Tuesday 16th of April 2024
Home / উদ্যোক্তা কথন / দেশীয় পাবদা চাষে ঘুরছে আলাউদ্দীনের ভাগ্যের চাকা

দেশীয় পাবদা চাষে ঘুরছে আলাউদ্দীনের ভাগ্যের চাকা

Published at সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খাজুরা গ্রামের আলাউদ্দীন জোয়ার্দ্দার দেশীয় প্রজাতির পাবদা মাছ চাষ করে অর্জন করেছেন অভাবনীয় সাফল্য। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের চিংড়ি চাষ অধ্যুষিত এলাকা ডুমুরিয়া। এখানকার অধিকাংশ চাষীই চিংড়ি চাষের সাথে জড়িত। এমন একটি জায়গায় আলাউদ্দীন দেশীয় পাবদা চাষ করে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

পাবদা চাষি আলাউদ্দিন বলেন, সঠিক চাষপদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা না জানার কারণে প্রথমবার তাকে প্রায় ৩-৩.৫ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয়। লোক দিয়েও আলাউদ্দিন দমে যাননি। পরবর্তীতে তিনি ডুমুরিয়া মৎস্য অফিসের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করেন। মৎস্য কর্মকর্তার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ গ্রহণ করে পরের বছর দ্বিগুণ উৎসাহে দেশীয় প্রজাতীর পাবদা চাষ শুরু করেন। এবার আর পাবদা চাষ তাকে নিরাশ করেনি। পাবদার চাষ তার কাছে আলাদীনের চেরাগের মতই আবির্ভূত হয়। দেশীয় প্রজাতীর সুস্বাদু পাবদা চাষে ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা।

আলাউদ্দীন জানান, দ্বিতীয় বছর আমি পাবদা বিক্রি করে প্রথমবারের লোকসান তুলে আরও প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ করি। এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা মৎস্য দপ্তর হতে তাকে ১০,০০০ টি পাবদা মাছের পোনা ও ২০০ কেজি পাবদা মাছের খাবার প্রদান করা হয়। তিনি উপজেলা মৎস্য দপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় নিজে আরও ২টি পুকুর নেন। ৩ টি পুকুরের মোট আয়তন ৩.৫০ একর যেখানে তিনি সর্বমোট ৫ লক্ষ দেশী পাবদার পোনা মজুদ করেন। ৫-৬ মাস লালন পালন করার পর তিনি একটি পুকুর থেকে এ পযর্ন্ত সাড়ে ৫ লাখ টাকার পাবদা বিক্রি করেছন। এ বছর তিনি ১৪-১৫ লক্ষ টাকার পাবদা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

তিনি জানান সব খরচ বাদে তার প্রায় ৫-৬ লক্ষ টাকা লাভ হবে। চিংড়ি চাষ অধ্যুষিত এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে পাবদা চাষ করে তিনি যেমন সফল হয়েছেন তেমনি তার এ উদ্যোগ এলাকার অন্য মৎস্য চাষীদের মাঝে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ইতিমধ্যে আলাউদ্দীনকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অনেক মৎস্য চাষী দেশীয় সুস্বাদু পাবদা চাষ করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছে।

এ বিষয়ে ডুমুরিয়া মৎস্য অফিসের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, পাবদা একটি সুস্বাদু মাছ। প্রতি ১০০ গ্রাম পাবদা মাছে আছে, আমিষ ১৯.২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ১১৪ কিলোক্যালরি, চর্বি ২.১ গ্রাম,ফসফরাস ২১০ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩১০ মি. গ্রাম, লৌহ ১.৩ গ্রাম, কোলিন ১০১৮ একক, এ ছাড়াও আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। নিয়মিত পাবদা মাছ খেলে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন হবে।তাছাড়া এই মাছ আমাদের শারীরিক দুর্বলতা দূর করে, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। পাবদা মাছ আমাদের দৈহিক গঠনে সাহায্য করে এবং আমিষের চাহিদা পূরণ করে। এই মাছে রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে ফসফরাস। ক্যালসিয়ামের সাথে ফসফরাস মিলিত হয়ে হাঁড় ও দাঁতের তন্তু তৈরী করে। বাজারে পাবদা মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পাবদা মাছ সম্প্রসারণে মৎস্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় ডুমুরিয়া মৎস্য অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাইদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে মৎস্য অধিদপ্তর বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ টি দেশীয় মাছের প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পাবদা চাষির উৎপাদন খুব ভালো হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক নারায়ন চন্দ্র মন্ডল বলেন, ডুমুরিয়া উপজেলার দেশীয় প্রজাতীর পাবদা চাষির প্রদর্শনী প্লটটি আমি পরিদর্শন করে মাছের নমুনায়ন করেছি। তিনি একজন ভালো চাষি। তার মাধ্যমে ডুমুরিয়ার আরো অনেক মৎস্য চাষি পাবদা চাষে আগ্রহী হবে এবং বাড়বে দেশীয় প্রজাতীর পাবদা মাছের উৎপাদন।

This post has already been read 3253 times!