Friday 29th of March 2024
Home / আঞ্চলিক কৃষি / সিলেটে ভাসমান বেডে মিষ্টি লাউ চাষে সফলতা

সিলেটে ভাসমান বেডে মিষ্টি লাউ চাষে সফলতা

Published at জানুয়ারি ২৩, ২০২২

শহীদ আহমেদ খান (সিলেট) : সিলেট অঞ্চলে ভাসমান বেডে শীতকালিন সবজি চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। নিজেদের তৈরিকৃত ভাসমান বেডে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছেন। বিশেষ করে শীতকালিন সবজির মধ্যে মিষ্টি লাউ চাষে বেশি সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। প্রতিটি বেডে বছরে ৬ থেকে ৭ বার সবজি চাষ করেন তারা। এসব সবজির মধ্যে মিষ্টি লাউ একটু দীর্ঘমেয়াদী থাকায় ফলন বেশি পাওয়া যায়। অনেকে বেডে উৎপাদিত লাউ বিক্রি করে মুনাফাও অর্জন করেছেন। ফলে, মিষ্টি লাউ চাষে কৃষকদের মাঝে বাড়ছে আগ্রহ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কটালপুরের কৃষক নিজাম মিয়া ও বিলাল আহমদ পরিত্যক্ত ও নিচু জলাভূমিকে ব্যবহার করে ৫০টি ভাসমান বেডে অল্প খরচে সবজি চাষ করেছেন।  এসব সবজির মধ্যে লাউ, মিষ্টি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, সিম, টেমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁরস সহ বিভিন্ন প্রকার সবজি ও মসলা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে মিষ্টি লাউ।

নিজেদের চাহিদা পুরণ করে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করতে পারবেন। ভাসমান বেডের সবজি চাষ সব ধরনের বিষমুক্ত থাকায় খাবারে মানুষের পছন্দের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে উৎপাদিত মিষ্টি লাউ।

বর্ষা মৌসুমে সিলেট অঞ্চলের বহু জমি পানিতে ডুবে যায়, নষ্ট হয়ে যায় কৃষকের তৈরিকৃত বীজতলা। নিজেদের উদ্যোগে কৃষকরা কলাগাছের ভেলা এবং কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করছেন। ভাসমান এসব বেডে চাষ করছেন লাউ, মিষ্টি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, সিম, টেমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁরস সহ বিভিন্ন প্রকার সবজি।

কৃষক বিলাল আহমদ জানান, বারি সিলেট (সগবি)’র সহযোগিতায় গত দু’বছর ধরে ভাসমান বেডে সবজীর চাষ করে আসছি। এ বছর ৫০টি বেডে লালশাক, পুইশাক, লাউ, সিম, মিষ্টি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, মুলা, ঢেঁড়স সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ও মসলার চাষ করেছি। এসব সবজির মধ্যে বারি মিষ্টি লাউ এর ফলন বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, এ চাষে আমি খুব লাভবান হচ্ছি কারন বেড পদ্ধতির চাষে তেমন কোন খরচ নেই।

বেড তৈরির কৌশল কি তা জানতে চাইলে কৃষক বিলাল বলেন, প্রথমে পানির উপরে কলাগাছ অথবা বাঁশ বিছিয়ে বেড তৈরি করি। তার উপর কচুরিপানা তুলে বেড প্রস্তুত করা হয়। আর কচুরিপানা পচিয়ে তার উপরেই বিভিন্ন সবজি চাষ করে থাকি।

তিনি আরো জানান, বর্ষা বা বন্যার পানি যতই হোকনা কেনো বেডের উপরে রোপনকরা সবজি চারার কোন ক্ষতি হয়না। বেড পদ্ধতির আরেকটি গুন হচ্ছে, এতে কোন প্রকার সার এবং কীটনাশকও দিতে হয়না।

বেড কৃষকরা বলছেন, এক একটি বেডে বছরে ৭ থেকে ৮ বার সবজি চাষ করা যায়। এ ধরনের সবজি চাষে খুবই লাভবান হওয়া যায়। বর্তমানে অনেকেই বেড পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিটিউট, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (বিএআরআই) সিলেটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, সিলেটের বিভিন্ন এলাকার চাষাবাদের জমি অন্য জমির তুলনায় বেশ নিচু হওয়ায় বর্ষায় পানিতে ডুবে থাকে, তাই বেড পদ্ধতিতে কৃষিকাজে লাভের মুখ দেখবেন চাষিরা। জলাবদ্ধ ও বন্যাদুর্গত এলাকার কৃষকরা এধরনের ভাসমান বেডে সাড়া বছরই সবজি চাষ করতে পারেন। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, হবিগঞ্জের বানিয়াচং এলাকায় ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। ভাসমান বেডে উৎপাদিত সবজির মধ্যে বারি মিষ্টি লাউ এর ফলন বেশি। যা কৃষকদের জন্য আশাব্যঞ্জক। কৃষকদের পাশে থেকে সব সময় পরামর্শ সহ সকল প্রকার সহযোগিতা করে যাচ্ছে বারি।

This post has already been read 2929 times!