Friday 29th of March 2024
Home / এক্সক্লুসিভ / ঢাকায় প্রতি ১১জনে একজন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত

ঢাকায় প্রতি ১১জনে একজন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত

Published at জুলাই ২৩, ২০১৭

BAU Chikungunia Seminer Pic-2মো. আরিফুল ইসলাম, বাকৃবি থেকে:
চিকুনগুনিয়ার ফলপ্রদ নিয়ন্ত্রণে মশা ও মানুষের পাশাপাশি অন্য উৎসগুলোও খতিয়ে দেখতে হবে, সংক্রমণের সম্ভাব্য উপায়গুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং ভাইরাসের জিনগত বৈচিত্র নিরূপন করতে হবে। এছাড়া স্বাশ্রয়ী মূল্যে ভাইরাস সনাক্তকরণের পদ্ধতি বের করতে হবে যাতে মহামারীর সময় দ্রুত চিকুনগুনিয়া রোগ নির্নয় করা যায়। এজন্য কার্যকর গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে নিয়মিত ময়লা অবজর্না পরিষ্কার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, মশার প্রজনন সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও জলাবায়ুর পরিবর্তন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে কীটতত্ত্ববিদ পরিবেশবিদ, মেডিকেল ও ভেটেরিনারি পেশার এবং সংশিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ও গবেষক নিয়ে গঠিত কমিটির মতামত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী, সিটি কর্পোরেশনের সংশিষ্ট বিভাগ, গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাক্তিবর্গের অংশগ্রহণ ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আর এ রোগে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার সাথে মোকাবেলা করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। রবিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদীয় সম্মেলন কক্ষে ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সম্প্রতি দেশে বিশেষ করে ঢাকায় চিকুনগুনিয়ার ব্যাপক প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ঢাকায় আক্রান্ত্রের সংখ্যা প্রতি ১১ জনে একজন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভেটেরিনারি অনুষদের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো. সহিদুজ্জামান ও কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন হাওলাদার।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী, প্রফেসর ড.  প্রিয় মোহন দাস, প্রফেসর ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন , প্রফেসর ড. মনোরঞ্জন দাস, প্রফেসর ড. মকবুল হোসেন, প্রফেসর ড. মাহবুব আলম, প্রফেসর ড. আবু হাদী নুর আলী খান, প্রফেসর ড. কাজী শাহানারা আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. উয়েজ আহমেদ, প্রতিষেধক শাখার প্রধান ডা. মো. শাহাদৎ হোসেনসহ চিকুনগুনিয়া নিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ও শাখার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের গবেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের চিকিৎসকগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ভেটেরিনারি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন প্রফেসর ড. নাজিম আহমাদ

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর বলেন, চিকনুগুনিয়া বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ঠ আন্তরিকতার সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সকলকে এ রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং  নিয়ন্ত্রণে সকলকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, এডিস মশা দ্বারা চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শরীরে প্রবেশের দুই থেকে চার দিনের মধ্যে আকস্মিক জ্বর শুরু হয় এবং এর সাথে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে যা কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই রোগে মৃত্যু ঝুঁকি প্রতি দশ হাজারে এক জন বা এর চেয়েও কম তবে বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগের জটিলতা তুলনামূলক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চিকুনগুনিয়া মানুষ ছাড়াও বানর, বাঁদুর, ইঁদুর ও পাখিতে হতে পারে এবং এসব প্রাণি থেকে মানুষে এ রোগের সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া মানুষ থেকে মানুষেও এ রোগের সংক্রমণ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ১৯৫২ সণে প্রথম তানজানিয়ায় রোগটি সনাক্ত হয়। তবে এখন বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে রোগটি দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রথম উত্তর রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জ ২০০৮ সনে রোগটি সনাক্ত হয়। ২০১১ সনে পুনরায় এই রোগের আবির্ভাব হয়।

This post has already been read 3040 times!