Thursday , July 17 2025

চালের দাম লাগামছাড়া, খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে – জরুরি পদক্ষেপ দাবি নাগরিক সমাজের

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : চালের লাগাতার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধি। তাঁরা অবিলম্বে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) “ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও” স্লোগানে নগরীর জামালখান প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম, প্রাণ ও আইএসডিই বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা সংহতি জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান। বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান, ব্যবসায়ী নেতা মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, রাজনৈতিক নেত্রী অ্যাডভোকেট ফরিদা খানাম, ক্যাবের নেতৃবৃন্দ জান্নাতুল ফেরদৌস, শাহীন চৌধুরী, এবিএম হুমায়ুন কবির, মোহাম্মদ জানে আলম, সায়রা বেগম, আবদুল মান্নান, আবদুল মান্নান আসিফ, ওসমান জাহাঙ্গীর, আলতাফ হোসেন, বাবুল চৌধুরী, মোহাম্মদ আরিফ, কমল চক্রবর্তী, শম্পা কে নাহার, রাইসুল ইসলাম, এমদাদুল ইসলাম, আসফাকুর রহমান, সিরাতুল মুনতাহা, রায়হান উদ্দীন, নাফিসা নবী ও রোকেয়া আকতার লতা।

বক্তারা বলেন, বোরো মৌসুমে ধান ও চালের উৎপাদন পর্যাপ্ত থাকলেও বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো স্বস্তি দেখা যাচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহে ২-৫ টাকা করে চালের দাম বাড়িয়ে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসে তা ৮-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু তদারকি থাকলেও চাল নিয়ে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে ও কমাচ্ছে। পাশাপাশি ওএমএস ও টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচিও অপ্রতুল, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের জুন ২০২৫-এর হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে এককভাবে চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি নজরদারির অভাব, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা এবং করপোরেট ও মিল সিন্ডিকেটের মজুতদারি চালের দামে অস্থিরতা তৈরি করছে। এতে কৃষকরা যেমন ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, তেমনি ভোক্তাদেরও উচ্চ দামে চাল কিনতে হচ্ছে।

খানি’র সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, “আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য না থাকায় সাধারণ মানুষ পুষ্টিকর উপাদান বাদ দিয়ে কেবল ভাতনির্ভর খাবার খাচ্ছেন। এতে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, চালের দামের কারণে বহু পরিবার মাছ, মাংস, ডাল বা সবজি খাওয়ার সামর্থ্য হারাচ্ছে।

জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মানুষের আয় না বাড়ায় ক্রয়ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। ২০২৪ সালের শেষ সপ্তাহে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসাব বলছে, ন্যূনতম খাদ্যশক্তিসম্পন্ন খাবার পেতে একজন মানুষের মাসিক ব্যয় ৩ হাজার ৫১ টাকা, যা খাদ্য দারিদ্র্যসীমার তুলনায় ৬৯.৫ শতাংশ বেশি।

সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে পাঁচটি প্রধান দাবি উত্থাপন করা হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতা বৃদ্ধি, দরিদ্র জনগণের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু, ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থরক্ষায় বাজার ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ, ওএমএস ও টিসিবির আওতা সম্প্রসারণ এবং চালের বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ।

বক্তারা বলেন, চালের বাজারে নৈরাজ্য এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে খাদ্য সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাতে হলে সরকারকে দ্রুত ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

This post has already been read 127 times!

Check Also

পাবনায় দুটি ভেজাল বালাইনাশক কোম্পানিতে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার বিসিক শিল্পনগরীতে যৌথ অভিযান চালিয়ে নকল সার ও বালাইনাশক উৎপাদনের অভিযোগে …