
সিকৃবি সংবাদদাতা: মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রকৃতিগত ও সহজাত অধিকার যেমন- জীবন ধারণের অধিকার, নিরাপত্তা লাভের অধিকার, নিষ্ঠুরতার শিকার না হওয়ার অধিকার, ন্যায়বিচার লাভের অধিকার অত্যাবশ্যক। মানবাধিকার হলো মানবজাতির সবচেয়ে মৌলিক ও জন্মগত অধিকার, যার ভিত্তি হলো মানুষের মর্যাদা, স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বোধ। প্রতিটি মানুষের প্রতি সম্মান দেখানো, বৈষম্যহীন সমাজ গঠন এবং সবার নিরাপত্তা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করাই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। মানবাধিকার দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়-অধিকার সুরক্ষার সংগ্রাম কখনোই থেমে থাকে না; বরং মানবিক মূল্যবোধের ধারাবাহিক চর্চার মধ্য দিয়েই তা বিকশিত হয়।
মানবাধিকার হলো সেই মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা, যা জাতীয়তা, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এর মধ্যে রয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের চোখে সমতা, শিক্ষা লাভের সুযোগ এবং বৈষম্যমুক্তভাবে বাঁচার অধিকার। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। এটি আমাদের সবার জন্য প্রাপ্ত সার্বজনীন অধিকারগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
মানুষের মৌলিক অধিকার ও চাহিদা নিশ্চিতের পাশাপাশি, সকলের নিরাপত্তা বিধান, স্বাধীনতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখাই মানবাধিকার। মানবাধিকার একটি বিশদ ও সামগ্রিক বিষয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, একবিংশ শতাব্দীতে বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগেও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় প্রতিনিয়ত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হচ্ছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো শিক্ষা, গবেষণা এবং মানবিক মূল্যবোধের চর্চা। জ্ঞানভিত্তিক ও নৈতিক মানসম্পন্ন মানুষেরাই সমাজে ন্যায়, স্বাধীনতা ও সমঅধিকারের বোধকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। শিক্ষার্থীদের কেবল দক্ষ পেশাজীবী নয়, বরং মানবিক, দায়িত্বশীল এবং সমাজসচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সকলকে কাজ করতে হবে। আর এর মাধ্যমেই জাতি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে । কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই উন্নয়নের প্রতিটি কর্মধারায় মানবকল্যাণের চেতনাই হোক দেশের অগ্রযাত্রার মূলভিত্তি।
বর্তমান বিশ্বে নানামুখী বৈষম্য, সহিংসতা, পরিবেশগত সংকট, খাদ্যঘাটতি ও দারিদ্র্য মানবাধিকারের পথকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক সমাজে জীবিকা, সম্পদে প্রবেশাধিকার, নিরাপদ খাদ্য, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা টেকসই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের এ বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, যাতে কৃষক, শিক্ষার্থী, সমাজ ও দেশ উপকৃত হয়।
মানুষের অধিকার রক্ষায় আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতা, মানবিকতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতা প্রয়োজন। মানবাধিকার একটি আইনি কাঠামোই নয়-এটি মানবতার প্রতি অঙ্গীকার, যা আমাদের চেতনাকে উজ্জীবিত করে এবং একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে প্রেরণা দেয়।
মানবাধিকার দিবস ২০২৫ এর অঙ্গীকার হোক সমতা, ন্যায়, দয়া, সহমর্মিতা ও মানবিক মূল্যবোধকে ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে প্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের জ্ঞান, গবেষণা ও কর্মের মাধ্যমে মানবতার মর্যাদা রক্ষায় সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে।
মানবাধিকারই মানবসমাজের অগ্রযাত্রার পথ। আসুন, সবাই মিলে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে একযোগে কাজ করি।



