Tuesday 19th of March 2024
Home / বিজ্ঞান ও গবেষণা / বারি মাল্টা-১ ও বারি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ খুলনা কেন্দ্রের সাফল্য

বারি মাল্টা-১ ও বারি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ খুলনা কেন্দ্রের সাফল্য

Published at আগস্ট ৩১, ২০২১

ড. মো. হারুনর রশিদ : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) দেশের বৃহত্তম বহুবিধ ফসল গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান দানাশস্য, কন্দাল, ডাল, তৈলবীজ, সবজি, ফল, মসলা, ফুল ইত্যাদির উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন বিষয়ে গবেষণা করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি মৃত্তিকা এবং শস্য ব্যবস্থাপনা, রোগ বালাই এবং পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা, পানি এবং সেচ ব্যবস্থাপনা, কৃষি যন্ত্রপাতির উন্নয়ন, খামার  পদ্ধতির উন্নয়ন, শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং আর্থ সামাজিক সংশ্লিষ্ট উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন এবং পরিমাণ নির্ধারণ বিষয়ে গবেষণা করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ খুলনা কেন্দ্রের  সার্বিক তত্বাবধান ও পরামর্শে দুজন কৃষকের সাফল্যের কথা তুলে ধরা হলো। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায়  সাইফুল ইসলাম নামে কৃষককে  বাগান প্রতিষ্ঠায় সরেজমিন গবেষণা কেন্দ্র, বারি খুলনা সার্বিক পরামর্শ প্রদান করে । সার্বিক পরামর্শ প্রদানে করার ফলে  বাগান প্রতিষ্ঠার পর সাইফুলকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বারি-১ জাতের মাল্টা বাগান সাইফুলের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার পাশাপাশী ঐ এলাকার জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

উল্লেখ,  সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার ছনকা গ্রামের উদ্যোক্তা মো. সাইফুল ইসলাম মুলত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। আর্থিক অভাব অনটনের কারণে লেখাপড়া বেশি করতে পারেননি। সাইফুল ২০১৩ সালে মালয়েশিয়া যান কিন্তু সেখানে ভাল কাজ না পাওয়ায় ২০১৫ সালে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর ২০১৫ সালে তিনি রাঙামাটি বেড়াতে যান। সেখানে বারি মাল্টা-১ এর বাগান দেখে মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। পরে ২০১৬ সালে তিনি প্রতি বিঘা জমি বছরে ১৪,০০০ টাকা হারে ৩ বিঘা জমি ১৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে থাই-৫ পেয়ার বাগান করেন এবং পেয়ারা গাছের মাঝে বারি মাল্টা-১ এর কলম লাগান। পেয়ারা গাছ ৩ বছর পরে কেটে ফেলেন। এখন বাগানে মেট গাছ রয়েছে। ১,৩০০ টি মাল্টা গাছ রয়েছে। সাইফুল জানান, তার বাগান প্রতিষ্ঠা করতে মোট ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে যা গত বছর উঠে এসেছে এবং ৩.৫ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এবছর খরচ বাদ দিয়ে তিনি প্রায় ১০ টাকা লাভ করেন। বর্তমানে তার বাগানের আকার ১১ বিঘা। এছাড়া তিনি গত বছর থেকে কলম তৈরি শুরু করেন এবং প্রতিটি ২৫০ টা করে বিক্রি করেন। এ বছর ৫,০০০টি কলম বিক্রি করে আয় করেন ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার ভাটরা গ্রামের কৃষক উদ্যোক্তা বারি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের উদ্যোক্তা  মো. আলিম এর সাফল্য।গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের উদ্যোক্তা  মো. আলিম এর সফলতা পাওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে বাঁটরা, ধানদিয়া,ক্ষেত্রপাড়া সহ কলারোয়ার বিভিন্ন চাষীদের।কলারোয়া উপজেলার বাঁটরা গ্রামের কৃষকদের মধ্যো টমেটো চাষের আগ্রহ চরমে, অসময়ে টমেটো চাষে দাম ভালো পাওয়ায় তাদের আগ্রহ দিন কে দিন বেড়েই চলেছে। গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুন হারে বেড়েছে টমেটো চাষী। তবে অন্যান্য চাষের তুলনায় টমেটো চাষে দ্বিগুন লাভ কিন্তু ব্যয়ও কম নয়, তবুও পিচপা হচ্ছেন না কৃষকেরা ।

উল্লেখ, গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের উদ্যোক্তা মো. আলিম আর্থিক অসচ্ছতার বেশি লেখাপড়া করতে পারেনি, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরবর্তীতে তিনি কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হন। তিনি ২০১০ সালে সরেজমিন গবেষণা কেন্দ্র, বারি, খুলনার সহযোগিতায় ২০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রতি বছর গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেন এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।  আলিম বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বছর তিনি ২.৫ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ চাষ করেন। গ্রীষ্মকালীন বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ চাষে তার নেট খরচ হয় ৬.২৫ লাখ টাকা। এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের এবং স্থানীয় বাজারে গ্রীষ্মকালীন বারি টমেটো বিক্রি করে মোট ১০ লাখ টাকা। এ বছর আলিমের গ্রীষ্মকালীন বারি টমেটো বিক্রি করে  লাভ হয় ৩.৭৫ লক্ষ টাকা।

গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের ফলে তার আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে এবং জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। সাতক্ষীরা অঞ্চলে তিনি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের মডেল হিসেবে কাজ করছেন। এ বছর সাতক্ষীরা জেলায় মোট ৫৭ হেক্টর জমিতে বারি উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। সাতক্ষীচরার মতো প্রত্যেক জেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ সম্প্রসারণ করে দেশীয় পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি করা যেতে পারে।

লেখক: উপ-প্রকল্প পরিচালক, গোপালগঞ্জ জেলায় বিএআরআই এর কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন  ও দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সগবি, দৌলতপুর, খুলনা।

This post has already been read 2698 times!