শনিবার , জুলাই ২৭ ২০২৪

পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড শস্যের বিকল্প নেই

রবিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) সম্মেলন কক্ষে হারভেস্টপ্লাস (HarvestPlus) আয়োজিত “Improving Nutrition through Biofortified Crops” শীর্ষক সেমিনারে উপস্থিত বক্তাগণের একাংশ।
ছবি: এগ্রিনিউজ২৪.কম

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পাঁচ বছরের নিচে এমন বয়সী প্রায় ৪১ শতাংশ শিশু জিঙ্ক স্বল্পতায় ভুগছে। আবার বিভিন্ন বয়ষী ৭৩ শতাংশ নারীর রয়েছে জিঙ্ক স্বল্পতা। পাঁচ বছর বয়সী তিনজন শিশুর মধ্যে একজন খর্বাকৃতির। সার্বিকভাবে উচ্চমাত্রার অপুষ্টির ঝুঁকিতে এখন বাংলাদেশ। পুষ্টি নিরাপত্তাকে স্বাস্থ্যগত ইস্যু হিসেবে বিবেচনা না করে কৃষি উৎপাদন আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন করা সম্ভব। পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড শস্য হতে পারে অন্যতম বিকল্প।

রবিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) সম্মেলন কক্ষে হারভেস্টপ্লাস (HarvestPlus) আয়োজিত “Improving Nutrition through Biofortified Crops” শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। বিএআরসির নির্বাহি চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হকের সভাপত্তিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) ড. মো. আবদুর রউফ। সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুকের সঞ্চালনায় কর্মশালায় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) নির্বাহি পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ইরি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোমনাথ ভান্ডারি, সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জয়নুল আবেদিন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ব্রি) গবেষণা পরিচালক ড. তমাল লতা আদিত্য উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে হারভেস্ট প্লাস -এর গেøাবাল গবেষণা পরিচালক ওলফ পিফেইফার বলেন, বিশ্বের ৩০টি দেশে ১৯০টি বায়োফরটিফাইড শস্যের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে ধান, গম, ভুট্টা, মসুর, শিম, কাসাভা, মিষ্টি আলু, সারগম অন্যতম। বাংলাদেশের উচ্চ মাত্রার অপুষ্টি বিদ্যমান থাকায় বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। সারা বিশ্বে এখন ৮৫ লাখ পরিবার বায়োফরটিফাইড ক্রপ উৎপাদন করছে। ৪ কোটি মানুষ সরাসরি এ ধরনের শস্য গ্রহণের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।

হারভেস্টপ্লাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ড. মো. খায়রুল বাশার বলেন, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ পর্যন্ত ১৬টি বায়োফরটিফাইড ক্রপ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাত ৮টি, জিঙ্ক ও আয়রন সমৃদ্ধ মসুরের জাত ৩টি, জিঙ্ক সমৃদ্ধ গমের জাত একটি এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত ৪টি। প্রক্রিয়াগত ক্রুটির কারণে মিনিকেট নামের ধানের যে চালটি পাওয়া যাচ্ছে তাতে জিঙ্ক কম আছে।

তিনি আরো বলেন, হারভেস্টপ্লাস প্রোগাম বাংলাদেশে জিঙ্কের ঘাটতি পূরণে ব্রি ও ইরির সহায়তায় আবিষ্কার করে জিঙ্ক ধান। প্রয়োজনীয় শক্তির ৮৪ শতাংশই আসছে ভাত থেকে। মোট জমির ৭০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয়। সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানে জিংকের পরিমাণ বেশি থাকে। জিঙ্ক সহ অন্যান্য অপুষ্টির ঘাটতি পুরণে বিশ্বে ২০০২ সাল হতে কাজ করে যাচ্ছে হারভেস্টপ্লাস প্রোগ্র্রাম। হারভেস্টপ্লাস প্রোগ্রামটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রপিক্যাল এগ্রিকালচার ও ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রির্সাচ ইনিস্টিটিউট এর যৌথ প্রয়াসে পরিচালিত। যেটি ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেটিভ গ্রুপ ফর এগ্রিকালচারাল রির্সাচ অন এগ্রিকালচারাল ফর নিউট্রিশন এন্ড হেলথ এর অংশ।

ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এজন্য উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের শস্য উৎপাদন, পরিবেশকে রক্ষা করে কৃষি উৎপাদনে নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুষ্টি নিরাপত্তায় বারটান গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করা হয়েছে। যেকোন শস্যের জাত জনপ্রিয় করতে গেলে কৃষকের চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, দেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড ক্রপের কোন বিকল্প নেই। তাই এটিকে উৎসাহিত করতে গেলে যেমন গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, তেমনি কৃষক পর্যায়ে আবাদের জন্য ৪ শতাংশ সূদে ঋণ দিতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, যেকোন শস্যের জাত জনপ্রিয় করতে গেলে কৃষকের স্বার্থকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। বায়োফরটিফাইড ক্রপ দেশে বাণিজ্যিকভাবে আবাদের ক্ষেত্রে কতটুকু সফলতা এনে দিবে সে বিষয়ে গবেষণা জরুরি। পুষ্টি নিরাপত্তায় এসব শস্যের জাত প্রয়োজনীয় হলেও কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তায় কতটুকু সহায়ক হবে সেটি বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রসারণ করতে হবে। আর জাতটি জনপ্রিয় করতে হলে মিডিয়া, সম্প্রসারণ কর্মী, নীতি নির্ধারণ এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

This post has already been read 3108 times!

Check Also

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২২৭ প্রজাতির আম মেলার উদ্বোধন

মো. আমিনুল ইসলাম (রাজশাহী) : গত ১১ জুন (মঙ্গলবার) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে রফতানিযোগ্য আম …