Tuesday 19th of March 2024
Home / বিজ্ঞান ও গবেষণা / প্রাণিজাত খাদ্যের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে সাভারে বিশ্বমানের গবেষণাগার উদ্বোধন

প্রাণিজাত খাদ্যের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে সাভারে বিশ্বমানের গবেষণাগার উদ্বোধন

Published at আগস্ট ২৭, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাভারে আন্তর্জাতিক মানের প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার উদ্বোধন করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সাভারে গবেষণাগারের কনফারেন্স হলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গবেষণাগার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এমপি এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি ও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. আখতার হোসেন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার এবং গবেষণাগারের প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করেন গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মোস্তফা কামাল। অন্যান্যদের মধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার সহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, “মাননিয়ন্ত্রণ গবেষণাগারের মাধ্যমে বিশ্ব পরিমণ্ডলের একটি নতুন অধ্যায়ে আমরা প্রবেশ করলাম। প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ এবং প্রাণিজাত খাদ্য মানসম্মত হচ্ছে কিনা এটা নির্ণয় করার জন্য মানসম্মত ল্যাবরেটরী বা কোন ব্যবস্থা দেশে ছিল না। এই কারণে আমরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতাম। ইতোপূর্বে প্রাণিসম্পদ খাত থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছি। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গবাদিপশুর খাদ্য নিয়ে আমরা প্রতিকূল অবস্থায় পড়েছি।”

মন্ত্রী আরো বলেন, “প্রাণিসম্পদ রপ্তানি করে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বড় বাধা, পণ্যের মান পরীক্ষা না করে বিদেশে সেটি প্রেরণ করা। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এই ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি চান বাংলাদেশের সব কিছু যেন আন্তর্জাতিক মানের হয়। এ সময় আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন। প্রাণিজাত খাদ্যের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে বিশ্বমানের গবেষণাগার এটি। গবেষণাগারে মানসম্মত যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে।”

তিনি আরো যোগ করেন, “জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হওয়ার জন্য এ প্রতিষ্ঠান। প্রাণিজাত খাদ্যের মান যদি যথাযথ না হয়, সেই খাদ্যের মান যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে খামারিসহ সংশ্লিষ্ট সকলে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, এর সুবিধাভোগী ও ব্যবহারকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মানসম্মত দুধ, ডিম ও মাংস না হলে সেটা আমাদের কোন কাজে আসবে না। আমরা শুধু সংখ্যা বাড়াতে চাইনা। সংখ্যাটা হতে হবে মানসম্মত যেটা আমাদের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, “আমাদের উৎপাদিত মাংস, দুধ ও ডিম মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা আমরা আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায় নির্ধারণ করতে পারব এই গবেষণাগারে। আমরা যা কিছু রপ্তানি করবো তা মানসম্মত হতে হবে, বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে এবং স্বাস্থ্যের উপযোগী হতে হবে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এই গবেষণাগার থেকে প্রাণিসম্পদ খাতের খামারিদের উৎপাদিত পণ্যের  মান নিয়ন্ত্রণ করলে মানসম্মত প্রাণিজ পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মুক্ত হবে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য এই গবেষণাগার একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার হবে বলে আমি মনে করি। বুদ্ধিদীপ্ত জাতি গঠনের জন্য এই গবেষণাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

উল্লেখ্য, প্রাণিসম্পদ খাতে দেশে উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানিকৃত প্রাণিজাত পণ্য ও উৎপাদন উপকরণ এবং রপ্তানির লক্ষ্যে প্রাণিজাত পণ্যের মান যাচাইয়ের জন্য সরকার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রায় ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক মানের উল্লিখিত গবেষণার স্থাপন করেছে। এখানে রয়েছে ফিড কোয়ালিটি কন্ট্রোল শাখা, রেসিডিউ ও বায়োলজিকস্ শাখা, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি শাখা এবং মাইক্রোবিয়াল ফুড সেফটি শাখা। এ গবেষণাগারে উদ্দেশ্য প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ তথা প্রাণিসম্পদের খাদ্য, ফিড এডিটিভস, প্রজনন উপকরণ প্রভৃতি ও উৎপাদিত পণ্য তথা দুধ, ডিম ও মাংসের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদের উৎপাদন ত্বরান্বিত করা, সর্বোপরি খাদ্য নিরাপত্তায় কার্যকরী পদক্ষেপ রাখা। একইসাথে নিরাপদ গুণগতমান সম্পন্ন প্রাণিজাত দ্রব্যাদি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা। ইতোমধ্যে এ গবেষণারে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

This post has already been read 2923 times!