Friday 29th of March 2024
Home / ফসল / দেশে প্রথম বেসরকারি দুটি ইনব্রীড গমের জাতের উদ্ভাবন ও অনুমোদন পেলো এসিআই

দেশে প্রথম বেসরকারি দুটি ইনব্রীড গমের জাতের উদ্ভাবন ও অনুমোদন পেলো এসিআই

Published at জানুয়ারি ১, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল ইনব্রীড গমের জাতের উদ্ভাবন এবং সেগুলো বাজারজাতকরণের অনুমোদন পেয়েছে এসিআই লিমিটেড। গত সোমবার (২৬ ডিসেম্বর, ২০২২) কৃষি মন্ত্রনালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৮ তম সভায় জাতীয় বীজ বোর্ডের সভাপতি ও কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসিআই লি. কর্তৃক উদ্ভাবিত দুইটি নতুন গমের জাত এসিআই গম১এসিআই গম২ নামে অনুমোদনের মাধ্যমে অবমুক্ত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এসিআই এগ্রিবিজনেস প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে গম বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় এবং আমাদের দেশে যে গম উৎপাদন হয় তার পরিমান খুব বেশি না, বছরে প্রায় মাত্র ১ মিলিয়ন টন। আমাদের দেশে গমের আবাদ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো- প্রচলিত জাতগুলোর ফলন কম; যার ফলে ধানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না গম। যেখানে দেশে বর্তমানে প্রচলিত জাতগুলোর গড় ফলন প্রায় ৩ টন; সেখানে আমাদের উদ্ভাবিত গমের নতুন দুটি জাতের (এসিআই গম১এসিআই গম২) হেক্টরপ্রতি গড় ফলন সাড়ে ৪ থেকে ৬ টন। সেক্ষেত্রে আমরা মার্কেট প্রাইস এডজাস্ট করি তবে, ধানের সাথে টিকে থাকতে পারবে এবং লাভজনক গম চাষ সম্ভব হবে।

“আমাদের প্রচলিত জাতগুলোতে গ্লুটেন এর পরিমাণ কম হওয়ায় প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়া, কানাডা থেকে বেশি দামে গম আমদানি করতে হয়। আমাদের উদ্ভাবিত গমের জাত দুটিতে গ্লুটেন পরিমান খুবই বেশি যেটি প্রায় ৩৩% এবং প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ১৩%। অতএব, গমের নতুন জাত দুটি (এসিআই গম১এসিআই গম২) মানুষের কাছে প্রচন্ড রকমের গ্রহণযোগ্য হবে। ফলে কৃষকগণ জাত দুটি চাষে ‍আগ্রহী হবেন এবং লাভবান হবেন। যদি গমগুলো চাষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেন; তবে আমাদের গম আমদানি অনেক কমে যাবে এবং বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে আমার বিশ্বাস” -যোগ করেন আনসারী।

এসিআই গম১ এ উচ্চ ফলনশীল গমের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ জাতের শীষ লম্বা ও Awn মধ্যম আকার হয়ে থাকে। গাছের উচ্চতা ১০০ থেকে ১০৫ সে.মি. এবং প্রতি গাছে টিলার এর সংখ্যা ৬-৭ টি। গাছের পাতা চওড়া ও পাতার রঙ গাঢ় সবুজ। এর শীষের দৈর্ঘ্য গড়ে ১৩.৩ সে.মি.। প্রতিটি শীষে দানার সংখ্যা গড়ে ৫১টি। এই জাতের দানার রং অম্বর, চকচকে ও আকারে বড় এবং ১০০০ পুষ্ট দানার ওজন গড়ে ৬৬.০ গ্রাম। এর পাশাপাশি জাতটির Gluten এর পরিমান ৩২.০২% এবং প্রোটিনের পরিমান ১৩.২%। এর জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন। প্রস্তাবিত জাতটি বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির ফলন পরীক্ষায় দশটি অঞ্চলেই বারি গম৩৩ এর চেয়ে ১০% এর বেশি ফলন পাওয়া গেছে। এ জাতের হেক্টরে গড় ফলন ৪.১৯ টন। তবে উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যাবস্থাপনা করলে এ জাতটি হেক্টরে ৬.৩৬ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এসিআই গম১ এ রোগ বালাই ও পোকামাকড় এর আক্রমন প্রচলিত জাতের চেয়ে কম হয়।

এসিআই গম২ এ উচ্চ ফলনশীল গমের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ জাতের শীষ লম্বা ও Awn মধ্যম আকার হয়ে থাকে। গাছের উচ্চতা ৯৫ থেকে ১০০ সে.মি. এবং প্রতি গাছে টিলার এর সংখ্যা ৫-৬ টি। গাছের পাতা চওড়া ও পাতার রঙ গাঢ় সবুজ। এর শীষের দৈর্ঘ্য গড়ে ১৩.২ সে.মি.। প্রতিটি শীষে দানার সংখ্যা গড়ে ৫৫টি। এই জাতের দানার রং অম্বর, চকচকে ও আকারে বড় এবং ১০০০ পুষ্ট দানার ওজন গড়ে ৬৪.০ গ্রাম। এর পাশাপাশি জাতটির Gluten এর পরিমান ২৮.৯% এবং প্রোটিনের পরিমান ১২.৯%। এর জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন। প্রস্তাবিত জাতটি বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির ফলন পরীক্ষায় দশটি অঞ্চলেই বারি গম৩৩ এর চেয়ে ১০% এর বেশি ফলন পাওয়া গেছে। এ জাতের হেক্টরে গড় ফলন ৪.৩০ টন। তবে উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যাবস্থাপনা করলে এ জাতটি হেক্টরে ৫.৪৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এসিআই গম২ এ রোগ বালাই ও পোকামাকড় এর আক্রমন প্রচলিত জাতের চেয়ে কম হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে গমের হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৩.০৯ মেট্রিক টন হওয়া সত্ত্বেও মোট চাহিদা পূরণ করতে প্রতি বছর গড়ে ৬.০১ মিলিয়ন মেট্রিক টন গম আমদানি করতে হয়। যার একটি বিশাল অংশ বেকারী শিল্পে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এসিআই গম১ ও এসিআই গম২ জাত দুইটি বেকারি শিপ্লের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা এই দুইটি জাত চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে এবং গম আমদানীর ক্ষেত্রে বৈদেশিক নির্ভশীলতা হ্রাস পাবে, বলে জানায়, জানায় এসিআই।

This post has already been read 2074 times!