গাজীপুর সংবাদদাতা: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর ফার্ম মেশিনারী এন্ড পোস্টহারভেস্ট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং (এফএমপিই) বিভাগ এর আয়োজনে বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) বারি’র এফএমপিই বিভাগে বারি উদ্ভাবিত মুগডাল ভাঙ্গানো মেশিনের মাঠ প্রদর্শন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটির সহযোগিতায় ছিলেন সিরিয়াল সিস্টেম ইনিশিয়েটিভ ফর সাউথ এশিয়া-মেকানাইজেশন অ্যান্ড এক্সটেনশন অ্যাক্টিভিটি (সিসা-এমইএ), সিমিট, বাংলাদেশ।
নব উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটির বিভিন্ন সুবিধাবলি কৃষক, যন্ত্র প্রস্তুত কারক, বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মী ও সাধারণ জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য আয়োজিত এ মাঠ প্রদর্শন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারি’র মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার। এসময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড. মো. আবু হেনা ছরোয়ার জাহান এবং সাবেক পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. মো. আইয়ুব হোসেন। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্বে ছিলেন পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. ফেরদৌসী ইসলাম। এছাড়াও বারি’র বিভিন্ন বিভাগ/কেন্দ্রের সিনিয়র বিজ্ঞানীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এফএমপিই) বারি ও সিসা-এমইএ প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মোহাম্মদ এরশাদুল হক। উক্ত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এফএমপিই বিভাগ) ড. মো. নূরুল আমিন।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে এ যন্ত্রটি ছড়িয়ে দিতে বারি উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটির ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। মানসম্পন্ন প্রস্তুতকরণ নিশ্চিত করতে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানদের প্রশিক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন মুগ ডাল উৎপাদন হয়ে থাকে। এর বেশিরভাগ অংশ পটুয়াখালী এবং বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা উৎপাদন করে থাকে। বারি মুগ-৬ ওই অঞ্চলে কৃষকদের নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে যা এক ফসলী জমিকে দুই ফসলী জমিতে রূপান্তর করেছে। মুগ ডাল আমিষের একটি অন্যতম উৎস। যা গরীব কৃষকদের আমিষের চাহিদা পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। কিন্তু বরিশাল অঞ্চলে উৎপাদিত এই মুগ ডালগুলো ওই অঞ্চলের কৃষকরা খুব কমই ভক্ষণ করতে পারে। কারণ এই মুগ ডালের খোসা ছাড়িয়ে কখন উপযোগী ডাল উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি সহজলভ্য হয়নি। সাধারণত দক্ষিণাঞ্চল উৎপাদিত মুগ ডাল বড় বড় ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে বড় বড় মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করে অধিক মূল্যে বাজারে বিক্রয় করে থাকে যা কৃষকদের জন্য সহজলভ্য হয় না। কৃষকদের আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত মুগডাল কৃষকরা যাতে সহজে প্রক্রিয়াজাত করে ভক্ষণ করতে পারে এজন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ফার্ম মেশিনারী এন্ড পোস্টহারভেষ্ট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে কৃষকের ব্যবহার উপযোগী বারি মুগ ডাল ভাঙ্গানো যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই যন্ত্রের সাহায্যে অতি সহজে ঘন্টায় ৪০ থেকে ৭০ কেজি মুগডাল ভাঙানো যায়। কৃষকের কাছে সহজ প্রাপ্য চার ঘোড়ার ডিজেল ইঞ্জিন কর্তৃক চালনা করা যায়। এ যন্ত্রটি স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকরা ব্যবসায়ী হিসেবে চালনা করতে পারে। যার ফলে প্রান্তিক কৃষকরা গ্রামগঞ্জে স্থানীয় কৃষিযন্ত্র সেবা দানকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। এ যন্ত্রটিতে তিনটি চাকা রয়েছে যার মাধ্যমে সহজেই এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে, এমনকি এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই যন্ত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত মুগ ডাল ভাঙার পরিমাণ খুবই নগণ্য। এমনকি এই যন্ত্রের মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দুই ধাপে তেল মাখিয়ে ডাল ভাঙ্গালে ২০ থেকে ৩০ ভাগ আস্ত ডাল পাওয়া সম্ভব।
বারি ও সিসা-এমইএ প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মুহাম্মদ এরশাদুল হক জানান, এ যন্ত্র উদ্ভাবনের গবেষণার সাথে ঝিনাইদহ এর মাওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং বগুড়া এর হক মেটাল এই দুইটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি জড়িত ছিলেন; ফলে এই যন্ত্র নির্ভুলভাবে প্রস্তুতকরণের ধাপগুলো ইতিমধ্যে ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা রপ্ত করেছেন।