Friday 29th of March 2024
Home / পোলট্রি / ব্রয়লার মাংসে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এসেছে চুয়াডাঙ্গায়

ব্রয়লার মাংসে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এসেছে চুয়াডাঙ্গায়

Published at নভেম্বর ২৭, ২০১৯

• চুয়াডাঙ্গার মানুষ খায় ৩ কেজি ওজনের ব্রয়লার

• চোর আসে না বলে দরজা খোলা রাখলে সর্বনাশ হতে পারে : প্রসঙ্গ জীবনিরাপত্তা

• কুষ্টিয়া মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিপিআইসিসির সহযোগিতায় পোল্ট্রি খামারিদের সমিতি গঠন

৩৮ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত মুরগি পালন করলে খরচ বাড়ে এমন খোড়া যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে চুয়াডাঙ্গার খামারিরা বললেন- এ জেলার মানুষ এক অথবা দেড় কেজি’র ব্রয়লার মুরগি খায় না। এখানে চলে তিন থেকে সাড়ে ৩ কেজি ওজনের মুরগি। কম বয়সী ব্রয়লারে স্বাদ পাওয়া যায় না বলে বেশ আগে থেকেই দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন এসেছে ভোক্তা সাধারনের, সেই সাথে খামারিদেরও। আর সে কারনেই ব্রয়লার মুরগির মাংস নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের মাঝে অভিযোগ থাকলেও চুয়াডাঙ্গায় তা অনুপস্থিত। গত ২৪ নভেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) আয়োজিত নিরাপদ পোল্ট্রি পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এ কথাটিই উঠে এসেছে। পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এবং ব্রয়লার মুরগির হারানো সুনাম ফিরিয়ে আনতে হলে সারাদেশের খামারিদেরও চুয়াডাঙ্গার পথ অনুসরণ করতে হবে।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, না বুঝে অপ্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে উৎপাদন খরচ বাড়বে। তাই ওষুধ ব্যবহারের আগে ভ্যাটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খামারিদের উদ্দেশ্যে বলেন- নিবন্ধন করুন, সরকারের অংশ হোন। তিনি বলেন- সময় পাল্টেছে। আগে মুরগি খামারিদের মানুষ অন্য চোখে দেখতো, ভেট ডাক্তারদেরও পশু ডাক্তার নামে ডাকা হতো কিন্তু এখন সমাজে খামারি ও ভেটেরিনারি ডাক্তারদের সম্মান বেড়েছে।

এদিকে ২৫ নভেম্বর মেহেরপুরে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় জেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা স্বপন কুমার খাঁ বলেছেন- আমরা প্রতিদিনই কিছু না কিছু খাচ্ছি কিন্তু যা খাচ্ছি তা সুখাদ্য কীনা সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তাঁর মতে ৭০ ভাগ রোগবালাই এর কারণই হচ্ছে অনিরাপদ খাদ্য। তাই নিরাপদ খাদ্যের উৎপাদন নিশ্চিত করতে পোল্ট্রি খামারিদের আহ্বান জানান তিনি। বিপিআইসিসি’র সেক্রেটারি দেবাশিস নাগ বলেন- চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এদেশের পোল্ট্রি খামারিরা ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন নিশ্চিত করেছেন। আগামীতে পরিমানের পাশাপাশি গুণগত মান বৃদ্ধির দিকেও নজর দিতে হবে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন- রাতারাতি পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় একথা যেমন সত্য, তেমনি একথাও মনে রাখতে হবে যে নিরাপদ খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন- খামারিদেরকে সচেতন হতে হবে, সেই সাথে তাঁদের জন্য অধিকতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। মেহেরপুরের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন খামারকে বহিরাগত এবং ক্ষতিকারক প্রাণি ও কীট পতঙ্গ থেকে দূরে রাখতে হবে।

কুষ্টিয়ায় প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় ২৬ নভেম্বর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের মিলনায়তনে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ সিদ্দীকুর রহমান, জীবনিরাপত্তা বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহেদুল ইসলাম, সরকারি হাঁস-মুরগির খামারের কর্মকর্তা কল্পনা রাণী রায় ও ব্যবস্থাপক মোছা: শাহীনা বেগম। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায় জুলাই-অক্টোবর মাসে এ জেলায় ডিম উৎপাদিত হয়েছে ৬১২.৬৩৮ কোটি, মাংস ৫৪৪৮২.৫৩৩ মে.টন, মোট খামারের সংখ্যা ৪০০টি, হ্যাচারি ৫টি, ব্রিডার খামার ৭টি, এবং ফিড মিল ২টি।

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত খামারি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. মাযহারুল আলম আকন্দ, বিপিআইসিসি’র যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা মো. সাজ্জাদ হোসেন এবং অফিস এক্সিকিউটিভ আবু বকর। মোট প্রায় ২০০ খামারি এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালা শেষে পোল্ট্রি খামারিদের আগ্রহে এবং জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও বিপিআইসিসি’র সহযোগিতায় উল্লিখিত তিন জেলায় পোল্ট্রি খামারিদের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কুষ্টিয়ায় মোল্লা জাফরকে আহ্বায়ক ও মো. গোলাম মোস্তফাকে সদস্য সচিব নির্বাচিত করে ১১ সদসের একটি আহ্বায়ক কমিটি; মেহেরপুরে আবু বকর কে সভাপতি, ফজলুর রহমানকে সহ-সভাপতি, আবুল বাশারকে সাধারন সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করে ১৭ সদস্যের কার্য্যনির্বাহী কমিটি এবং চুয়াডাঙ্গায় মো. পিন্টু জোয়ার্দারকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের একটি আহŸায়ক কমিটি গঠিত হয়। খামারিরা বলেন- সামগ্রিকভাবে পোল্ট্রিখাত এবং বিশেষ করে প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থ সংরক্ষণে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিপিআইসিসি’র সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে জেলাভিত্তিক পোল্ট্রি খামারিদের নবগঠিত এ সংগঠনগুলো।

This post has already been read 4019 times!