Friday 19th of April 2024
Home / প্রাণিসম্পদ / বাছুরের সাদা পায়খানা রোগ ও প্রতিকার

বাছুরের সাদা পায়খানা রোগ ও প্রতিকার

Published at সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৭

ডা. এ এইচ এম সাইদুল হক:
দুগ্ধ খামারের নবজাতক বাছুর সাধারণত যে ক’টি রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যায় তার মধ্যে সাদা পায়খানা অন্যতম। এ জন্য রোগটিকে বাছুরের ঘাতকব্যাধি বলা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের গবাদিপশুর নবজাতক বাচ্চায় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে গরু ও ছাগলের বাচ্চায় এ রোগটি বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে ১-২১ দিন বয়সের নবজাতক বাছুর/বাচ্চার জন্য রোগটি খুবই মারাত্মক। প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের দেশে অনেক বাছুর অকালে মারা যায়। বাছুরের অকাল মৃত্যু যেহেতু খামারি ও দেশের জন্য ক্ষতিকর সেজন্য রোগটির বিষয়ে খামারিদের সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন যাতে তারা যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

সাদা উদরাময় বা কাফ স্কাওয়ার বা কোলিব্যাসিলোসিস (Colibacillosis) নবজাতক বাছুরের একটি মারাত্মক রোগ। রোগাক্রান্ত (১-২ সপ্তাহ বয়সের) বাছুর দুর্গন্ধময় পাতলা পায়খানা করে। কাফ স্কাওয়ার রোগটি দুইভাবে হয়। তার মধ্যে একটি সেপটিসেমিক (Septicemic) ধরনের এবং অন্যটি এন্টেরিক (Enteric) ধরনের হয়।

রোগের কারণ:
এসকারিসিয়া কোলাই (Escherichia coli) নামক গ্রাম নেগেটিভ (Gram Negative) অবায়বীয় সুবিধাভোগী (Facultative anaerobic) রড (rod) আকৃতির জীবাণু দ্বারা এ রোগ হয়। উন্নত বিশ্বে ই-কলাই এর সাথে বিভিন্ন ভাইরাস যেমন রোটাভাইরাস, করোনাভাইরাসের সম্পর্ক থাকতে দেখা যায়।

রোগের অনুকূল পরিবেশ:
১. নবজাতক বাছুরকে শালদুধ (Colostrum) না খাওয়ানো।
২. নোংরা পরিবেশ।
৩. জীবনিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিকভাবে পালন না করা।
৪.  নবজাতক বাছুরকে অত্যধিক ঠাণ্ডা, আর্দ্র কিংবা গরম আবহাওয়ায় রাখা।

রোগের বিস্তার
রোগাক্রান্ত এবং বাহক পশুর মল, দুধ, যোনীর নিঃসরণ (Vaginal discharge) ইত্যাদি থেকে নবজাতককে এ রোগ সংক্রমিত হয়। এছাড়া দূষিত খাদ্য ও পানির পাত্রের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।

রোগের নিদানিক লক্ষণ
চাউল-ধোয়া পানির মতো সাদা রঙের পচা দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা হয়। পাতলা পায়খানার রঙ মানুষের পায়খানার রঙের মতো হতে পারে। বাছুর ঘন ঘন পায়খানা করে এবং পায়খানার মধ্যে বায়ু (gas) থাকায় ফেনা হয়। মলদ্বারের চারিদিকে ও লেজে পাতলা পায়খানা লেগে থাকে। অনেক সময় পায়খানায় রক্ত দেখা যায়। প্রথমদিকে জ্বর থাকে এবং কিছু সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যায় (বাছুরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১০১.৩-১০৪ ডিগ্রী ফা.)। পরে বাছুর নিস্তেজ হয়ে মাটিতে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। অবশেষে মারা যায়।

রোগ নির্ণয়:
প্রাথমিকভাবে
পশুর বয়স যেমন ১ মাসের মধ্যে বাছুর গরুর পাতলা দুর্গন্ধপায়খানা, বাছুরকে প্রসবকালীন দুধ অর্থাৎ কলস্ট্রাম না খাওয়ানো, বাছুরকে অত্যধিক ঠাণ্ডা, আর্দ্র কিংবা গরম আবহাওয়ায় রাখার ইতিহাস।

সঠিকভাবে
গবেষণাগারে এলাইজা (ELISA= Enzyme Linked Immunosorbent Assay) অথবা ফ্যাট (FAT=Fluroscent Antibody Test) এর মাধ্যমে এবং বাছুরের পায়খানা কালচার করে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।

চিকিৎসা
১. সালফার গ্রুপের যেকোনো একটি ওষুধ খাওয়াতে হবে। প্রথম দিন প্রতি ৩৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১টি বোলাস একবার খাওয়াতে হবে এবং পরের দিন থেকে ১-২ বোলাস দিনে ২ বার করে ৪-৫ দিন খাওয়াতে হবে।
২. সঙ্গে অক্সিট্রেটাসাইক্লিন গ্রুপের ইনজেকশন, যেমন- Renamycin, Tetracycline ২৫% ইত্যাদির যে কোনোটি ৩-৪ মিলি. মাংসপেশীতে পরপর ৪-৫ দিন দিলে বাছুর দ্রুত সেরে ওঠে।
৩. দুর্বলতা বেশি থাকলে ২৫% ডেক্সটোজ স্যালাইন ৫০-১০০ মিলি. জুগুলার শিরায় (Jugular Vein) দিতে হবে।
৪. উপরোক্ত স্যালাইনের ভেতর ২-৩ এ্যাম্পুল নার্ভিন (Nervin) ইনজেকশন মিশিয়ে জুগুলার শিরায় আস্তে আস্তে প্রয়োগ করতে হবে।
৫. এছাড়া বাছুরকে প্রচুর স্যালাইনের পানি যেমন Glucolyte বা Oralyte ১ গ্রাম ১লিটার পানিতে মিশিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়াতে হবে।

প্রতিরোধ
সদ্যজাত বাছুরকে জন্মের আধা ঘণ্টা থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে শালদুধ (Colostrum) খাওয়াতে হবে। বাছুরকে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে হবে। বাছুরকে পরিমাণমতো দুধ খাওয়াতে হবে।

This post has already been read 17196 times!