
মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : মাছ চাষে দ্রুত বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এখন এক সাধারণ চর্চা। বিশেষ করে এশিয়ার কিছু দেশে মাছের খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে ব্যবহার—যা ‘অ্যান্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রমোটর’ (AGP) নামে পরিচিত—এখনও ব্যাপকভাবে চলছে। কিন্তু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচারে (Nature) প্রকাশিত এক গবেষণা দেখিয়েছে, এই তথাকথিত ‘নিরাপদ ব্যবহার’ আসলে ততটা নিরাপদ নয়।
গবেষণায় মাছকে বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ফ্লরফেনিকল (Florfenicol) খাওয়ানো হয় এবং তাদের আন্ত্রিক জীবাণুসমষ্টি (microbiome), অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন (resistome) এবং জিন পরিবহন উপাদান (mobilome)–এর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা গেছে, নির্ধারিত ‘withdrawal period’ বা ওষুধ বন্ধের পরও মাছের শরীরে প্রতিরোধী জিন ও মোবাইল জেনেটিক উপাদানের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি রয়ে গেছে।
বিশেষ করে ইন্টিগ্রন (integrons) এবং floR জিন বহনকারী ট্রান্সপোসন (transposon) অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ছড়াতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে, এবং তাদের প্রভাব ওষুধ বন্ধ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা যায়, দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মাছের দেহে নানা ধরনের প্লাজমিড (plasmid) সমৃদ্ধ হয়, যেগুলো প্রতিরোধী জিন বহন করে এবং কিছু ক্ষেত্রে সেগুলো সম্ভাব্য রোগজীবাণুতেও পাওয়া গেছে। প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই রোগজীবাণুদের প্রতিরোধী জিন ও প্লাজমিডের জিন একেবারে একই—অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ‘horizontal gene transfer’ ঘটছে সক্রিয়ভাবে।
গবেষকরা বলছেন, বর্তমান ‘withdrawal period’ হয়তো টিস্যু থেকে ওষুধের অবশিষ্টাংশ দূর করে, কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের দীর্ঘমেয়াদি মাইক্রোবিয়াল প্রভাবকে দূর করতে পারে না। এর ফলে মাছ, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অদৃশ্য কিন্তু গুরুতর ঝুঁকি থেকে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই মাছ চাষ নিশ্চিত করতে হলে শুধু উৎপাদন বাড়ানো নয়, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রভাব মাছের অভ্যন্তরীণ জীবাণু ও পরিবেশের ওপর কেমন পড়ছে, সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায়, এই ‘নিরাপদ ব্যবহার’-এর ধারণাই ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন বিপদের কারণ হতে পারে।