নিজস্ব প্রতিবেদক : ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (WPSA-BB) এর `বার্ষিক সাধারণ সভা-২০২৪’ গত শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ওয়াপসা-বিবি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ, সদস্য এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সভায় পোলট্রি খাতের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং নীতি-কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মসিউর রহমান অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “পোলট্রি খাতে আধুনিকায়ন ছাড়া আমাদের কোনো গতি নেই। বিশ্বায়নের এ সময়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষতা-কেন্দ্রিক ও গবেষণাভিত্তিক একটি পোলট্রি শিল্প গড়ে তুলতে হবে।” তিনি উল্লেখ করেন, “খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের ফলে দেশে ডিম ও মাংসের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। এই চাহিদা পূরণে উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং সেজন্য প্রয়োজন আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা।”
বিশেষভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “আমরা যতই বায়োসিকিউরিটির কথা বলি, সেটি হাজার বার করলেও লাভ হবে না, যদি না আমরা পোলট্রি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে না পারি। পোলট্রি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, পরিবেশবান্ধব এবং অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর করতে হবে। উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে একটি শিল্পে রূপান্তর করেছে, আমাদেরও সেই দিকেই এগোতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “গবেষণা ছাড়া কোনো শিল্পের টেকসই অগ্রগতি সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে পোলট্রি খাতে নতুন জ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ধারা তৈরি করতে হবে। সংগঠন হিসেবে ওয়াপসা-বিবি সেই উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।”
সাধারণ সম্পাদক ডা. বিপ্লব কুমার প্রামানিক সভায় সংগঠনের গত এক বছরের কার্যক্রম, অর্জন ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশদভাবে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “পোলট্রি বিজ্ঞান ও শিল্পের উৎকর্ষ সাধনে আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছি। সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা একাধিক প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছি এবং গবেষণা উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু করেছি।”
তিনি জানান, সংগঠনের পরবর্তী পরিকল্পনায় রয়েছে—সদস্যদের জন্য ডেটা-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংযুক্তি বৃদ্ধি, এবং আরও কার্যকর প্রকাশনা উদ্যোগ।
কোষাধ্যক্ষ কৃষিবিদ ফয়েজুর রহমান ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “সংগঠনের অর্থনৈতিক কাঠামো বর্তমানে স্থিতিশীল। আমাদের ব্যয়ের বড় অংশই গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা পোলট্রি খাতকে গঠনমূলকভাবে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।”
এছাড়া সভায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুটি নতুন পদ—বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক—সৃষ্টির প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এতে কার্যনির্বাহী কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩টি।
সভা শেষে উন্মুক্ত আলোচনায় সদস্যরা গবেষণা, প্রশিক্ষণ, নবীন সদস্য অন্তর্ভুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। সভায় উপস্থিত সদস্যগণের নৈশভোজের মাধ্যমে আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।
এই সভা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেয় এবং সংগঠনের আগামী দিনের পথচলায় নতুন দিকনির্দেশনা যোগ করে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অনেকে।