Friday 26th of April 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / কাঁচামালের বাড়তি দামে বিপাকে কৃষিযন্ত্র তৈরির দেশীয় উদ্যোক্তাগণ

কাঁচামালের বাড়তি দামে বিপাকে কৃষিযন্ত্র তৈরির দেশীয় উদ্যোক্তাগণ

Published at মার্চ ২২, ২০২২

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘এগ্রিকালচার মেকানাইজেশন ইন বাংলাদেশ- দ্যা ফিউচার’ শীর্ষক দু’দিন ব্যাপী কর্মশালার শেষ দিনে এক প্যানেল ডিসকাশনে দেশীয় কৃষি যন্ত্র তৈরির উদ্যোক্তাগণ।

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন কৃষিযন্ত্র তৈরির দেশীয় উদ্যোক্তারা। লোহা ও রডের দাম অত্যাধিক বেড়ে যাওয়াতে অনেকেই ফ্যাক্টরি বন্ধ রেখেছেন। এছাড়াও কৃষিযন্ত্র কৃষিখাতের অংশ হওয়া সত্বেও ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাই দেশে কৃষিযন্ত্র তৈরিতে ভর্তুকি এবং সহজ শর্তে ঋণ চেয়েছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘এগ্রিকালচার মেকানাইজেশন ইন বাংলাদেশ- দ্যা ফিউচার’ শীর্ষক দু’দিন ব্যাপী কর্মশালার শেষ দিনে প্যানেল ডিসকাশনে দেশীয় উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন। সেজন্য একটি নীতিমালা তৈরির দাবিও জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে খাতটির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থা, প্রচলিত ঋণের সুদ হার কমানো ও দেশেই যেসব যন্ত্র উৎপাদন করা সম্ভব বাইরে থেকে সেসব কৃষিযন্ত্র আমদানি বন্ধ করার দাবিও জানানো হয়েছে।

ইউএসএআইডির অর্থায়নে ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ সিরিয়াল সিস্টেম ইনিশিয়েটিভ ফর সাউথ এশিয়া- মেকানাইজেশন এন্ড এক্সটেনশন অ্যাক্টিভিটি (সিসা-এমইএ) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে। সেমিনারের উক্ত সেশনটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)’র  মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আইয়ুব হোসাইন।

আলোচনায় অংশ নেয়া আলিম ইন্ড্রাস্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, পার্টস তৈরি করতে গেলে ক্যাপিটিল মেশিনারি লাগে। এই খাতে সুদ মুক্ত দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিতে হবে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতও কৃষি ভিত্তিক। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১০ থেকে ১৫ বছর মেয়াদী ঋণ প্রয়োজন। আমাদের ওয়ার্কশপে যে ইঞ্জিনিয়ার আছেন বা যারা কাজ করছেন তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে কাচামালের বাজার নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। যখন আমরা কোন একটি টেন্ডারে অংশ নিই তখন একটা প্রাইস ধরি, কিন্তু পরে দাম বেড়ে যায়। এতে আমরা ক্ষতির মুখে পড়ি। সে বিষয়টিও সরকারকে ভাবতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এই সেক্টরে টেকনিল্যাল এডভাইজার প্রয়োজন। কোন একটি যন্ত্র নষ্ট হলে, পেরে না উঠলে, তখন আমরা কোথায় যাবো, কী করবো, কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা। সেজন্য টেকনিক্যাল এডভাইজর খুবই দরকারি। যেসব যন্ত্র দেশে তৈরি করা সম্ভব এবং সক্ষমতা তৈরি হয়ে গেছে সেই সব কৃষিযন্ত্র যেন দেশের বাইরে থেকে আমদানি না করা হয়, সেজন্য নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

বগুড়ার রেজা ইঞ্জিনিয়ার্স এর রেজাউল করিম বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে প্রতিনিয়তই আমাদের পণ্যের দাম বাড়ছে। এটি একটি সমস্যা। অনেকেই খাতটি থেকে সরে যাচ্ছে। এই সেক্টরের উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছেন, সেই ঋণের সুদের হার কমিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। দেশেই এখন পাওয়ার টিলার, সেচ মেশিন উৎপাদন করা সম্ভব। সেজন্য এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন।

যশোরের শিল্পী মেটাল ফাউন্ড্রির সামসুল আলম স্বপন বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য দেশে শিল্প পার্ক নেই। আমাদের শিল্প পার্ক প্রয়োজন। খাতটির উন্নয়নে আমাদের দীর্ঘমেয়দী ঋণ প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশে কোন খনিজ পদার্থ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। লোহার সংকটে অনেক ওয়ার্কশপ এখন বন্ধ। অনেক অর্ডার আছে, কিন্তু মেশিনারি আমরা ডেলিভারি দিতে পারছিনা। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে যে অর্ডার নিয়েছি, সেই মেশিন বানাতে এখন ৮০ হাজার টাকা লাগবে। আমরা কাজ করতে পারছিনা। খাতটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ঋণ প্রয়োজন।

বক্তারা আরো বলেন, কৃষিযন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে দেশীয় প্রস্তুতকারীরা পিছিয়ে পড়ছে। বাইরে থেকে যন্ত্র আমদানি হচ্ছে। এতে উদ্যোক্তারাও আগ্রহ হারাচ্ছে। দেশীয় কৃষিযন্ত্র তৈরিতে ভর্তুকি প্রয়োজন। সেজন্য একটি নীতিমালা এখন সময়ের দাবি।

This post has already been read 1943 times!