Sunday 28th of April 2024
Home / খাদ্য-পুষ্টি-স্বাস্থ্য / খাদ্যে ভেজাল মাদকের চেয়েও ভয়াবহ

খাদ্যে ভেজাল মাদকের চেয়েও ভয়াবহ

Published at মার্চ ২৫, ২০১৯

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: খাদে ভেজাল মাদকের চেয়েও ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। মাদকের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হলেও খাদ্যে ভেজালের শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদন্ড ও অনধিক ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে শুণ্য সহনশীলতা প্রদর্শনের নির্দেশ দিলেও আইনগত ব্যবস্থা না থাকলে এ সমস্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালন, ভোক্তা অধিদপ্তরের বাজার অভিযানের ফলে খাদ্যে ভেজাল থেমে নেই। যে হোটেল-রেস্তোরাকে জরিমানা করা হচ্ছে, পরের দিন ভোক্তারাই ঐ হোটেল থেকে খাদ্য কেনায় লাইন দিয়ে বসে থাকে। তার অর্থ ভেজাল খাদ্যের চাহিদা থাকায় ভেজাল খাদ্যের ব্যবসায়ীরা এখনও ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে। যদি ভোক্তা হিসাবে যে হোটেল, রেস্তোরা ও দোকানকে জরিমানা করা হচ্ছে, তাকে যদি বয়কট করা হয় তাহলে খাদ্যে ভেজাল, ক্যামিকেল মিশ্রণসহ নানা অপরাধ অতি সহজেই বন্ধ করা সম্ভব হবে। অধিকাংশ ভোক্তারা অসচেতন, অসংগঠিত, আইন ও অধিকার সম্পর্কে জানে না। ফলে প্রতারিত হওয়া, ঠকা, হয়রানির সম্মুখীন হওয়া নিত্য নৈমত্তিক বিষয়।

তাই এ জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ব্যবসায়ীদের সচেতন করার পাশাপাশি ভোক্তাদেরকেও আইন ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন। ইউকেএইড, বৃটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় প্রকাশ প্রকল্পের কারিগরী সহযোগিতায় পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্প, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম আয়োজনে সোমবার (২৫ মার্চ) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ড কার্যালয়ে নিরাপদ খাদ্য আইন, ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ও মৎস্য ও প্রাণী খাদ্য আইন নিয়ে মাল্টি-স্টেকহোল্ডারস কর্মশালায় বিভিন্ন বক্তাগণ উপরোক্ত অভিমত জানান।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবির, বিশেষ অতিথি ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কর্নফুলী কমপ্লেক্স এর সভাপতি এয়াকুব চৌধুরী, পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটির আমির হোসেন, আরকান হাউজিং সোসাইটির এস এম ওয়াজেদ, দক্ষিণ শুলকবহর মহল্লা কমিটির আকতারুল ইসলাম, সালেহ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এর সালাহউদ্দীন সালেহ, ক্যাব পাঁচলাইশ কমিটির যুগ্ন সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, নারী নেত্রী মেহেরুন্নীসা, নারী উদ্যোক্তা নুরুন্নাহার ফুলু, পাঁচলাইশ কমিউিনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদ সর্দার, ক্যাব মাঠ সমন্বয়কারী জগদিশ চন্দ্র রয় প্রমুখ। ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মশালায় মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ খাদ্য আইন নিয়ে মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা করেন, পাঁচলাইশ থানা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিয়া খাতুন ও ভোক্তা অধিকার আইন ’০৯ নিয়ে মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবির বলেন, মাদক যে রকম যার কাছে পাওয়া যায়, তাকেই শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে, খাদ্যে ভেজালের বিষয়ে একই ভাবে লাইসেন্স বিহীন, মানহীন পণ্য বিক্রয়কারীর বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেবার বিধান বয়েছে। একই সাথে একই অপরাধ বারবার করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান থাকলেও অনেক সময় প্রশাসন মানবিক বিষয়গুলি বিবেচনা করে থাকেন। কারণ যারা ব্যবসা করেন তারা সবাই কিন্তু খারাপ নয়, মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা লাভের প্রবণতার কারণে পুরো ব্যবসায়ীরা দুর্নামের অংর্শীদার হন। আর মানহীন, লাইসেন্স বিহীন ও অবৈধ খাদ্য-পণ্যের চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে। ভেজাল খাদ্যের সরবরাহের যোগান লাগাম টেনে ধরতে ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার পাশাপশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্যাব, স্থানীয় রাজনৈতিক, নারী নেত্রী, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা ও সামাজিক পরিবর্তনের কর্মীদেরকে স্বউদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলেই খাদ্যে ভেজালের মতো সামাজিক ব্যাধিগুলি নির্মূল সম্ভব হবে।

সভায় বক্তারা আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হলেও খাদ্যে ভেজালের সর্বোচ্চ শাস্তি এখনও মৃত্যদন্ড নয়। সে কারণে খাদ্যে ভেজালকারীরা বারবার ভ্রাম্যমান আদালতের দন্ডে দন্ডিত হলেও অপরাধ থামছে না। তাই বর্তমান ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইনে সংশোধন করা প্রয়োজন। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। বক্তারা আরো বলেন, যিনি ফল ব্যবসায়ী মনে করছেন তার বাড়ীতে ফরমালিন বা ক্যামিকেল যুক্ত ফল খাওয়াবেন না, সে কারণে কেমিকেল দেয়া ফলগুলি তিনি বাসায় নেন না, কিন্তু তিনি যাবার সময় মাংস, সবজি ও অন্যান্য খাবার যা নিয়ে যাচ্ছেন, তা কিন্তু কেমিকেল মুক্ত নয়।

ফলে নিজে সতর্ক হলেও মানহীন-খাদ্যে ভেজালের গন্ডি থেকে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর ভোক্তা হিসাবে আমরা নিজেরা কিছুই না করে সব সময় অন্যের উপর দোষ চাপাই আর অসহায়ত্বের কথা বলি। তাই এখন এই বৃত্ত ভাঙ্গতে হবে, খাদ্য ভেজাল, নকল রোধে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে। ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়ালে ভেজাল খাবারের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। হোটেল-রেস্তোরা, প্যাকেট জাতীয় যে কোনো খাবার হোক না কেনো, কেনার আগেই খোঁজ নিয়ে কিনতে হবে এবং এ ধরনের কোনো ভেজালের খবর পেলেই প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য সক্রিয় হতে হবে। একাজে ক্যাব ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জনগণকে আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিতে পারেন। কর্মশালায় সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, বাজার সমিতি, হোটেল, ফার্মেসী ব্যবসায়ী, আবাসিক এলাকা সমিতি, ক্ষুদ্র খামারী, নারী নেত্রী, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, পোল্ট্রি ফিড মিল, লাইভ বার্ড বিক্রেতা, সাংবাদিক ও ক্যাব প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

This post has already been read 1773 times!