর জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার, কৃষিবিদ মোসা: উম্মে সালমা বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে বীজ বপণ করে ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয়। ৯০ দিনের মধ্যে এই জাতের পেঁয়াজ সংগ্রহ করা সম্ভব। এই পেঁয়াজ চাষে কৃষকেরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ হিল কাফি বলেন, উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় শতভাগ শীতকালে উৎপাদিত হয়। উৎপাদন ও আমদানি বিবেচনায় এদেশের বাৎসরিক পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ টন। এই ৩৫ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে মোট দেশজ উৎপাদন প্রায় ২৪ লাখ টন হলেও সংগ্রহোত্তর ২৫-৩০% অপচয়ের ফলে ব্যবহার উপযোগী উৎপাদন দাঁড়ায় প্রায় ১৭ লাখ টন। এই ১১-১২ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি ছিল, যা  বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়েছিল। তাই, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে আমাদের ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল, চর ও বরেন্দ্র এলকার উচু জমিতে। ইক্ষু, আদা, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা ও মুখিকচুর সাথী ফসল হিসেবেও এই পেঁয়াজ চাষের যথেষ্ট সম্ভবনা আছে। এছাড়াও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠা  ছাদ বাগান অথবা বসতবাড়ির আঙ্গিনায় এই ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা আছে।

তিনি আরো বলেন, উচ্চফলনশীল জাত এবং উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ পদ্ধতি গ্রহণ, পেঁয়াজ চাষের এলাকা সম্প্রসারণ : আন্ত ফসল হিসেবে এবং বসতবাড়ির আঙিনায় গ্রীষ্ম ও শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ :বাজার তদারকি এবং উৎপাদন ভরা মৌসুমে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি উপকরণে ভর্তুকি এবং আরোও ঋণ সুবিধার সম্প্রসারণ, গবেষণায় আরোও  বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং পেয়াজের জন্য স্পেশাল সংরক্ষণাগার তৈরি, উপযুক্ত তালিকা তৈরি করে উন্নত প্রযুক্তির বিষয়ে কৃষকদের আরো প্রশিক্ষণ প্রদান হতে পারে বাংলাদেশের পেঁয়াজ স্বয়ংস্পূর্ণতার মাইল ফলক।

This post has already been read 1961 times!

Check Also

জলঢাকায় সোনালী ধানের শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

বিধান চন্দ্র রায় (নীলফামারী) : নীলফামারীর জলঢাকায় মাঠের যে দিকে চোখ যায়, সেদিকেই সবুজের সমারোহ। …