Thursday 28th of March 2024
Home / মৎস্য / কাঁকড়া আহরণে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা

কাঁকড়া আহরণে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা

Published at জানুয়ারি ৩, ২০১৮

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা প্রতিনিধি):
কাঁকড়ার প্রজনন মওসুম হওয়ায় সুন্দরবনের কাঁকড়া আহরণে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রজনন মওসুমে মা কাঁকড়া প্রচুর ডিম দেয়। সেই ডিম থেকে কাঁকড়ার বাচ্চা ফুটে বের হয়। কাঁকড়া উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে প্রতি বছরের এ সময়ে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা অবস্থায় কাঁকড়া আহরণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহামুদুল হাসান জানান । সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দুইমাস ব্যাপী এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জানান, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মওসুম। এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়া প্রচুর ডিম দেয়। সেই ডিম থেকে কাঁকড়ার বাচ্চা ফুটে বের হয়। তাই প্রতি বছরের এ সময়ে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়।

এদিকে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, ‘রপ্তানির উদ্দেশ্যে মংলা থেকে প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকার কাঁকড়া ঢাকায় পাঠানো হয়। এ রফতানি করা কাঁকড়ার ৯৯ শতাংশ সুন্দরবন থেকে ধরা হয়। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে রফতানি শূণ্যের কোঠায় নেমে আসবে। ফলে কাঁকড়া আহরণের সাথে জড়িত উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়বে। কাঁকড়া আহরণের সাথে জড়িতদের বিকল্প কর্মসংস্থামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ খাদ্য সংকটে থাকবে বলে তারা জানান।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. লতিফুল ইসলাম জানান, কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মুখে বা গভীর সাগরে। তাই এই সময় কাঁকড়া গভীর সাগরের দিকে ছোটে। তাছাড়া এই সময় নদীর পানি অপেক্ষা সাগরে পানি গরম এবং নদীর পানি থেকে সাগরের পানির লবণাক্ততা বেশি থাকে। এসব কারণেও নদী খাল থেকে কাঁকড়া সাগরে ছুটে যায়। কাঁকড়া সাগরে ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে যাতে তাদের ধরতে না পারে, সেজন্য সরকার এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এছাড়া মায়া কাঁকড়ার যখন ডিম পাড়ার সময় হয় তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। তখন কাঁকড়া ক্ষুধার্ত থাকে। তাদের সামনে যে খাবার দেওয়া হয় তারা দ্রুত তা খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। তিনি আরো বলেন, ‘যদি এই সময় কাঁকড়া শিকার না করা হয়, তাহলে পরের বছর অধিক হারে কাঁকড়া উৎপাদন সম্ভব হবে।

এ প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, দেশের কাঁকড়া উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে প্রতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাস কাঁকড়া আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কেননা এই সময় কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ করা হয় কাঁকড়ার প্রজননের মৌসুম হওয়ায় কারণে। আর এই নিষেধাজ্ঞা শুধু সুন্দরবন এলাকায়। তাই বনবিভাগ এটা নিয়ন্ত্রণ করে।

উল্লেখ্য, সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় শত শত লোক সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করে। কাঁকড়া শিকারি প্রফুল্ল মিস্ত্রী (৫৪) ও তার ছেলে প্রকাশ মিস্ত্রী (২০) জানান, তারা জাল পেতে প্রতিদিন ৫-৭ কেজি ডিমওয়ালা শিলা কাঁকড়া পান। ২টি কাঁকড়ায় এক কেজি হয় এবং প্রতি কেজি ছয় থেকে ৮শ’ টাকায় বিক্রি করেন। এখন কাঁকড়া বেশি ধরা পড়ছে এবং দামের দিক দিয়েও ভালো বলেও জানান।

সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণকারী জেলে আজিজুর রহমান (৩৫), স্বপন মন্ডল (৩০) ও মহসীন আলম (৪৫) জানান, বর্তমানে সরকারিভাবে কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ থাকার কারণে তারা মাছের পাশ নিয়ে সুন্দরবনে ঢুকে কাঁকড়া শিকার করছে। স্থানীয় কাঁকড়ার আড়ৎদাররা জানান, এখন ডিমওয়ালা কাঁকড়া পাওয়া যায় বলে ঢাকার আড়তে এসব কাঁকড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে এবং দামের দিক দিয়েও ভালো। অন্য সময় ডিমওয়ালা কাঁকড়া পাওয়া যায়না বলে তেমন চাহিদা থাকে না।

This post has already been read 2987 times!