Thursday 28th of March 2024
Home / মৎস্য / শিং ও মাগুর মাছ চাষে পানি, রোগ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

শিং ও মাগুর মাছ চাষে পানি, রোগ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

Published at ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০

পানি ব্যবস্থাপনা : শিং ও মাগুর মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রতিদিন নিয়মিত হারে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োগ করায় মাছের মলমুত্র এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট পানিতে পঁচে পানির নাইট্রোজেনঘটিত জৈব পদার্থের উপস্থিতি বেড়ে যায়। ফলে মাছ নানা প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে এবং মাছের মৃত্যুর কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

অনেক সময় অসচেনতাবশত পঁচে যাওয়া খাদ্য উপকরণ মাছের পুকুরে দেয়া হয়। অধিক পঁচে যাওয়া এসব জৈব দ্রব্য পুকুরে দেয়া সমীচীন নয়। কারণ, এতে পুকুরের পানির পরিবেশ নষ্ট করে অক্সিজেন ঘাটতিসহ মাছে উকুনের বংশ বিস্তার ঘটায় এবং এদের আক্রমণে মাছের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। এছাড়াও পুকুরে জৈব উপাদানের বৃদ্ধির কারণে প্লাংঙ্কটনজনিত ব্লুম ঘটতে পারে এবং এক পর্যায়ে প্ল্যাংঙ্কটনের যথাযথ পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এবং প্লাংকটনের অপমৃত্যু ঘটায়। ফলশ্রুতিতে পুকুরের পানির সার্বিক পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে এবং মাছের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়ায়। এরুপ পরিবেশে প্রথমে মাছের খাদ্য গ্রহণ হার কমে যায়, মাছের বৃদ্ধি থেমে যায় এবং এক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে মাছ মারা যায়। এরূপ পরিবেশ যাহাতে না হয় সেজন্যে পানির রং এর অবস্থা অনুযায়ী মাঝেমধ্যে পানি দেয়া যেতে পারে, অথবা পুকুর থেকে কিছু পানি বের করে দিয়ে পুনরায় পানি সংযোগ করা যেতে পারে। শিং ও মাগুর মাছের চাষ নিরাপদ রাখার জন্য সময়ে সময়ে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। পুকুরের পানির পরিবেশ ভাল রাখার জন্য বর্তমানে বাজারে নানা ধরণের জিওলাইট ও অণুজীব নাশক পাওয়া যায়, যাহা প্রয়োগে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।

শিং মাগুর মাছ চাষে ঝুঁকি ও করণীয় সমূহ

শিং ও মাগুর মাছ চাষে ঋতুভিত্তিক কিছু ঝুঁকি থাকে। তাই সঠিক ব্যবস্থাপনা না নিলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি অনেক সময় সমস্ত চাষ ব্যবস্থা হুমকির সম্মূখে পড়তে পারে।

বর্ষাকালীন ঝুঁকি : বর্ষাকালীন অতিবৃষ্টি বা বন্যায় সমস্ত মাছ ভেসে যেতে পারে। হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে পরিপক্ব শিং ও মাগুর পুকুরের পাড় বেয়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে। এ কারণে পুকুরের পাড়ের চারিদিকে বাঁশের বানা বা বেড়া অথবা প্লাস্টিক নেটের সাহায্যে ১.৫ ফুট উচু করে বেষ্টনি দেয়া যেতে পারে।

শুষ্ক মৌসুমের ঝুঁকি: শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে পানির গভীরতা কমে যেতে পারে। এতে পানির তাপমাত্রা বেড়ে পানিতে দ্রবিভূত অক্সিজেন স্বল্পতার সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য পানি সেচের মাধ্যমে পুকুরের পনির গভীরতা বাড়াতে হবে।

শীতকালীন ঝুঁকি: শীতে (১৫ ডি.মস. সে. তাপের নিচে) শিং ও মাগুর মাছ চাষে রোগের প্রাদূর্ভাব বেশি হয়। সেজন্য শীতের ২-৩ মাস শিং ও মাগুর মাছ চাষ না করাই ভালো। তবে এ সময়ে মাছ বা পোনা সংরক্ষণের জন্য প্রতিদিন ভোরে ডিপ টিউবওয়েল -এর পানি দিয়ে পানির তাপমাত্রা বাড়িয়ে রাখা যায়।

ক্ষতিকর গ্যাস: খাদ্যের অবশিষ্টাংশ এবং মাছের মলমূত্রের কারণে পুকুরের তলদেশে ক্ষতিকর গ্যাস জমে বুদবুদের সৃষ্টি করতে পারে এবং পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। পুকুরের তলদেশে জমে থাকা ক্ষতিকর গ্যাস অপসারণের জন্য ২-৩ দিন পর পর দুপুরের সময় পানিতে নেমে তলদেশ আলোড়িত করার ব্যবস্থা করতে হবে। কাজটি হর্রা টেনেও করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। জিওলাইট প্রয়োগেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

মাছের স্বাভাবিক রং না আসা: অধিক ঘনত্বে শিং ও মাগুর মাছ চাষ করলে মাছের গায়ের স্বাভাবিক রং আসে না। এতে ভোক্তার কাছে মাছের গ্রহণ যোগ্যতা কমে যায়, ফলে বাজার দর কম পাওয়া যায়। এ সমস্যা দুর করার জন্য মাছ বাজারজাত করার কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্বে পুকুরের ১/৪ অংশে কচুরিপানা অথবা টোপা পানা দেয়া যেতে পারে। তবে বাজারজাত করার পর কচুরিপানা অপসারণ করে ফেলে দিতে হবে।

মাছ চুরি: এটা একটি সাধারণ সমস্যা বা সামাজিক ঝুঁকি। পুকুরের মাছ বড় হলে এ ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বড় মাছগুলো আহরণ করলে চুরি হওয়ার সম্বাবনা কমে যায়। এ ছাড়াও মাছ চাষিকে সমাজের অন্যদের সাথে উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলতে হবে। উৎপাদিত মাছ থেকে কিছু মাছ পুকুরের পার্শ্বে বসবাসকারীদের মাঝে সৌজন্যমূলুক বিতরণ করতে হবে।

রোগ ও প্রতিকার : সাধারণতঃ শিং ও মাগুর মাছ চাষের পুকুরে তেমন কোন রোগব্যাধি হয় না। তবে শীতে এবং পানির পরিবেশ দূষণে গায়ে সাদা দাগ বা ক্ষত রোগ দেখা দিয়ে থাকে। প্রথমেই পুকুরের পানির পরিবেশ উন্নয়নের জন্য শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন দিতে হবে অথবা ৫০০-৭৫০ গ্রাম হারে জিওলাইট প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং পুকুরের পানি আংশিক পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। চাষিকে মনে রাখতে হবে যে মাছের রোগের চিকিৎসা করার চেয়ে মাছে যাহাতে রোগ না হয সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই উত্তম।

(সংগৃহীত)

This post has already been read 5366 times!