
মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : ইউরোপের কম্পাউন্ড ফিড উৎপাদকদের সংগঠন ফেফাক (FEFAC) সতর্ক করেছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সয়াবিন সরবরাহ শিগগিরই গুরুতর বিঘ্নের মুখে পড়তে পারে। ডেনিশ ইইউ ফার্ম কাউন্সিল সভাপতির কাছে পাঠানো এক আনুষ্ঠানিক চিঠিতে সংস্থাটি জানায়, বন উজাড়–মুক্ত পণ্যের বিধিমালা (EUDR) সংশোধন বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাব সয়াবিন–নির্ভর খাদ্য ও পশুপালন খাতের জন্য “তাৎক্ষণিক ও গুরুতর ঝুঁকি” তৈরি করেছে।
ফেফাক অভিযোগ করে যে কমিশনের গত ২০ অক্টোবর প্রকাশিত “টার্গেটেড সিম্পলিফিকেশন” প্রস্তাবটি আগের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কমিশন ঘোষণা করেছিল, প্রযুক্তিগত ঘাটতির কারণে বিধিমালার পূর্ণ বাস্তবায়ন এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ নতুন প্রস্তাবে সেই প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ২০২৬ সনের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত একটি অদ্ভুত ধরনের ‘গ্রেস পিরিয়ড’ রাখা হয়েছে – যা কার্যত আইন প্রযোজ্য হবে কি হবে না, সে বিষয়ে মারাত্মক আইনি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
এই অনিশ্চয়তার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে বাজারে। ফেফাক জানায়, ২০২৬ সনের জন্য সয়াবিন পণ্যের প্রায় সব সরবরাহকারী বাজার থেকে অফার প্রত্যাহার করেছে, আর ২০২৫ সনের বাকি সময়ের অফার অত্যন্ত সীমিত করে দিয়েছে। দামের উর্ধ্বগতি ইতিমধ্যেই ফিডের প্রোটিন উৎসের বিকল্প পণ্য রেপসিড মিলসহ অন্যান্য পণ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। সংস্থাটির ভাষায়, “বাজার কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।”
ফেফাক আরও জানায়, রাজনৈতিক অবস্থান–বৈষম্য ও আমলাতান্ত্রিক অনিশ্চয়তা–নির্ভর এই পরিস্থিতি ইউরোপের পশুপালন খাতের প্রতিযোগিতা–ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক বাণিজ্যের অস্থিরতা—বিশেষ করে চলমান চীন–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য উত্তেজনা, যা বিশ্বব্যাপী সয়া–বাণিজ্যের প্রথাগত পথ বদলে দিচ্ছে এবং ইউরোপের জন্য বিকল্প উৎস খোঁজার সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে।
সংস্থার সভাপতি পেদ্রো করদেরো জানান, ইউরোপের কম্পাউন্ড ফিড শিল্প বর্তমানে “আইনি অনিশ্চয়তায় জমাটবাঁধা সয়া বাজারের” মুখোমুখি। ২০২৬ সনের প্রথম দুই প্রান্তিকের জন্য আগাম কেনা সয়াবিনও এখন ঝুঁকির মধ্যে, কারণ কমিশনের প্রস্তাবিত ছয় মাসের শিথিলতা ভবিষ্যতে তা পিছিয়ে কার্যকর করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।
ফলাফল হিসেবে, ফেফাকের হিসাব অনুযায়ী, ইউরোপীয় লাইভস্টক খাতে অতিরিক্ত ব্যয় বাড়তে পারে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ইউরো, যা ইইউর কৃষি–খাদ্য খাতের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যের সঙ্গে একেবারেই অসঙ্গত।
এই পরিস্থিতিতে ফেফাক জোরালোভাবে আহ্বান জানিয়েছে—EUDR-এর বাস্তবায়ন অবিলম্বে পিছিয়ে দিতে হবে, যেন সয়াবিন সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন না ঘটে, খাদ্য উৎপাদন খরচ আরও না বাড়ে এবং প্রাণিজ পণ্যের বাজারে নতুন করে মূল্যস্ফীতি চাপ সৃষ্টি না করে।
সূত্র: পোলট্রি ওয়ার্ল্ড

