Monday , June 30 2025

বায়োফ্লক সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা

সালাহ উদ্দিন সরকার তপন : বর্তমানে বর্জ্য থেকেই খাদ্য তৈরি করে মাছকে খাওয়ানোর অভিনব প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়েছে যার নাম “বায়োফ্লক” নতুন এই পদ্ধতি অনেক বেশি সম্ভাবনাময় ও লাভজনক। তুলনামূলক অল্প বিনিয়োগে বিজ্ঞানসম্মত এই পদ্ধতি আকৃষ্ট করতে পারে নতুন উদ্যোক্তাদের।

‘বায়োফ্লোক প্রযুক্তি হল মাছ চাষের একটি টেকসই এবং পরিবেশগতভাবে ইকো ফ্রেন্ডলি চাষ পদ্ধতি, যা মাছ চাষের জন্য পানির গুনগতমান ঠিক রেখে উপকারি ব্যাক্টেরিয়ার বংশ বৃদ্ধি করে এবং ক্ষতিকারক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করে, জলীয় খামার ব্যবস্থার জন্য মাইক্রোবায়াল প্রোটিন খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করে। বায়োফ্লক এক ধরণের প্রোটিন সমৃদ্ধ জৈব পদার্থ এবং অণুজীব, ফ্লক পানিতে ভাসমান বা নিমজ্জিত অবস্থায় থাকতে পারে। ফ্লকে প্রচুর প্রোটিন ও লিপিড রয়েছে। যা মাছ বা চিংড়ির গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যের উৎস, যেমন- ডায়াটম, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, অ্যালজি, ফেকাল পিলেট, জীবদেহের ধ্বংসাবশেষ এবং অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণী ইত্যাদির ম্যাক্রো-এগ্রিগেট। এক কথায় বলতে গেলে বায়োফ্লক হলো উপকারি ব্যাকটেরিয়া, অ্যালজি, প্ল্যাঙ্কটন ও শৈবালের সমম্বয়ে তৈরি হওয়া ফ্লক, ব্যাক্টেরিয়ার কলোনি পানিতে ভাসমান বা নিমজ্জিত অবস্থায় থাকতে পারে যা পানিতে দ্রবীভুত ক্ষতিকর এমোনিয়া ও অন্যান্য গ্যাস মুক্ত করে উপকারি ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে।

তাই বলতে পারি বায়োফ্লোক প্রযুক্তি মূলত বর্জ্য পুষ্টির পুর্নব্যবহারযোগ্য নীতি, বিশেষ করে- নাইট্রোজেন, মাইক্রোবায়াল জৈব বস্তুপুঞ্জের মধ্যে খাবারের খরচ কমাতে এবং মাছের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ‘বায়োফ্লক’ প্রযুক্তি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করতে পারে।

বহুমুখি কৃষি কৌশল ও প্রযুক্তি গবেষণার অংশ হিসেবে শুরু হয় রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম বা আরএস (RAS) পদ্ধতির মাছ চাষ। কিন্তু বর্তমানে বর্জ্য থেকেই খাদ্য তৈরি করে মাছকে খাওয়ানোর অভিনব প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়েছে যার নাম “বায়োফ্লক” নতুন এই পদ্ধতি অনেক বেশি সম্ভাবনাময় ও লাভজনক। তুলনামূলক অল্প বিনিয়োগে বিজ্ঞানসম্মত এই পদ্ধতি আকৃষ্ট করতে পারে নতুন উদ্যোক্তাদের।

বায়োফ্লক চাষ পদ্ধতিতে ফ্লক ও প্রোবায়োটিকের কারণে খাদ্য খরচ কম লাগে। এ পদ্ধতিতে এফসিআর ২০-৩০% এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে ৪০% পর্যন্ত উন্নত হয় (বিশেষ করে তেলাপিয়া মাছ)। অর্থাৎ পুকুর বা ট্যাংক কালচার অপেক্ষা এতে ২০-৪০ ভাগ  খাদ্য কম লাগে । পক্ষান্তরে বায়োফ্লক পদ্ধতিরে নিয়মিত প্রোবায়োটিক ও বিভিন্ন মিডিয়া ব্যবহার করা লাগে, কিন্তু এই খরচ নিতান্তই সামান্য খাদ্য খরচ বেঁচে যাওয়ার তুলনায়।

অন্যদিকে RAS পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিল আসে। কারণ, এতে বেশ কয়েকটি ফিল্টার ব্যবহার করা হয়। ট্যাংক কালচার ও বায়োফ্লক চাষ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ বিল প্রায় সমান।

“বায়োফ্লক” পদ্ধতি অবশ্যই একটি চমৎকার টেকনোলজি, আপাত দৃষ্টিতে ট্যাংকে মাছ চাষ, RAS পদ্ধতিতে মাছ চাষ ও বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রায় কাছাকাছি মনে হলেও অবশ্যই ভিন্নতা আছে।

লেখক: ম্যানেজিং পার্টনার, সরকার এগ্রো ফিসারিজ ও বারানি বায়োটেক ফিস কালচার।

This post has already been read 7622 times!

Check Also

বাওর জেলেদের সমস্যা সমাধানে প্রাথমিক পদক্ষেপ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সীমিত সময়ের জন্য কাজ …