Wednesday 1st of May 2024
Home / মৎস্য / চাষিদের প্রশিক্ষিত ও মাছের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে – ফিসটেক বিডি’র নলেজ ডে’তে বক্তারা

চাষিদের প্রশিক্ষিত ও মাছের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে – ফিসটেক বিডি’র নলেজ ডে’তে বক্তারা

Published at আগস্ট ৫, ২০১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসার পাশাপাশি মাছ চাষিদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ ও সম্প্রসারণ করে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। শুধু উৎপাদন বাড়ানোর চিন্তা না করে চাষিরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সেদিকে নজর দিতে হবে। গতানুগতিক বাজার ব্যবস্থার বাইরে রপ্তানি ও মাছের প্রক্রিয়াজাত পণ্য বাজার তৈরি করতে হবে। মাছের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না করতে পারলে চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

শনিবার (৪ জুলাই) রাজধানীর হোটেল প্লাটিনাম গোল্ডে দেশের মৎস্য সেক্টরের সুপরিচিত কোম্পানি ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড আয়োজিত ‘Aquaculture Knowledge Day’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন উপস্থিত বক্তারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. গোলজার হোসেন বলেন, আমরা আমাদের মৎস্য অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের নলেজের ব্যাপারে আরো বেশি গুরুত্ব দেবো যাতে তাঁরা প্রশিক্ষিত হতে পারে। তবে জ্ঞান বা নলেজ শুধু নিজের কাছে ধরে রাখলেই হবেনা, সেগুলোকে চাষিদের মাঝে সম্প্রসারিত করতে হবে।

মাছের খাদ্যের দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, মাছের খাদ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখতে হবে। উৎপাদন খরচ না কমাতে পারলে চাষিরা লাভবান হতে পারবেনা। তারা লোকসান দিলে এ সেক্টরে তাদের ধরে রাখা কঠিন হবে।

তিনি আরো বলেন, চাষিরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য আমরা রপ্তানির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। গতানুগতিক বাজারের বাইরে মাছের প্রক্রিয়াতজাত খাদ্য তৈরিতে উৎসাহিত করছি। শিশুদের খাবার উপযোগী মৎস্যজাত পণ্য তৈরি করার দিকে উদ্যোক্তাদের নজর দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউল করিম ভূঁইয়া বলেন, যুগ যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে নলেজ বা জ্ঞানের বিকল্প নেই। শুধু ব্যবসা করলে হবেনা জ্ঞানকে সম্প্রসারণ ও কাজে লাগাতে হবে। কারণ, জ্ঞানই শক্তি।

ফিসটেক বিষয়টিকে উপলব্ধি করে বলেই জ্ঞাননির্ভর বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। আমরা কোম্পানির শুরু থেকে গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ খুলেছি। যাতে শুধু করে পণ্য বিক্রি নয়, মাছচাষিদেরও প্রয়োজনীয় জ্ঞান বিতরন করে সহায়তা করা যায়। আমাদের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে থাকি যাতে করে তারা চাষিদের প্রশিক্ষিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠানে ফিসটক (বিডি) লিমিটেড -এর পরিচালক মোহাম্মদ তারিক সরকার বলেন, আমরা শুধু নিজেদের লাভের কথা চিন্তা করে কোন পণ্য আমদানি করিনা, পাশাপাশি যাতে সেক্টরও সুফল পায় সেদিকে নজর দিই। সেজন্য আমরা প্রতিটি পণ্য আমদানি করার আগে ডেমো তৈরি করি এবং মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করি সেগুলো দেশের জন্য কতটা স্থায়ীত্বশীল হবে। আমদানিকৃত পণ্যের ফ্যাক্টরি পরিদর্শন ও অন্যান্য বিষয় যাচাই করে সেগুলো নিয়ে আমদানির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিই।

বিগত এক বছর ধরে মাছ চাষিরা লোকসান দিচ্ছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ তারিক সরকার বলেন, আমাদের শুধুমাত্র উৎপাদনে তৃতীয়-চতুর্থ হলে চলবেনা। চাষিরা যাতে তাদের চাষকৃত মাছের ন্যায্যমূল্য পায় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য আমাদের রপ্তানিমুখী চিন্তাভাবনার বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ব্যবসায় জ্ঞান আহরণ করতে হবে, গবেষণা থাকতে হবে। সেজন্য বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে আমরা সবচেয়ে বেশি ফিশারিজ এক্সপার্ট নিয়োগ দিয়েছি। চাষিদেরকে (GAP) গুড অ্যাকোয়াকালচার প্র্যাকটিস করতে হবে। চাষিরা যাতে এ প্র্যাকটিস করতে পারেন সেজন্য আমরা নলেজ ডে আয়োজন করেছি।

ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড এর চেয়ারম্যান খন্দকার ফরহাদ হোসেন তাঁর সমাপনী বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা প্রক্রিয়াজাত মাছের বাজারে প্রবেশ করার কাজ শুরু করেছি। ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিমধ্যে জমিও ক্রয় করা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে ফিসটেক কয়েকশ’ কোটি বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে চায়।

অনুষ্ঠানে ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাফিউল হাসান চৌধুরি অসুস্থতার জন্য তাঁর তৈরি করা কোম্পানির প্রোফাইল উপস্থাপন করেন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ও কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (গবেষণা ও উন্নয়ন) সৈয়দ আহসানুল হক।

অনুষ্ঠানে ”Sustainable & Profitable Shrimp Culture” শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার (টেকনিক্যাল সার্ভিস) শিমুল দেওয়ানজি, ‘Study on the Impact VIUSID-AQUA as Antiviral and Immune Modulator for Sustainalbe Health Management and Seed Production fo Prawn (Macrobrachium rosenbergii) in Hatchery Captivity in Bangladesh’ শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেপুটি ম্যানেজার (গবেষণা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ সোহেল মিয়া, ‘Profitable Pabda Fish Farming With De Heus Floating Fish Feed’ শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (টেকনিক্যাল সার্ভিস) মো. কামরুল ইসলাম, ‘Probiotics and growth promotor effect on the growth and production Performance of Monosex Tilapia (Oreochromis niloticus) in Nylon Net Cages in Dekar Haor, Sunamganj’ শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিলেট বিভাগের জোনাল ইনচার্জ টেকনিক্যাল সার্ভিস) মো. রেজাউল ইসলাম। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রমের কারিগরি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (টেকনিক্যাল সার্ভিস) মো. শামসুল আরেফিন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (টেকনিক্যাল সার্ভিস) মো. হারুন ওর রশীদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ড. মো. নুরুজ্জামান, ওয়ার্ল্ড ফিস -এর মার্কেট সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ জাকির হোসেন, ডেপুটি চীফ অফ পার্টি নাসিম আহমেদ আলিম, ড. মিজানুর রহমান প্রমুখ।

This post has already been read 3595 times!