Tuesday 19th of March 2024
Home / uncategorized / খননের দেড় বছরের মধ্যই নদী এখন সমতল ভূমি!

খননের দেড় বছরের মধ্যই নদী এখন সমতল ভূমি!

Published at ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : ভদ্রা ও শালতা নদীর দু’পাড়ে উঁচু করা অসমতল জমিতে জন্ম নিয়েছে সরু উঁচু উঁচু বৃক্ষ। বৃক্ষরাজীর ফাঁকে ফাঁকে দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে আধা পাকা ও টিন-ছনের ঘর-বাড়ি। মাঝখানে পানি শূন্য শুষ্ক সমতল ভূমিতে জন্মেছে সবুজ ঘাস। প্রতিদিনই ওই সবুজ ঘাস খেতে ভীড় জমাচ্ছে আশ-পাশের গরু-ছাগল। এছাড়া সুবিধাজনক স্থানে পথ বানিয়ে স্যান্ডেল পায়ে যাতায়াত করছেন লোকজন। জলাবদ্ধতা নিরসনে মাত্র দেড় বছর আগে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও শালতা নদী খনন শেষে বর্তমান চিত্র এটি। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী খননের যে আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তা ভেস্তে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ১৪ থেকে ১৫ বছর আগেও ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা-শালতা নদী ঘিরে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা চলতো। জোয়ার-ভাটা, মাছ শিকার ও নৌযান চলাচল ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক চিত্র। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ছিল নদী দু’টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু কালের বিবর্তমানে ও নানা প্রতিকুলতার মুখে ভদ্রা ও শালতা নদীতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পলিজমে নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে যায়। আর ভরাটের সাথে সাথে নদীর বুক জুড়ে শুরু হয় অবৈধ দখল। প্রভাবশালীরা যে যার মত করে ভরাট হওয়া নদীর বুক দখল করে নেয়। দখলবাজ ভুমিদস্যু চক্র নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভরাট হওয়া জমিতে গড়ে তোলে বসত বাড়ি, রাইস মিল, স মিল, বাজার, বহুতল ভবনসহ নানা স্থাপনা। ফলে ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় করুণ পরিণতির সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক বসত বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। এমন সব পরিস্থিতিতে ২০০৫ সালে নদী দু’টি খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু নানা জটিলতায় প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে লাল ফিতায় বন্দি হয়ে পড়ে। এরপর ফের উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে ওই নদী দু’টি খননের জন্য ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজল (ডিপিপি) জমা দেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি সম্ভাব্যতা যাচাই করে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার গত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেকের বৈঠকে ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়। যার বাস্তবায়ন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ৯টি প্যাকেজে টেন্ডার আহবান করা হয়। কাজগুলো পেয়ে তা বাস্তবায়ন করে একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে আমিন এ্যান্ড কোং, হাসান এ্যান্ড ব্রাদার্স, কেএসএল জেভি, রানা বিল্ডার্স, সালেহ আহমেদ ও কামরুল এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজাইন ও এস্টিমেট অনুযায়ী ভদ্রা নদী দক্ষিণ অংশে ডুমুরিয়ার দিঘলিয়া (স্থানীয় নাম দিঘেলা) থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং উত্তরাংশের তেলিগাতি হতে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার খনন করে। এছাড়া সালতা নদীটি ডুমুরিয়া বাজারের ভদ্রা নদী থেকে শুরু হয়ে ৯ কিলোমিটার খনন করে শৈলমারি নদীতে সংযুক্ত করে।

সোহাগ আহমেদ ও মোক্তার হেসেনসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, এস্টিমেট অনুযায়ী নদীর প্রস্থ ১২০ ফুট এবং গভীরতা ১২ থেকে ১৪ ফুট পর্যন্ত খননের কথা ছিল। কিন্তু সব জায়গায় এ নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। এছাড়া মাটি উত্তোলন করে দু’পাশে রেখে দেয়া হয়। বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই পাশের উঁচু করে রাখা ওই মাটি ধুয়ে ফের নদীতে এসে পড়েছে। তাছাড়া প্রকল্পের অন্যতম অঙ্গ দিঘলিয়া ও তেলিগাতি প্রান্তে ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ের দু’টি স্লুইচগেট নির্মাণের কথা থাকলেও ওই দু’টি স্লুইচ গেট নির্মাণ না করেই কাজ সমাপ্ত করা হয়। সঙ্গতকারণে মোটা অঙ্কের ওই টাকা মন্ত্রণালয়েই ফেরত গেছে। অন্যদিকে দুই প্রান্তের বাঁধ কেটে দেয়ায় জোয়ার-ভাটায় মাত্র দেড় বছরই পলিতে নদী ফের ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদী খননের ব্যায় হওয়া পুরো টাকা পানিতে গেছে। আর নদী খননের আসল যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো সেটিও পুরো ভেস্তে গেছে।

তবে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, খর্ণিয়ার তেলিগাতি ও টিয়াবুনিয়া বাঁধ কেটে দেয়াতে পানির সাথে পলি এসে নদী ভরাট করে ফেলেছে। যার কারণে ওই বাঁধ ফের বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি স্ট্যাডি করছে। স্ট্যাডিতে সমাধান বের হয়ে আসবে।

অনিয়মের ব্যাপারে বলেন, নদী খনন সব জায়গায়ই নিয়মমাফিক হয়েছে। টাস্কফোর্স-এর মাধ্যমে সব যাচাই-বাছাই করে বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

This post has already been read 2319 times!