মঙ্গলবার , অক্টোবর ২২ ২০২৪

৩ বছরের মধ্যে  ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হবে -কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে ৩ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন না কমিয়েই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ টন তেল উৎপাদন করা হবে, যা চাহিদার শতকরা ৪০ ভাগ। এর ফলে তেল আমদানিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার (৭ জুন) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক সভায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ আমদানি করতে হয়। এ বছর দেশে ভোজ্যতেল নিয়ে সংকট চলছে। অনেক বেশি দাম দিয়ে বিদেশ থেকে তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এতে একদিকে ভোক্তাদের কষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ পড়ছে। এ অবস্থায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে আমরা ৩ বছর মেয়াদি এ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

মন্ত্রী আরো বলেন, তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনের মূল সমস্যা হলো ধানসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা চাষ করতে চান না। এছাড়া, আমরা ধানের উৎপাদনও কমাতে চাই না। সেজন্য, আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি আগামী ৩ বছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ টন তেল উৎপাদন করার, যা চাহিদার শতকরা ৪০ ভাগ। এ পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে পেঁয়াজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা সাফল্য অর্জন করেছি। আমদানি নির্ভরতা অনেক কমিয়ে এনেছি। পেঁয়াজের মতো ভোজ্যতেলের উৎপাদনেও  আমরা সফল হবো।

কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মধ্যে সরিষা, তিল, বাদাম,সয়াবিন, সূর্যমুখীসহ তেলজাতীয় ফসলের আবাদ তিনগুণ বৃদ্ধি করে বর্তমানের  ৮ লাখ ৬০ হেক্টর জমি থেকে ২৩ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে উন্নীত করা হবে। তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বর্তমানের ১২ লাখ টন থেকে ২৯ লাখ টনে এবং তেলের উৎপাদন বর্তমানের ৩ লাখ টন থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত করা হবে।

 এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ৩টি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রথমটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বর্তমানে আবাদকৃত টরি-৭, মাঘী, ডুপিসহ স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চফলনশীল সরিষার জাত বিনা-৪, ৯, বারি ১৪, ১৭ প্রভৃতি জাত ছড়িয়ে দেয়া হবে। দ্বিতীয়ত অনাবাদি চরাঞ্চল, উপকূলের লবণাক্ত, হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলকে তেলজাতীয় ফসল চাষের আওতায় আনা হবে। তৃতীয়ত, নতুন শস্যবিন্যাসে স্বল্প জীবনকালের ধানের চাষ করে রোপা আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী সময়ে অতিরিক্ত ফসল হিসাবে সরিষার চাষ করা। এ বিন্যাসে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।

সভায় জানান হয়, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী হতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লাখ টন, যা চাহিদার শতকরা ১২ ভাগ। বাকী ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা আর এবছর প্রথম ১০ মাসে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংস্থাপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

This post has already been read 2514 times!

Check Also

ইতালিতে সম্মান সূচক পুরষ্কার পেলেন সিকৃবির ড. ইব্রাহিম খলিল

সিকৃবি সংবাদদাতা: সম্প্রতি ইতালির ইউনির্ভাসিটি অব উদিন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্নকারী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য …