Thursday 2nd of May 2024
Home / মৎস্য / সারা দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮

সারা দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮

Published at জুলাই ১৮, ২০১৮

গৌতম কুমার রায় : ১৮-২৪ জুলাই দেশে মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮। ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ মাছে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ -এই শ্লোগানকে ধারণ করে এবারের অনুষ্ঠান পালনে রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। জাতির জনকের স্বপ্ন স্রোতে আগামীর বাংলাদেশে কৃষির এই মৎস্যসম্পদের প্রাচুর্যতায় আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য, কর্মসংস্থানের তাগিদ বিশ্লেষণে সমগ্র জলসম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহারের উৎপাদন করার বিশেষ বিষয় নিহিত রয়েছে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সেই অবস্থা থেকে আমাদেরকে উত্তরণ ঘটান। তিনি রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করে দেশের, বিশেষ করে কৃষির প্রতিটি সেক্টরকে গতিশীল করে গড়ে তোলেন। সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদনের গতিকে সচল করে তোলেন। সেই আলোকে মৎস্য সেক্টরে আসে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন।

আমাদের রয়েছে ১০.১৩ লাখ হেক্টর নদী নালা, খাঁড়ি ও মোহনা অঞ্চল। ২৮.৩৩ লাখ হেক্টর প্লাবণভূমি ও হাওড়। ১.১৪ লাখ হেক্টর বিল, ৫.৫ হাজার হেক্টর বাঁওর, ৬৮.৮হাজার হেক্টর কাপ্তাই হ্রদ এবং ৩.০৫ লাখ হেক্টর পুকুর দীঘি। আমাদের রয়েছে সামুদ্রিক জলরাশির বিশাল উপকূলীয় এলাকা। এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন পর্যন্ত ৭১০ াক.মি.বিস্তৃত উপকূলীয় তটরেখা। প্রতিবেশী দেশের সাথে সমুদ্র সীমা নির্ধারণের মাধ্যমে আমাদের লোনা জলের অধিকার এখন ১,১৮,৮১৩ বর্গ কি.মি.।

সামুদ্রিক এই জলরাশির মধ্যে ২৫ হাজার বর্গ কিমি. হলো ১০ মিটারের চেয়ে কম গভীর এলাকা। যেখানে বহমান পলিবিধৌত উর্বর মোহনা অঞ্চল। রয়েছে বিশ্বের বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। এখনো এই সামুদ্রিক জলে প্রায় ৩০ প্রজাতির চিংড়ি সহ ৩৫৯ প্রজাতির মাছের সন্ধান এসেছে। আরো অনুসন্ধান চলছে হয়তো আরো প্রজাতির এমন চিংড়ি ও মাছের সন্ধান আমরা পেতে পারি। মিষ্টি এবং লোনা জলের মাছের উৎপাদনে আমরা এখন বিশ্ব সেরা। আমাদের ইলিশ এখন দেশ এবং জাতির অহঙ্কার। কেননা এই ইলিশ আমাদের দেশের জন্য বিশ্ব স্বীকৃত ব্রান্ড মালিকানা পণ্য হিসেবে খ্যাত। যেকোন মাছের উৎপাদনে আমরা আমাদের ঘাটতি মোকাবেলা করে আরো রপ্তানী করতে সক্ষম। আমরা এখন প্রতিদিন মাছ হতে আমিষ গ্রহণের পরিমাণ এক সময়ে প্রতিদিন, প্রতিজনে ছিল ৫২ গ্রাম। পরে তা বেড়ে হয় ৫৭ গ্রাম হয়। এখন তার পরিমাণ ৬০ গ্রামে উঠে এসেছে। বছর বছর মাছ উৎপাদনের সাফল্যে আমরা দেশে মোট কৃষিজ আয়ের ২৩.৮১ শতাংশ পায় মৎস্য খাত থেকে।

বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন কিংবা জিডিপি’র ৩.৬৫ শতকরা মৎস্য খাতের। দেশের মোট জনগোষ্ঠির মধ্যে ১.৮২ কোটি মানুষ মৎস্য সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়মিত নিয়োজিত থেকে আয় উপার্জন করছে। এই জনগোষ্ঠির মধ্যে প্রায় ১৫.৫ লাখ নারী রয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে বিশ্বে ৫ম থেকে ৪র্থ স্থান পেয়ে সফলতা পায়। এবারে সে অবস্থান এগিয়ে ৩য় স্থানে এসেছে। এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের সুচিন্তিত পরিকল্পনা, মৎস্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নিরলস পরিশ্রম, গবেষণা এবং সময় অনুযায়ী জলজসম্পদ ও মাছকে বংশ সৃজনের ব্যবস্থা করে তাকে রক্ষা করার মাধ্যমে। মৎস্য বিভাগের এই মৎস্য সপ্তাহের যে আনুষ্ঠানিকতা তার মাধ্যমে গ্রামীণ পর্যায়ে বারতা পৌছে দেয়ার এই উদ্যোগ। যেন জলের প্রতিটি আধার কে উৎপাদনে এনে সোনা ফলান সম্ভব হয়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলা এখন মাছ উৎপাদনে সোনার বাংলা হয়েছে। আমরা এখন কারো মুখোপেক্ষি জাতি নয়। আমরা এখন উন্নয়নশীল জাতির কাতার বেয়ে উন্নত জাতির দিকে ধাবিত হতে পেরেছি। আমাদের সম্পদ সীমিত হলেও সাধ্য অফুরন্ত। সাধ এবং সাধ্যকে জয় করে আমরা পেয়েছি কাক্সিক্ষত উৎপাদন। আমাদের মিষ্টি এবং নোনা জলে সোনার আঁকড়। তবে স্বাধীনতার এতদিন পরে আমাদের যে অর্জনই হোক না কেন তার স্বপ্নদ্রষ্টা আমাদের মহাকালের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তিনি যে ধারায় স্বাধীনতাকে এনেছিলেন আমরা দেশকে সে ধারায় এগিয়ে নিচ্ছি এই দেশকে বিশ্বের মিরর হিসেবে উপাস্থাপন করতে। আর এই মহাকাল যাত্রায় যিনি আমাদেরকে পথ দেখাচ্ছেন তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক : গবেষক, উদ্ভাবক ও পরিবেশ ব্যক্তিত্ব।

This post has already been read 1892 times!