Thursday 28th of March 2024
Home / ফসল / ভুট্টা চাষে ফলন বৃদ্ধির কৌশল

ভুট্টা চাষে ফলন বৃদ্ধির কৌশল

Published at নভেম্বর ৫, ২০১৮

কৃষিবিদ মো. আকতারুল ইসলাম ­ও কৃষিবিদ মো. আব্দুর রউফ: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভুট্টা একটি সম্ভাবনাময় ফসল। ভুট্টা চাষ তুলনামূলকভাবে সহজ, ঝুকি কম ও লাভজনক হওয়ায় দিন দিন ভুট্টা চাষের প্রসার বেড়েই চলেছে। অন্যান্য দানা শস্যের চেয়ে ভুট্টা বিভিন্ন আবহাওয়াতে সহজে খাপ খাওয়াতে পারে ও অধিক খরা সহিষ্ণু এবং সারা বছর চাষ করা যায় । ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমাণও বেশি ।এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে । বেকারী দ্রব্য, আটা ও পোল্ট্রি ফিড হিসেবে এর চাহিদা অত্যধিক । এছাড়াও এ ফসল এবং এর বাই-প্রোডাক্ট দিয়ে একাধারে গো-খাদ্য, জ্বালানি, ও শিল্পের কাঁচামাল ইত্যাদি উৎপাদন করা যায়। ভুট্টা চাষে তুলনামূলকভাবে রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয় এবং আন্তঃফসল হিসেবে অন্যন্য ফসলের সাথে চাষ করা যায় এজন্য কৃষকদের নিকট ভুট্টা চাষের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাটির ধরন : দো-আঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী তবে অন্যান্য জমিতেও ভুট্টা চাষ করা যায়| মাঝারি উঁচু জমি যেখানে পানি জমেনা বা পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন জমিতে ভুট্টা চাষ করতে হবে|

বীজ বপনের সময়: সারা বছর চাষ করা যায় তবে রবি মৌসুমে ভুট্টা চাষে বেশি ফলন পাওয়া যায়। রবি মৌসুমে ভুট্টা চাষের জন্য বীজ বপনের উপযুক্ত সময় নভেম্বরের শুরু হতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। খরিপ-১ মৌসুমে বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি হতে মার্চের শেষ পর্যন্ত।

জাত নির্বাচন : ভুট্টা বীজ বপনের জন্য উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহ নির্বাচন করতে হবে। যেমন বারি হাইব্রিড ভুট্টার জাতসমূহ, এছাড়াও অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহ নির্বাচন করা যেতে পারে ।

বপন পদ্ধতি : সারিতে বীজ বপন করলে ব্যবস্থাপনার (আগাছা দমন, ফল সংগ্রহ) সুবিধা হয় এবং এতে ফলন বেশি হয় । মাটির ধরন অনুযায়ী জমি সঠিকভাবে চাষ (৩-৪ বার) ও মই দিয়ে নিতে হবে। বীজ বপনের সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি বা ৬০ সেমি. এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ৮-১০ ইঞ্চি বা ২০-২৫ সেমি. রাখা ভালো ।মাটির জো -এর উপর ভিত্তি করে যথাযথ গভীরতায় বীজ বপন করতে হবে। সিডার এবং বেড প্লাণ্টার মেশিনের মাধ্যমেও সারিতে অতি অল্প সময়ে বীজ বপন করা যেতে পারে।

বীজের হার : হেক্টরপ্রতি ২০-২৫ কেজি হারে বীজ বপন করা যেতে পারে। তবে বীজ বপনের পূর্বে এর অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করে নেয়ে ভালো ।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি : মাটির উর্বরতা ভেদে সারের পরিমাণের তারতম্য হতে পারে। তবে মধ্যম ধরনের উর্বর মাটির জন্য সারের মাত্রা নিম্নরূপঃ

সারের নাম

সারের মাত্রা (কেজি)

বিঘাপ্রতি  হেক্টরপ্রতি
ইউরিয়া (২বার উপরি প্রয়োগ সহ) ৭৫      ৫৫৫
টিএসপি ৩৭.৫ ২৮০
এমওপি ২৭ ২০০
জীপসাম ৩০ ২১২
বোরিক এসিড (বোরন সার) ৮০০ গ্রাম
জিঙ্ক সালফেট ১৫
খরিপ মৌসুমের জন্য সকল সারের মাত্রা ৩০ ভাগ পর্যন্ত কমানো যেতে পারে

উৎসঃ Maize crop manager & Nutrient Expert. (webapps.irri.org/bd/mcm)

ইউরিয়া সারের তিন ভাগের ১ ভাগ এবং বাকি সমস্ত সার শেষ চাষে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের এক তৃতীয়াংশ ১ম উপরি প্রয়োগ করতে হবে ৬ পাতার সময় এবং বাকি এক তৃতীয়াংশ ২য় উপরি প্রয়োগ করতে হবে ১০ পাতার সময়। জমিতে রস থাকা অবস্থায় সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে। উপরি সারের প্রয়োগ করার পর গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে

সেচ ব্যবস্থাপনা : ভুট্টা চাষে ৩-৫ বার পর্যন্ত জমিতে সেচ প্রদান করা যেতে পারে । মাটি ও ফসলের অবস্থা বিবেচনা করে সেচের সময় এগিয়ে বা পিছিয়ে নেয়া যায়।

সেচ পাতা সংখ্যা/ গাছের অবস্থা   রবি মৌসুমে চারার বয়স

(চারা গজানোর পর)

খরিপ মৌসুমে চারার বয়স

(চারা গজানোর পর)

১ম সেচ ৪-৬ ৩০-৪৫ দিন ২০-২৫ দিন
২য় সেচ ৮-১০ ৫৫-৬৫ দিন ৩৫-৪৫ দিন
৩য় সেচ ফুল আসার সময় ৮০-১০০ দিন ৫৫-৬৫ দিন
৪র্থ সেচ দানা বাধার সময় ৯৫-১১৫ দিন ৭০-৭৫ দিন

ভুট্টা সংগ্রহ: ভুট্টার মোচার খোসা খড়ের রঙ ধারন করলে এবং পাতার রঙ কিছুটা হলদে হলে মোচা সংগ্রহ করতে হবে । এছাড়াও মোচা থেকে কয়েকটা বীজ ছড়িয়ে নিলে বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যায় ।

ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। পতিত জমি সমূহ বিশেষত চরাঞ্চলগুলিতে ভুট্টা ব্যাপক আকারে চাষ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিকভাবে চাষাবাদের মাধ্যমে জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে কৃষকদের আর্থ সামাজিক অবস্থা উন্নয়ন ঘটবে।

লেখকদ্বয় :  বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ।

This post has already been read 5875 times!