Saturday 27th of April 2024
Home / ফসল / করলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে খুলনার কৃষকদের

করলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে খুলনার কৃষকদের

Published at অক্টোবর ৩১, ২০২৩

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনা জেলার বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের বয়েরডাঙ্গা গ্রামের প্রিতিশ মন্ডল ইউনিয়ন সহায়িকা ভিক্তিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের করলার আবাদ করেছেন । একই পদ্ধতিতে করলার আবাদ করছেন সুদিপ্ত মন্ডলসহ গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের ২০ জন কৃষক । করলার বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষকরা প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৩০মন করলার ফলন পেয়ে খুশি। তাদের ঘেরের দু’পাশে তাকালেই চোখে পড়ে মাচা দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা করলা গাছ। গাছে ঝুলন্ত করলা আর মাচার ওপর সবুজের উপস্থিতি। প্রায় পুরো ঘেরের পাড় জুড়ে করলার আবাদ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় এখানকার সবজিগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা বেশি বেশি করলা উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। সারা বছর ফলন হয় আর বিক্রি করা যায় বলে লাভও বেশি। সে কারণে তাদের হাইব্রিড জাতের করলার আবাদে বাম্পার ফলনে ডুমুরিয়া,দাকোপ,বটিয়াঘাটার কৃষক করলা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর(জিকেবিএসপি) এসআরডিআই(অংঙ্গ) কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের ইউনিয়ন সহায়িকা ভিক্তিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের করলার আবাদ সম্প্রসারন করেন । তারই ধারাবহিকতায় বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের মাটি ও সার সহায়িকা ২০টি এডাল্টিভ ট্রায়াল প্লটের জন্য কৃষক বাছাই করেন। প্রকল্পের আওতায় ঘেরের পাড়ের পতিত জমিতে এডাল্টিভ ট্রায়াল প্লটের করলা আবাদ করা হয় । এডাল্টিভ ট্রায়াল প্লটের কৃষকদের করলা চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুতে এবং শ্রমিকদের পারিশ্রমিক প্রদান , বিনামুল্যে সার হাইব্রিড জাতের করলার বীজ সহায়তা দেয়া হয়। কৃষকরা এ সহায়তা পেয়ে ঘরের পাড়ের পতিত জমিতে করলা চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

বয়েরডাঙ্গা গ্রামের প্রিতিশ মন্ডল জানান, একবার গাছ লাগালে চার মাস ধারাবাহিকভাবে ফলন হয়। প্রতি সপ্তাহে বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ মণ করলা ধরে। প্রতি মণ করলা পাইকারি বিক্রি কওে ভালো টাকা আয় হয়। সে হিসাবে মাসে এক বিঘা জমিতে  লাখ টাকার করলা বিক্রি হয়। করলার বাম্পার ফলনে তার পরিবারে ফিরেছে বারতি আয় ।

গঙ্গারামপুর গ্রামের কৃষক সুদিপ্ত মন্ডল জানান, জিকেবিএসপি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় ঘেরের দুই বিঘা জমিতে করলা চাষ করেছেন। করলা চাহিদা বেশি থাকায় এটা পুরো মৌসুম ধরেই বিক্রি করা যায়। আমার পরিবারে সচ্ছলতা আসে এই সবজি আবাদে। তিনি আরো বলেন,আমার দেখা দেখি আরো অনেক কৃষক ইউনিয়ন সহায়িকা ভিক্তিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের করলার আবাদ করেছেন।

দাকোপ উপজেলার করলা চাষি সুজিত বলেন, আমি দীর্ঘদিন ঘেওে শাক সবজির চাষাবাদ করি। কৃষিকাজ করেই আমার জীবন জীবিকা চলে। এ বছর জিকেবিএসপি প্রকল্পের এডাল্টিভ ট্রায়াল প্লটের মাধ্যমে আমি নিজের ২৫ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড জাতের করলা চাষ করি। ৩০ দিন পরে ফলন আসে। প্রথম দিকে স্থানীয় বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। বর্তমানে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। প্রতি সপ্তাহে ২দিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ কেজি করলা বিক্রি করছি। এই পর্যন্ত ৯০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছি। এই মৌসুমে আরও ৪০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করবো বলে আশা করছি।

গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর (জিকেবিএসপি) কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন,করলা একটি অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। করলার রস শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। করলা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। করলা হজম প্রক্রিয়ায় গতি বাড়ায়। আমরা নিরাপদ ও বিষমুক্ত করলা উৎপাদনে এডাল্টিভ ট্রায়াল প্লটের মাধ্যমে করলা চাষিদের সয়াহতার পাশাপাশী নিয়মিত প্রশিক্ষন ও সুপরামর্শ দিয়ে আসছি। ক্ষতিকর পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার শিখিয়েছি। অনান্য সবজির পাশাপাশি করলা চাষে ভালো দাম পেয়ে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন করলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। করলা চাষে লাভবান হয়ে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। জিকেবিএসপি(১ম সংশোধনী) প্রকল্পের পক্ষ থেকে মাধ্যমে আমরা সব সময় কৃষকদের মাটি পরিক্ষা,সার সহায়িকা দিয়ে সঙ্গে আছি। শুধু করলা,টমেটোই নয় আমরা নিয়মিত শীতকালীন সবজি চাষে তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় কৃষকদের কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়। আমাদের প্রকল্প থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশী বিনা মুল্যে বীজ,সার এবং মাটি ও সার সহায়িকা দিয়ে কৃষকদের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি।এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানব সম্পাদে পরিনত করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, করলা কুমড়া পরিবারভূক্ত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি। স্বাদে তিক্ত হলেও দেশের সকলের নিকট এটি প্রিয় সবজি হিসেবে বিবেচিত। করলার অনেক ঔষধি গুণ আছে। এর রস বহুমুত্র, চর্মরোগ, বাত এবং হাঁপানী রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য করলায় শতকরা ৮৩-৯২ ভাগ পানি, ৪.০-১০.৫ ভাগ শর্করা, ১.৫-২.০ ভাগ আমিষ, ০.২-১.০ ভাগ তেল এবং ০.৮-১.৭ ভাগ আঁশ আছে। অন্যান্য কুমড়া জাতীয় সবজির চাইতে করলায় অধিক পরিমাণে খনিজ ও খাদ্যপ্রাণ রয়েছে। উচ্চ ফলনশীল জাত যথাযথভাবে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩০-৪৫ টন (১২০-১৮০ কেজি/শতাংশ) পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

This post has already been read 1009 times!